রুদ্ধশ্বাস জয়ে নাইটরা দৌড়েই

কলকাতা নাইট রাইডার্স ২০৬/৪ (২০ ওভার) রাজস্থান রয়্যালস ২০৫/৮ (২০ ওভার)

Must read

অলোক সরকার: তিনিই গড়লেন। এবং ভাঙলেন! আর কেউ নন, রবিবাসরীয় সন্ধ্যার ট্র্যাজিক হিরো রিয়ান পরাগ।
তিনি যখন আউট হয়ে ফিরছেন, একঝলক দেখা গেল জুহি চাওলাকে। টেনশনে তখনও দাঁড়িয়ে। পাশে কেকেআর সিইও ভেঙ্কি মাইসোর। তাঁরও স্বস্তি। আগের ক’টা ওভার দমবন্ধ করা উদ্বেগে কেটেছে গ্যালারির। সবাই জানে হেরো দল ভয়ানক। যেতে যেতে আরেকটা দলকে তুলে নিয়ে যায়। কপাল ভাল কেকেআরের (KKR), সেটা হয়নি। ১ রানে জিতে রাহানেরা প্লে অফ দৌড়েই থাকলেন।
ধুস, কে বলল এক রিয়ানেই শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল জুহিদের। পরের দুটো ওভারে আবার ফেরত এল টেনশন। আরও প্রবলভাবে। সুপার সাব শুভম দুবে বিধ্বংসী মেজাজে। শেষ ওভারে রাজস্থানের দরকার ছিল ২২ রান। বৈভবকে উড়িয়ে সেটা প্রায় করে ফেলেছিলেন শুভম (২৫)। একটা করে বল যাচ্ছে বাউন্ডারিতে, আর আর্তনাদ উঠে আসছে গ্যালারি থেকে। ঠিক যেটা রিয়ানের বেলায় হয়েছিল। মইনকে পাঁচ ছক্কা। পরের ওভারে আর একটা। ছয় ছক্কায় নাইটরা তখন বিদায়ের সানাই শুনছে।
তার আগে রিয়ানরা যেভাবে স্পিনারদের সামনে গুটিয়ে গেলেন, তাতে মনে হচ্ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট খুঁজে বের করা শক্ত। তবু যশস্বী জয়সওয়ালের উইকেট চলে যাওয়ার পর তাদের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন ছিল। তারা কিন্তু সেটাই করে ফেলেছিল। কেকেআর উইকেট বুঝে তিন স্পিনারে নেমেছিল। রাজস্থান ঠিক এখানেই ভুল করে। এই উইকেটে শুরুতে সিমারদের সাহায্য করেছে। কিন্তু দিনের ম্যাচে রোদ্দুর পড়ে এলে বল সামান্য ঘোরে। যেহেতু উইকেটের আর্দ্রতা ততক্ষণে শুকিয়ে যায়। মইন ঠিক এই সময়েই যশস্বীকে (৩৪) তুলে রাজস্থানকে ধাক্কা দেন।
তিনি যখন ফিরে গেলেন, রাজস্থান ৬৬/৩। আগের দুটো উইকেট নিয়েছিলেন মইন ও বৈভব। বোলার বৈভব অবশ্য গ্যালারিকে হতাশ করেছেন বৈভব সূর্যবংশীকে (৪) তুলে নিয়ে। গত দু’দিন চোদ্দো বছরের কিশোরকে নিয়ে তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। অবস্থা এমন হয় যে, প্র্যাকটিসে আসা-যাওয়ার সময় বৈভবের জন্য নিরাপত্তারক্ষী রাখতে হয়েছিল। এদিন একটা বাউন্ডারি মেরেই তার দু’বলের ইনিংস শেষ হয়ে গেল রাহানের দুর্ধর্ষ ক্যাচে।
আগের ম্যাচে বৈভব শূন্য করেছিল। তখন যারা তার কাছে গগনচুম্বী প্রত্যাশা করতে বারণ করেছিলেন, তারমধ্যে সানি গাভাসকরও ছিলেন। তিনি বলেছিলেন ছেলেটার আরও অনেক শেখার আছে। হাতের কাছেই যখন রাহুল দ্রাবিড় আছেন, তখন আর কী লাগে। দেখা গেল রাজস্থান রয়্যালস তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে নজরদারি চালালেও ব্যাটের দিকে চোখ রাখেনি। না হলে বৈভব এভাবে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসে কী করে! কোথাও তো লাগাম টানতে হবে। সেটা দলকেই।
হাফ সেঞ্চুরির করে রাসেল এদিন সেলিব্রেশন করলেন গ্লাভসে ব্যাট ঠেকিয়ে। সম্ভবত এটাই বোঝাতে চেয়ে, আমি ব্যাট করতে জানি। তোমরা শুধু আগে পাঠাও। কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে ছয়-সাতে নামিয়েছে এযাবৎ। এটা বেচারা খুব বেশি বল খেলার জন্য পাননি। এদিন তাঁকে পাঁচে নামানো হল। তিনি ২৫ বলে ৫৭ নট আউট। চারটি চার, ছ’টি ছক্কা। রাসেলের মাসল পাওয়ারের জোরেই কেকেআর শেষমেশ ২০ ওভারে ২০৬/৪ করে গেল। একটা সময় এই রানটা ভাবা যাচ্ছিল না। অতএব, ড্রে-রস গ্লাভসে ব্যাট থাকবেন না তো কে ঠুকবেন!

