সংস্কৃতিবান্ধব পরিবেশ গড়ে গ্রামীণ গ্রন্থাগারের হাল ফেরালেন অনিতা

অবসরের মুখে পৌঁছেও প্রায় বছর খানেক ধরে তালাবন্ধ গ্রামীণ গ্রন্থাগারের হাল একক প্রচেষ্টায় বদলে দিয়েছেন গ্রন্থাগারিক অনিতা মুখোপাধ্যায়

Must read

প্রতিবেদন : সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তের ফলে ক্রমশই বই থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছেন অনেকে। সেই সময় অবসরের মুখে পৌঁছেও প্রায় বছর খানেক ধরে তালাবন্ধ গ্রামীণ গ্রন্থাগারের হাল একক প্রচেষ্টায় বদলে দিয়েছেন গ্রন্থাগারিক অনিতা মুখোপাধ্যায়। পাঠকদের ফের লাইব্রেরিমুখী করেছেন তিনি। বই লেনদেন ছাড়াও গ্রন্থাগারে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে এই কাজে সফল হয়েছেন তিনি। বীরভূম জেলা গ্রন্থাগার দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে খবর, কর্মীর অভাবে বছর খানেক তালাবন্ধ পড়ে থাকা নানুর উচকরণ গ্রামীণ গ্রন্থাগারে শেষ পর্যন্ত চাকরি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে লাইব্রেরিয়ান হিসাবে যোগ দেন অনিতা দেবী। কিন্তু যোগ দিয়ে তিনি দেখেন, কাগজে-কলমে গ্রন্থাগারে তিনশোর বেশি পাঠক থাকলেও কেউই সেখানে আসেন না। কয়েকদিন এভাবে একা বসে থাকার পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবেদন জানিয়েও পাঠকদের সাড়া পাননি। তবে হাল না ছেড়ে মানুষকে গ্রন্থাগারমুখী করতে মাসিক সাহিত্যসভা, মহিলাদের নিয়ে নাটক, কচিকাঁচাদের জন্য বিনোদনের আসর বসানোর উদ্যোগ নেন গ্রন্থাগারেই। তাতেই ম্যাজিকের মতো সাড়া মেলে। ২৫০ জন নতুন মেম্বার হন। গড়ে ৪০ জন রোজ বই লেনদেন করেন।

আরও পড়ুন-রাজ্যসংস্থার আম প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে আয়ের নয়া দিশা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের

পাশাপাশি গ্রামবাসীদের অবসর বিনোদনের জায়গা হয়ে ওঠে লাইব্রেরিটি। ইতিমধ্যে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী অবদানের জন্য ৬৬ জনকে সম্মাননা জানানো হয়েছে সেখানে। বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে অনিতা দেবীরই লেখা ‘দানসাগর বিদ্যাসাগর’ নাটকে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছেন ৩২ বছরের শুচিস্মিতা সরকার, ৫৯ বছরের শোভারানি মণ্ডলরা। ষষ্ঠ শ্রেণির সাহিনুর খাতুন, পিঙ্কি বাউড়িরাও সাহিত্যসভায় নাচ, গান, আবৃত্তি করতে আসার সূত্রে এখন নিয়মিত গ্রন্থাগারমুখী। তারা জানায়, ‘দিদিমণি ভাল ভাল বই বেছে দেন। পড়া শেষ হলেই নতুন বই নিতে চলে আসি।’ গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির সভাপতি জ্ঞানেন্দ্রনাথ দেবাংশী এবং সম্পাদক সম্পাদক সুব্রত ভট্টাচার্য জানান, ‘নতুন করে গ্রন্থাগারের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন অনিতা মুখোপাধ্যায়।’ এর আগে লাইব্রেরিয়ান হিসাবে তাঁর উদ্যোগেই ২০১৫-তে মহকুমা সেরা, ২০১৯ সালে সেরা গ্রামীণ পাঠাগারের স্বীকৃতি পায় নানুর চণ্ডীদাস স্মৃতি গ্রন্থাগার। অনিতার কথায়, ‘সময়ের সঙ্গে মানুষের বিনোদনের চাহিদা পাল্টাচ্ছে। শুধু বই পড়ার জন্য গ্রন্থাগারে আসতে চান না। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শামিল করে তাঁদের গ্রন্থাগারমুখী করার উদ্দেশ্যে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ার চেষ্টা করেছি। এখন অনেকেই লাইব্রেরিতে আসছেন।
নিয়মিত বই পড়ছেন। সঙ্গে চলছে সংস্কৃতিচর্চা।’

Latest article