প্রকৃতির বিস্ময়কর সৃষ্টি
“সমুদ্র? না প্রাচীন ময়াল? পৃথিবী বেষ্টন করে শুয়ে আছে। তার খোলা মুখের বিবরে অন্ধকার। জলের গর্জন। ঐ পথে সমস্ত প্রাণীজগৎ নিজের অজান্তে গিয়ে ঢোকে।”
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জলাধার ওই সমুদ্র! ৬-এ ঋতু, আর ৭-এ সমুদ্র। পৃথিবী পৃষ্ঠের উপরিভাগে অবস্থিত এই সাতটি সমুদ্রই পৃথিবীর বুকে ছ’টি ঋতুর বৈশিষ্ট্য এবং বৈচিত্র্য রক্ষা করে। কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো বিষ পান করে নীলকণ্ঠ হয়ে পরিবেশে জলবায়ু ও আবহাওয়া নির্ণয় করে, দয়ার সাগর আমাদের প্রাণবায়ু অক্সিজেনের জোগান দেয়। সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্রের নিয়ামক ওই সুবিশাল জলাধার বহু মানুষ তথা প্রাণীজগতের খাদ্যের জোগান দিয়ে আসছে সেই সৃষ্টির গোড়া থেকে। বলা ভাল প্রাকৃতিক বিস্ময় ওই সীমাহীন সমুদ্র। যেন সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে অনন্তের কথা ভাবা যায়!
মিলেছে নতুন সমুদ্রের খোঁজ
পৃথিবীর পৃষ্ঠতলে ছাড়াও লুকানো সমুদ্রের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে পৃথিবীর অন্তরে ‘ম্যান্টল’ অঞ্চলে, মিলেছে শক্ত প্রমাণ, সম্প্রতি শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক আলোড়ন। প্রথম গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল সায়েন্স জার্নালে আমেরিকার নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে ১৩ জুন ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে। ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকোর বিজ্ঞানী ড. ব্র্যান্ডন স্মাট, নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ড. স্টিভেন জ্যাকবসেন, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্থ ক্যালিফোর্নিয়ার ড. থর্স্টেন বেকার, কার্নেগি ইনস্টিটিউট অব ওয়াশিংটনের ড. জেনশিয়ান লিউ, এবং ইউনিভার্সিটি অব ওয়োমিং-এর বিজ্ঞানী ড. কেনেথ ডাকার আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জির ব্রুকহেভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির ন্যাশনাল সিঙ্ক্রোট্রোন লাইট সোর্সের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাটি সম্পন্ন করেন। গবেষণায় উঠে এসেছে, পৃথিবীর মধ্যে ৪১০-৬৬০ কিলোমিটার গভীরে উচ্চ ম্যান্টল এবং নিম্ন ম্যান্টলের মধ্যবর্তী স্থানান্তরণের ট্রানজিশন জোনে রয়েছে এই অসীম জলের লুকানো সমুদ্র। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই জল পদার্থের তরল, কঠিন কিংবা গ্যাসীয় অবস্থায় নেই, রয়েছে চতুর্থ একটি অবস্থানে— পাথরের অদ্বিতীয় ঝাঁঝরির মতো পরিকাঠামোর মধ্যে লুকিয়ে!
