প্রতিবেদন: কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছিল বিজেপি। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে কুৎসিত রাজনৈতিক ফায়দা লোটার খেলায় নেমে পড়েছিল গেরুয়া নেতৃত্ব। সেই বিজেপিশাসিত হরিয়ানাতেই নৃশংসভাবে খুন করা হল ২৫ বছর বয়সের এক চিকিৎসককে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ভাবনা যাদব নামে ওই তরুণী চিকিৎসকের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভয়াবহ এই ঘটনাটি ঘটেছে হরিয়ানার হিসারে। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাঁকে জয়পুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ২৪ এপ্রিল সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। ভাবনার মা গায়ত্রী যাদবের অভিযোগ, এটি সুপরিকল্পিত খুন। ভাবনাকে কুপিয়ে খুন করে প্রমাণ লোপাটের জন্যই গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করা হয়েছিল। থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, রহস্যজনকভাবে খোয়া গিয়েছে ভাবনার মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ এবং বেশকিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র।
আরও পড়ুন-আইএসসির কৃতী দুই ভূমিকন্যার জন্য গর্বিত কোচবিহার
প্রশ্ন উঠেছে, দুই বিজেপিশাসিত রাজ্য হরিয়ানা এবং রাজস্থানের পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। এতদিন পরেও কেন এখনও পর্যন্ত একজনকেও গ্রেফতার করল না পুলিশ? বিশেষ কাউকে বা নেপথ্যের কোনও বড় চক্রকে কি আড়াল করার চেষ্টা করছে গেরুয়া প্রশাসন? এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগপ্রকাশ করেছে তৃণমূল। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, আরজি করের ঘটনায় যাঁরা মোমবাতি নিয়ে মিছিল করেছিলেন তাঁরা এখন নীরব কেন? কেন হরিয়ানা, রাজস্থানে হচ্ছে না প্রতিবাদ মিছিল? আরজি করের মূল অপরাধীকে তো এখানকার পুলিশ গ্রেফতার করেছিল অসাধারণ দ্রুততার সঙ্গে। হরিয়ানা বা রাজস্থানের পুলিশ এক সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারছে না কেন? কী আড়াল করার চেষ্টা করছে তারা? বাংলা মিডিয়া নীরব কেন? ডাক্তারদের সর্বভারতীয় সংগঠনের পদাধিকারীরা কি ঘুমোচ্ছেন? দাবি উঠেছে, হোক প্রতিবাদ। দেশে, বিদেশে।
২০২৩ সালে ফিলিপিন্স থেকে মেডিক্যাল পড়াশোনা শেষ করেন রাজস্থানের আলোয়ারের মেয়ে ভাবনা যাদব। এমবিবিএস হওয়ার পরে ফরেন মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য তিনি অনলাইনে ক্লাস করতেন এবং প্রয়োজনে দিল্লিও যেতেন। ২১ এপ্রিল দিল্লিতে যান ভাবনা। থাকছিলেন তাঁর বোনের সঙ্গে। বোনও সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন-ডায়মন্ড হারবারে ট্রফি পরিক্রমা
পরিবারের দাবি, ২৪ এপ্রিল সকালে ভাবনার বাড়ি ফেরার কথা ছিল, কিন্তু তিনি ফেরেননি। ওই দিনই উমেশ যাদব ওরফে উদেশ যাদব নামে এক ব্যক্তি ফোন করে জানান, ভাবনা অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হিসারের এক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। হরিয়ানার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী ওই উমেশ যাদবই গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ভাবনাকে হিসারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু তারপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ওই ব্যক্তি। মা গায়ত্রী যাদব হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, মেয়ের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। মেয়ের ড্রেসিংয়ের সময় তিনি লক্ষ্য করেন, পেটে ধারালো অস্ত্রের ক্ষতচিহ্ন। তখনই তাঁর মনে সন্দেহ জাগে, ধারলো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে মেয়েকে। পরে জয়পুরে নিয়ে গিয়ে সেখানকার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতেই মৃত্যু হয় ভাবনার। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধেছে গভীর রহস্য। স্তম্ভিত তাঁর প্রিয়জনেরা।