দার্জিলিংয়ের ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম শ্রীখোলা (srikhola)। এমন একটি জায়গা, যেখানে সচরাচর খুব বেশি মানুষ যান না৷ তবে যাঁরা সান্দাকফু, ফালুট ট্রেকিং করতে যারা যান, তাঁরা শ্রীখোলার সৌন্দর্যে কিছুক্ষণের জন্য হলেও থমকে দাঁড়ান। যেমন সুন্দর নাম, তেমন শ্রী। দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ৮৭ কিলোমিটার দূরে। এখানে অতিথিদের স্বাগত জানায় শান্ত সুন্দরী শ্রীখোলা নদী, যার উপরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে দুশো বছরের ঝুলন্ত ব্রিজ৷ মুগ্ধ হয়ে দেখার মতো। গাছপালা ঘেরা ঢেউখেলানো এই গ্রামে ক্ষণিকের বিশ্রাম নতুন অক্সিজেন জোগায় মনের মধ্যে।
পাহাড়প্রেমী বাঙালি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা দার্জিলিং। যেখানে ছাদের ধারের রেলিংয়ের নস্টালজিয়া বারবার মুগ্ধ করে দেয়। এই মুগ্ধতাকে আরও বাড়িয়ে দেয় সুন্দরী শ্রীখোলা। সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কের পাদদেশেই অবস্থিত। শান্ত, নির্জন, নিরিবিলি জায়গা। চারদিক সবুজ আর সবুজ। কখনও মেঘ, কখনও রোদ্দুর। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি। প্রায় সারা বছরই ছড়িয়ে থাকে হালকা শীত শীত ভাব।
অনেকেই শ্রীখোলাকে (srikhola) পাখির দেশ বলেন। কথাটা যে কোনও অংশে ভুল নয়, তা সকালে উঠেই বুঝতে পারা যায়। চারদিকে নাম না জানা পাখির কলরব। যেন পাঠশালায় নামতা পড়ছে। কিচিরমিচির শুনতে শুনতে মনের মধ্যে এক অন্যরকম অনুভূতির জন্ম হয়। শহরের ব্যস্ততা, নাগরিক জীবনের কোলাহল থেকে অনেক দূরে। পাহাড়, নদী, পাখি আর ফুলের রাজ্যে কাটিয়ে আসা যায় কয়েকটা দিন।
আরও পড়ুন- ICSE ও ISC- তে এগিয়ে মেয়েরা, শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর
কাছেই রয়েছে রিম্বিক। ছোট্ট জনপদ। রিম্বিক হয়েই শ্রীখোলা যেতে হয়। ছবির মতো সুন্দর গ্রাম। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে ঘুম রিম্বিক হয়ে সরাসরি চলে আসা যায় শ্রীখোলা। সকালে ঘুম থেকেই উঠেই চোখে পড়বে দু-পাশে নানা রঙের নাম না জানা পাহাড়ি ফুলের সারি। রিম্বিকে কিছুটা লোকজনের বাস। ইদানীং বেশ ঘিঞ্জি। তারপরই শুরু হবে নির্জন পথ। সেই পথ চলে গিয়েছে শ্রীখোলার দিকে।
সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে পাহাড়ের নির্জনতায় মন ও শরীর, দুটোকেই ডুবিয়ে দেওয়া যায়। আকাশের গায়ে ঠোঁট ছোঁয়ানো পাইন, ওক এবং চেস্টনাটের পাতার ফাঁকে লেগে থাকা শিশিরবিন্দু থেকে ঠিকরে পড়ে সোনাঝরা আলো। আর সেই ঘন বনের বুক চিরে বয়ে চলেছে শ্রীখোলা নদী। শরীরে তার পঞ্চদশীর প্রাণোচ্ছলতা। শীতের শীর্ণা জলধারা গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিস্নাত হয়ে নবযৌবনের উন্মেষে বয়ঃসন্ধির নিরাবরণ কিশোরীর মতোই শিহরিতা, গর্বিতা, আপনবেগে পাগলপারা। তার রূপে বুঁদ হয়ে যেতে হয়। প্রকৃতির বুকে জেগে ওঠে ছন্দবদ্ধ না-লেখা কবিতা।
সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল ফরেস্টের অন্তর্গত জায়গাটা সান্দাকফু ফালুট ট্রেক রুটের মধ্যে পড়ে। রোডোডেনড্রন আর ম্যাগনেলিয়ার মাঝে সরু রাস্তা। ফালুট থেকে শ্রীখোলা ৩০ কিলোমিটার দূরত্ব। এখানে সকাল আসে অন্যরকমভাবে। বিকেলের পর ধীরে ধীরে সন্ধে ঘনিয়ে আসে। তারপরেই ঝুপ করে নামে রাত। একেবারে নিঝুম। তারাভরা আকাশ। মনে হয় সভ্যজগৎ থেকে বহু যোজন দূরে। নদীর কুল কুল শব্দ আর এক অদ্ভুত নীরবতা। মন ভরে উপভোগ করা যায়।
শহরের ব্যস্ততা, নাগরিক জীবনের কোলাহল থেকে অনেক দূরে শ্রীখোলা (srikhola)। গরমের দিনে সপরিবারে কাটিয়ে আসতে পারেন কয়েকটা দিন।