আরও পড়ুন-নজরে শহরের ৮৩টি রুফটপ ক্যাফে-বার-রেস্তোরাঁ, তালিকা ধরে ময়দানে পুরসভা
৭-এ সমুদ্র
প্রাচীন সাহিত্যে হাজার হাজার বছর আগের উল্লেখ থেকে আমরা সবাই জানি পৃথিবী পৃষ্ঠে রয়েছে মোট সাতটি সমুদ্র— উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর, ভারত মহাসাগর, আর্কটিক বা সুমেরু মহাসাগর, এবং আন্টার্কটিক বা কুমেরু মহাসাগর। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, উত্তর বা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর এবং উত্তর বা দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর এরকম কোনও স্পষ্ট বিভাজন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়, তাই তাঁদের জন্য পাঁচটি মহাসাগরই পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রায় ৭১ শতাংশ দখল করে নিয়েছে। তাইতো পৃথিবীর তিন ভাগ জল এবং একভাগ স্থল। এর পরেও বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের খোঁজ ভূগর্ভস্থ অসীম জলের উৎসস্থলের কিনারা করা— সেই অদম্য কসরতই খুঁজে পেয়েছে এই হারানো সমুদ্র।
জল, জীবন ও জলচক্র
ইংরেজি কবি সুইনবার্ন একবার জীবনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, দুটি ঘুমের মধ্যবর্তী সময়ে একটু চোখ মেলে চাওয়াই জীবন, অর্থাৎ একপ্রান্তে মাতৃগর্ভে ন’মাস দশ দিনের ঘুম ভেঙে জন্মগ্রহণ এবং অপর প্রান্তে মৃত্যুর মতো চিরনিদ্রায় শায়িত হওয়ার মাঝের সময়টুকুতে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর নামই জীবন। ঠিক তেমনি প্রকৃতির কী অদ্ভুত নিয়ম, আমরা পৃথিবীর মতো প্রায় গোলাকার ভাসমান একটি গ্রহ নামক বস্তুর পৃষ্ঠতলে বসবাস করি, তার তিনভাগই জল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে পৃষ্ঠ থেকে উপরে তাকালে আকাশ দেখা যায়, সময়ে সময়ে মেঘেদের খেয়াল হলেই বৃষ্টিপাতের অছিলায় জল পড়ে উপর থেকে, আবার একটা নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য পর্যন্ত পৃথিবী পৃষ্ঠকে যদি ভিতরের দিকে খনন করা হয় তাহলেও জল পাওয়া যায়। এখন উপর নিচে এই দুই প্রকার জল এবং পৃষ্ঠতলের জল নিয়ে বাঁচার নামই আমাদের সামগ্রিক জীবনযাপন। প্রশ্ন হল উপরের জল তো মেঘ থেকে আসে, পৃষ্ঠতলে নদীনালা সমুদ্রের জল, তাহলে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ জলের উৎস কী? বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে এর উত্তর— পাওয়া গিয়েছে লুকানো সমুদ্রের খোঁজ। ড. স্টিভেন জ্যাকবসেন জানিয়েছেন, ম্যান্টল অঞ্চলের ওই পাথরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা জলের পরিমাণ মাত্র এক শতাংশ, যা কিনা আয়তনে পৃথিবী পৃষ্ঠের সমস্ত জলের প্রায় তিন গুণেরও বেশি।
জলের অপর নাম জীবন, খুব স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবীর জীবজগতের জল ছাড়া চলবে না। মজার বিষয় প্রকৃতিতে বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্নভাবে জলের জোগান মেলে— তা সে ভুগর্ভস্থ পানীয় জল হোক কিংবা নদীনালার কাপড় কাঁচা জল, জমিতে সেচের জল হোক কিংবা সকালের শিশির, পাট পচাতে বর্ষার জল হোক কিংবা শীতের কুয়াশা! পৃথিবীর পৃষ্ঠতলের সঙ্গে উপরের মুক্ত বায়ুমণ্ডল এবং মাটির নীচে ভূগর্ভের মধ্যে সবসময় একটি জলচক্র নিরন্তর কাজ করে চলেছে প্রকৃতির নিয়মেই। একে পৃথিবীর জলচক্র বা ওয়াটার সাইকেল বা হাইড্রোলজিক সাইকেল বলে। বিজ্ঞানীদের এই গবেষণায় খুঁজে পাওয়া নতুন সুবিশাল জলাধার স্থল, ভূগর্ভ, এবং নভের মধ্যেকার একটি পূর্ণ জলচক্রকে প্রমাণসিদ্ধভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।
