প্রতিবেদন : পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকা খোলার অনুমতি দিল কে? সাধারণত জুন মাসে এই তৃণভূমি পর্যটক এবং অমনাথ তীর্থযাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু এবারে ২০ এপ্রিলের আগেই কীভাবে খুলে দেওয়া হল পর্যটকদের জন্য? এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে মুখেমুখে। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা, এই তৃণভূমি পর্যটকদের জন্য আগাম উন্মুক্ত করার কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে দিল্লির সর্বদলীয় বৈঠকে অভিযোগ উঠেছে। ফলে পুলিশ বা সেনা মোতায়েনের কোনও সুযোগই মেলেনি। এটা নিরাপত্তার পক্ষে একটা বড় গাফিলতি বলে মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু এরপরেও প্রশ্ন থেকে যায়, পর্যটকরা যখন দলেদলে সেখানে আসতে শুরু করেছে তখনও কি কোনও খবর ছিল না প্রশাসনের কাছে? তারপরেও তো দ্রুত যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যেতে পারত। বিশেষ করে রোজ যেখানে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার পর্যটকের সমাগম হচ্ছে, সেখানকার নিরাপত্তার-শূন্যতার বিষয়ে কোনও গোয়েন্দা রিপোর্টও পৌঁছয়নি সরকারের কাছে? না কী ইচ্ছে করেই পুলিশ এবং সেনাকে রাখা হয়েছিল অন্ধকারেই? নেপথ্যে কি কোনও বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল? পর্যটকদের ব্যবহৃত গাড়ির সংখ্যা দেখেও কি ভিড়টা আন্দাজ করা যায়নি? কী জবাব দেবেন মোদি এবং অমিত শাহ?
আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে ব্যক্তিগত আক্রোশে খুন যুবক, প্রচার পেতে পহেলগাঁও বদলার দাবি
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকার বৈসরন তৃণভূমিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক প্রাণ হারানোর প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং পুলিশের অনুমতি সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন ঘনীভূত হতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সর্বদলীয় বৈঠকে জানায় যে বৈসরন তৃণভূমি খোলার আগে পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে একটি সর্বভারতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, জম্মু ও কাশ্মীরের এক সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, বরফঢাকা মাসগুলি বাদে এই অঞ্চলে পর্যটকদের প্রবেশের জন্য আলাদা করে পুলিশের অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তিনি জানান যে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রশাসনকে কোনও আনুষ্ঠানিক বার্তা দেয়নি। রিপোর্ট বলছে, বৈসরন পিকনিক স্পটের গেটে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে যে এটি অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত এবং এখানে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ৩৫ টাকা করে নেওয়া হয়। অর্থাৎ, এই কেন্দ্রটি একটি স্বীকৃত সরকারি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে চলছিল, যার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল। ঘটনার পরে সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধী দলের সদস্যরা তীব্রভাবে নিরাপত্তার ব্যর্থতা এবং গোয়েন্দা তথ্যের অপ্রতুলতার অভিযোগ তোলেন। বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের জানানো হয় যে সাধারণত জুন মাসে তৃণভূমি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় এবং তার আগে পর্যটকদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি আবশ্যিক। অথচ এবছর ২০ এপ্রিল থেকেই ছোট ছোট দলে পর্যটকদের পাঠানো হচ্ছিল, কোনওরকম সরকারি অনুমতি বা নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই। এ বিষয়টি প্রশাসনিক দায়িত্বহীনতার অভিযোগকে আরও প্রবল করে তুলেছে। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা (সংবিধানের ৩৭০ ধারা) বাতিল করে একে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। এর পর থেকে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে এসেছে, যদিও পর্যটন কেন্দ্রগুলির প্রশাসনিক দায়িত্ব এখনও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রশাসনের হাতে রয়েছে। এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বিরোধী দলগুলির তরফ থেকে প্রশ্ন উঠছে— এত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এত বড় ফাঁক থেকে গেল কীভাবে? এই হামলায় নিহত গুজরাতের সুরতের বাসিন্দা, ব্যাংকার শৈলেশ কালাথিয়ার স্ত্রী শীতল কালাথিয়া গণমাধ্যমে সরাসরি সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন,
‘টাকা নেওয়া হয়েছে, টিকিট কাটা হয়েছে, অথচ কোনও নিরাপত্তা ছিল না। এটা ক্ষমার অযোগ্য অবহেলা।’