আরও পড়ুন-সর্বার্থে কোণঠাসা নিরানন্দ বোস, এখন ফের ভেসে ওঠার চেষ্টায়

রাহানে টসে জিতে ব্যাট নিয়েছিলেন যাতে পরের দিকে তাঁর তিন স্পিনার এই উইকেট থেকে সুবিধা পান। রবিবাসরীয় ম্যাচ এমন এক উইকেট খেলা হল যাতে ক্যারি ছিল। জোফ্রা আর্চার প্রথম কয়েকটা ওভারে আগুনে পেসে বল করলেন। নাইটরা ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারায়। নারিন যুধবীরের বলে বোল্ড হয়ে যান ১১ রানে। রাহানের খেলা নিয়ে সামান্য সংশয় ছিল। তিনি সেটা উড়িয়ে দিয়ে তিনেই নেমেছিলেন। গুরবাজের সঙ্গে ৫৬ রানের পার্টনারশিপ খেলে ফেলার পর আফগান ওপেনার (৩৫) ফিরে যান থিকসানার বলে।
রাহানে (৩০) যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, স্কোরবোর্ড চলছিল। বার দুয়েক শুয়ে পড়লেন পায়ে ক্র্যাম্প ধরায়। হাতের সেলাইও পুরো শুকোয়নি। কিন্তু এসব নিয়েই করে গেলেন কেকেআর অধিনায়ক। উপায় নেই। নাইটদের (KKR) এখন সব ম্যাচ নক আউট। যতক্ষণ জয়, ততক্ষণই প্লে অফ দৌড়ে থাকা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে রাহানে, রঘুবংশী এরা কেউ ম্যাচ উইনার নন। তাই বারবার চল্লিশ-পঞ্চাশ করে উইকেট দিয়ে যাচ্ছেন। রঘুবংশীও জোফ্রাকে উইকেট দিয়ে যান ৪৪ রানে।
রাসেল শুরু করেছিলেন অত্যন্ত ধীর গতিতে। এতটাই স্লো যে গ্যালারি অধৈর্য হয়ে পড়েছিল। অবস্থা এমন হয় যে তিনি না পারছেন শট খেলতে, না পারছেন স্ট্রাইক রেট করতে। রঘুবংশী তখন নন স্ট্রাইকার এন্ডে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু শুরুতে যে বলগুলো রাসেল নষ্ট করেছিলেন, পর সেটা পুষিয়ে দেন ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে। পাওয়ার হিটিংয়ের সুবিধা হল বল অবধি পা না গেলেও স্রেফ পাওয়ারে খেলে দেওয়া যায়। শেষদিকে মাধোয়ালের এক ওভারে ২৩ রান নেন ক্যারিবিয়ান তারকা। কোনওটা হাঁটু গেড়ে পয়েন্টের উপর দিয়ে ছক্কা। কোনওটা গোড়ালি থেকে থেকে এক ফ্লিকে স্কোয়ার লেগের বাইরে।
অপরাজিত পঞ্চম উইকেটে নাইটরা যোগ করেছে ৩৪ রান। রাসেল যখন ভয়ঙ্কর মেজাজে, তখন তাঁর সঙ্গে যোগ দেন রিঙ্কু। এবারের আইপিএলে যাকে ফিনিশার বলে মনেই হচ্ছে না। এদিন তাও রাসেলকে সঙ্গ দিতে পেরেছেন। ৬ বলে ১৯ রান করে নট আউট থেকে গেলেন। শেষ জুটিতে রাসেল আর রিঙ্কু এই রান করে না গেলে নাইটরা দুশো পার করতে পারত না।

Latest article