এই জলচক্র সূর্য এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। পৃথিবী পৃষ্ঠের উপরিভাগের জল প্রখর তাপে বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে যায়, উদ্ভিদেরাও বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ত্যাগ করে, আবার অনেক সময় জমা বরফ থেকেও সরাসরি ঊর্ধ্বপাতনের ফলে পরিবেশে জলীয় বাষ্প জমে, পরবর্তীতে তা ঘনীভূত হয়ে মেঘে রূপান্তরিত হয় এবং অতিরিক্ত ভারী হলে বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে পৃথিবী পৃষ্ঠে জল ঝরে পড়ে। সেই জল পৃষ্ঠতলের উপর গড়িয়ে যায়, ভূত্বকে শোষিত হয়, ভূগর্ভ প্রবেশ করে এবং সঞ্চিত হয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা ভূগর্ভস্থ ওই জল প্রচণ্ড চাপে পাথরের মধ্যে হাইড্রক্সিল মূলক হিসেবে সঞ্চিত থাকে। প্রয়োজনে নানা উপায়ে এবং প্রাকৃতিকভাবে প্রস্রবণ কিংবা সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে সেই জল পৃথিবী পৃষ্ঠে পৌঁছায়। এভাবেই সম্পূর্ণ হয় একটি জলচক্র। তবে এখানেই উঠে আসে ভূগাঠনিক প্লেট টেকটনিক প্রক্রিয়ার কথা।
আরও পড়ুন-মাদ্রাসায় মেয়েদের ম্যাজিক
প্লেট টেকটনিক ও জলচক্র
যে প্রক্রিয়ায় পৃথিবী পৃষ্ঠের গঠন এবং নানারকম পরিবর্তন সম্ভব হয়, তাকেই ভূগাঠনিক পক্রিয়া বা জিওমর্ফিক প্রসেস বলা হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর পৃষ্ঠতল এবং অভ্যন্তরীণ কিছু ভৌত এবং রাসায়নিক প্রভাবের দরুন সৃষ্টি হয় নানারকম ভূমিরূপের, যা পৃথিবীর উপরিভাগের ত্বককে একটি নির্দিষ্ট আকার দেয়। এইরকমই একটি তত্ত্ব হল ভূত্বক গাঠনিক পাত তত্ত্ব বা প্লেট টেকটনিক্স থিওরি, এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অনুযায়ী পৃথিবীর লিথোস্ফিয়ার বা অশ্মমণ্ডল বা ভূমিরূপ বেশ কিছু পাতলা অনমনীয় খণ্ড পাতের পারস্পরিক সজ্জা সমন্বয়ে গঠিত। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে যখন সমুদ্রতটের বিস্তার তত্ত্ব বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়, তখনই এই পাত তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা পায়। মধ্য-মহাসাগরীয় ফাটলের উপর দিকে যেখানে নতুন মহাসাগরীয় তলদেশ বা চাট্টান তৈরি হয়, এবং পরবর্তীতে সেই স্থানে সামুদ্রিক তলদেশ বিস্তার লাভ করে, এই ঘটনা সাধারণত ভূগর্ভস্থ অগ্ন্যুৎপাতের জন্য হয়। এখন ওইসব ভূগাঠনিক পাতের সামান্য নড়াচড়ার কারণে তৈরি হয় অগ্ন্যুৎপাত, সুনামির মতো ভয়াবহ বিপর্যয়।
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে, পৃথিবীর পৃষ্ঠতল থেকে জল প্রেট টেকটনিকের মাধ্যমেই এত গভীরে প্রবেশ করেছে। এবং এইভাবে ভূগর্ভ এবং পৃষ্ঠতলের মধ্যেকার জলচক্র সচল রয়েছে। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানী মহল খুঁজে চলেছেন পৃথিবীর পৃষ্ঠে এই বিপুল পরিমাণ জলের রহস্য কী, এর পিছনে কি কোনও লুকানো সুবিশাল জলাধার রয়েছে? এই গবেষণা তার উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছে।
গবেষণার সূত্রপাত
নিরুদ্দিষ্ট এই সুবিশাল জলাধারের খোঁজ সর্বপ্রথম শুরু করেন বিজ্ঞানী ব্র্যান্ডন স্মাট ও বিজ্ঞানী স্টিভেন জ্যাকবসেন, নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একপ্রকার বিশেষ পাথরের আবিষ্কারের কথা জানতে পেরে। ব্রাজিলে একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে প্রায় ৪০০ মাইল গভীর ভূগর্ভ থেকে উঠে আসা হীরার মধ্যে পাওয়া যায় রিংউডাইট নামক খনিজের একটি টুকরো। এটিই একমাত্র প্রথম নমুনা যা পৃথিবীর অত গভীর থেকে প্রাপ্ত, ল্যাবরেটরিতে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই পাথরের টুকরোটির মধ্যে কঠিন রূপে জল সঞ্চিত রয়েছে। শুরু হয় জোর অনুসন্ধান।
