ভাষণে আসন বাড়াতে গিয়ে আসলে বাড়ছে অপশাসন

ইন্টেলিজেন্স ফেলিওর। আর সেটা চাপা দিতেই জাতীয়তাবাদের জিগির তুলে পুরো বিষয়টাকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। এটাই পহেলগাঁও কাণ্ডের প্রকৃত চিত্র। মোদি-শাহদের মুখোশ ছিঁড়লেন রাজ্যের মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী

Must read

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় ২৮ জন মানুষের মৃত্যু সারা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। যে ঘাতকরা এই নাশকতা ঘটাল, প্রাণ কেড়ে নিল এতগুলো মানুষের, তাদের পরিচয় কোনও ধর্ম দ্বারা সীমাবদ্ধ করা যায় না। তারা মানববিরোধী, সন্ত্রাসবাদী। বিভিন্ন দেশের আদালতে বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে সর্বোচ্চ শাস্তি যা কিছু আছে, সেটাই এদের জন্য প্রাপ্য হতে পারে। যাঁরা জীবন হারালেন, যাঁরা তাঁদের স্বজন-পরিজন, তাঁদের জন্য এই সভ্যসমাজ সমবেদনা জানানোর ভাষা খুঁজে পাবে কী করে! যে রাষ্ট্রব্যবস্থা এই ভ্রমণপিপাসু মানুষগুলির নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হল, যে রাষ্ট্রব্যবস্থার নির্বুদ্ধিতার জন্য এই মৃত্যু উপত্যকায় প্রবেশের অনুমতি পেয়েছিল এই মানুষগুলি, তারা লজ্জায় আজ মুখ লুকাবে কোথায়!
সন্ত্রাসবাদীদের কোনও ধর্ম নেই, তাদের পরিচয় তারা সন্ত্রাসবাদী। প্রতিটি ধর্মেই মানবতার কথা বলা আছে। কোন ধর্মপ্রাণ মানুষ, তিনি যে ধর্মেরই হন না কেন তিনি জানেন এবং মানেন মানবজাতির মঙ্গলের জন্যই ধর্ম। সেখানে সৃষ্টিকে মহিমান্বিত করা হয়েছে, মানবসভ্যতাকে এগিয়ে দেওয়ার পথনির্দেশ করা হয়েছে, মৃত্যুকে নয়। আজ তাই সব ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষ একজোট হয়ে এই নাশকতার তীব্র নিন্দা করছে সারা দেশ জুড়ে।
কিন্তু এই নাশকতা, এই মৃত্যু আমাদের কতগুলি প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে। এই ভারত উপমহাদেশের দায়িত্ব নিয়ে আমরা আসলে করছিটা কী?
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রশ্নে কিংবা সন্ত্রাসবাদ দমনের প্রশ্নে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির পাশে, দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল সবসময়ই সমর্থন জানিয়ে এসেছে। দেশের মধ্যে রাজনৈতিক লড়াই থাকলেও উপরোক্ত ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকেছে দেশের মানুষ।
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর যেদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নোটের বিমুদ্রাকরণ ঘটিয়েছিলেন, বাতিল করেছিলেন ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার নোট একটি ঘোষণার মাধ্যমে, সেদিন তিনি বলেছিলেন এই বিমুদ্রাকরণ সন্ত্রাসবাদ দমনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। আশান্বিত হয়েছিল দেশের মানুষ।
যেদিন জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য বিশেষ আইন ৩৭০ ধারা বিলোপ করেছিলেন, সেদিনও তিনি সন্ত্রাসবাদ দমনের উদ্দেশ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন তাঁর এই পদক্ষেপকে। পরবর্তী কালে এক জনসভায় মোদিজি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেছিলেন, “আপ মুঝে বাতাইয়ে, যব সে জম্মু-কাশ্মীরসে ৩৭০ হাটা, আপ মুঝে বাতাইয়ে, উহা আতঙ্কবাদকে কোমর টুটি কি নেহি টুটি?” এই বক্তব্যে নিশ্চয়ই মোদিজি উপস্থিত জনতার করতালিতে আলোড়িত হয়েছিলেন সেদিন। কিন্তু আজ দেখা গেল সন্ত্রাসবাদীদের কোমর তো ভাঙেইনি বরঞ্চ শক্ত কোমরের জোর নিয়ে রক্তাক্ত করছে তারা আমার ভারতভূমিকে। তাই আপনার সমস্ত ভাষণ ফাঁকা আওয়াজে পরিণত হল কিনা প্রশ্ন থেকে যায়।
প্রশ্ন থেকে যায়, আপনার রাজত্ব কালে কীভাবে একের পর এক সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দেশের বিভিন্ন প্রান্তকে বিধ্বস্ত করেছে! সংসদ ভবনে জঙ্গিহানা থেকে শুরু করে পুলওয়ামার নাশকতা আর সেনানীর মৃত্যু কীভাবে ঘটে চলে, প্রশ্ন থেকে যায়!
প্রশ্ন থাকে মোদিজি, আপনার আমলে দেশের সেনাবাহিনীতে ১,৮০,০০০ সেনা কমে যায় কেন? কর্মবীর প্রকল্পে, কন্ট্রাকচুয়াল সেনা নিয়োগের মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ কি সেনাবাহিনীর মনোবলকে দুর্বল করেনি? যার কর্মে স্থায়িত্ব নেই সে দেশের জন্য আত্মবলিদানে প্রস্তুত থাকবে কেমন করে, প্রশ্ন থেকে যায় মোদিজি।
যে NIA ( National investigation Agency)-কে সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করার কাজে ব্যবহার করার কথা, তাকে যখন রাজনৈতিক কারণে সন্দেশখালিতে গ্রামীণ গাছবোমা উদ্ধারের কাজে আপনি অপব্যবহার করেন, তখন তার মরালিটি নষ্ট হয় কিনা, প্রশ্ন থেকে যায়।
প্রশ্ন থাকে, পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও দুটি স্থানেই এই ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ঘটনার দিন নিরাপত্তার জন্য কোনও সেনাবাহিনী মোতায়ন ছিল না কেন? কেন কোনও আগাম খবর দেশের ইন্টেলিজেন্ট ব্রাঞ্চের কাছে ছিলনা। যে কাশ্মীর নিয়ে দ্বন্দ্ব চলেছে ৭৫ বছর প্রতিবেশী দেশের সাথে, সেখানে এত ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ওই ঘটনার দিনগুলিতে! প্রশ্ন থাকছেই।
মোদিজি আপনার ভাষণ শুনে আমরা আহ্লাদিত হই, কিন্তু ভাষণে আসন বাড়তে পারে, কিন্তু শুধু ভাষণে অপশাসন গড়ে উঠছে কিনা, প্রশ্ন থাকবেই।

আরও পড়ুন-মাধ্যমিকের ফলাফল ২ মে

Latest article