বিজ্ঞানী স্মাট এবং জ্যাকবসেন পুরো আমেরিকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ২০০০টি ভূমিকম্পের কম্পন মাপক সিসমোমিটারের বিরাট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে খুঁজে পান উত্তর আমেরিকার ৪০০ মাইল গভীরে ম্যাগমার যথেষ্ট উপস্থিতি— যা কিনা ওই গভীর ভূগর্ভে জলের উপস্থিতির সম্ভাব্য সংকেত! গভীর পর্যবেক্ষণে উঠে আসে প্লেট টেকটনিকের ফলে পৃষ্ঠতলের জল ভূগর্ভের ওই অঞ্চলে প্রবেশ করলে ম্যান্টল অঞ্চলে উপস্থিত খনিজের আংশিক গলন হয়ে থাকে, মুক্ত জলের উপস্থিতিতে পাথরের এই গলনকে হাইড্রেশন মেল্টিং বলা হয়। বিজ্ঞানীদের কৌতূহল বেড়ে যায়। আরও নিবিড় গবেষণায় শুরু হয় নমুনা সংগ্রহ। উঠে আসে সেই রিংউডাইট পাথর। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ উচ্চ ম্যান্টল থেকে প্রাপ্ত সবুজ রঙের অলিভাইন পাথর ও জলের সঙ্গে উচ্চ চাপে পরীক্ষাগারে এই নীলকান্ত মণির মতো দেখতে রিংউডাইট পাথরটির সংশ্লেষণে দেখা যায়, ওই গভীর অঞ্চলে প্রায় ২৫০ মাইল কঠিন পাথরের ভর এবং প্রায় ২০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় জলের অণু ভেঙে হাইড্রক্সিল মূলক হিসেবে রিংউডাইট পাথরের ল্যাটিস বা ঝাঁঝরির মধ্যে জমা থাকে।
আরও পড়ুন-কটকে ক্রেন ভেঙে মৃত ইঞ্জিনিয়ার-সহ ৩
রিংউডাইট পাথরের একধরনের অদ্ভুত কেলাসাকার গঠন রয়েছে, যা হাইড্রোজেন এবং জলকে নিজের মধ্যে ধরে রাখতে সক্ষম, সেই জন্যই এই খনিজটি স্পঞ্জের মতো আচরণ করে। যেন নিংড়ালেই জল বেরোয়। কোনওপ্রকার মুক্ত জলের অনুপস্থিতিতে ওই বিশেষ ম্যান্টল পরিবেশে রিংউডাইট পাথর যখন ট্রানজিশন জোন থেকে নিম্ন ম্যান্টলের দিকে যায় তখন স্বাভাবিকভাবে ওই জল সংবলিত খনিজের গলন হয় এবং তরল জল উৎপাদিত হয়। বিজ্ঞানের এই বিশেষ পক্রিয়াকে ডিহাইড্রেশন মেল্টিং বলা হয়ে থাকে। ঠিক এইসব প্রক্রিয়ার স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশের জন্যই ভূগর্ভে ওই বিশাল জলাধারের সন্ধান পাওয়া গেছে।
বৈজ্ঞানিক উত্তমাশা
পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর ভূমিকম্প কিংবা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো ভূতাত্ত্বিক ঘটনাগুলোর স্বাভাবিক প্রকাশ ভূগর্ভে ঠিক কী ঘটছে তার নির্দেশক। আমাদের চোখের আড়ালে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটা নানা ঘটনার ব্যাখ্যা বদলে দিতে পারে। পৃথিবীর অভ্যন্তরে ম্যান্টল অঞ্চলের বিশেষ পরিবেশে নিরন্তর ঘটিত ডিহাইড্রেশন মেল্টিং-এর প্রভাবে যে বিপুল পরিমাণ জলের সন্ধান পাওয়া গেছে, তা পৃথিবী গঠনের সমস্ত উপাদানগত তথ্য ও তত্ত্বকে একপ্রকার নাড়িয়ে দিয়েছে। ভূমিরূপ গঠন এবং পূর্ণ জলচক্রের একটি প্রমাণসাপেক্ষ দিশা দেখিয়েছে এই বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন। আমেরিকার চারশো মাইল গভীরে ডিহাইড্রেশনের প্রভাবে যে ম্যাগমা উৎপাদনের সূত্র মিলেছে, এবং তার ফলে যে বিশাল জলাধারের সন্ধান পাওয়া গেছে তা সার্থকভাবেই পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর এই বিপুল পরিমাণ জলের জোগান দিচ্ছে। তাই পৃথিবীকে নীল গ্রহ বলা যথার্থ। বিজ্ঞানীদের এইপ্রকার ‘হাই-প্রেসার এক্সপেরিমেন্ট’ জল, জল হাওয়া, প্রকৃতি, পরিবেশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির নতুন তত্ত্ব প্রতিপালনের দিশারি, একথা জোর দিয়ে বলা যায়।