পর্যটনের নয়া দিশা হতে চলেছে ভৈরবী মন্দির

এই মন্দিরের বৈশিষ্ট টেরাকোটার কারুকার্য দেওয়াল। এই মন্দিরটির বয়স ঐতিহাসিকদের মতে প্রায় ৫০০ বছর। এই ধরনের মূর্তি খুব বিরল।

Must read

অপরাজিতা জোয়ারদার, রায়গঞ্জ: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্যের ধর্মীয়স্থানগুলিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বহু পর্যটনকেন্দ্র। পর্যটক টানতে রাজ্যের উদ্যোগে আবারও সেজে উঠতে চলেছে উত্তরবঙ্গের একটি অন্যতম প্রাচীন মন্দির উত্তর দিনাজপুরের বিন্দোলে অবস্থিত ভৈরবী মন্দির। ইতিমধ্যেই মন্দির সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে রাজ্য। সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ খুব শীঘ্রই হয়ে যাবে বলে জানা গেছে প্রশাসন সুত্রে। এতে খুশি জেলাবাসী। জানা যায়, মন্দিরের মুর্তিটি দশম শতকের তৈরি। এটি মার্তন্ড ভৈরবের। এই মন্দিরের বৈশিষ্ট টেরাকোটার কারুকার্য দেওয়াল। এই মন্দিরটির বয়স ঐতিহাসিকদের মতে প্রায় ৫০০ বছর। এই ধরনের মূর্তি খুব বিরল।

আরও পড়ুন-ইডেন জুড়ে জয়ধ্বনি, কার্যত বিদায় নাইটদের

রায়গঞ্জ থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম বিন্দোল। কাঞ্চননদীর ধারেই অবস্থিত বিন্দোলের ভৈরবী মন্দির। রায়গঞ্জ শহর থেকে ছাব্বিশ কিলোমিটার দূরে বিন্দোলে লুপ্তপ্রায় কাঞ্চন নদীর তীরে এই মন্দির অবস্থিত। সুলতানী আমলে বিন্দোল ভাতুরিয়ার জমিদার গণেশনারায়ণের অধীনে ছিল। জমিদার গণেশনারায়ণ শিবভক্ত ছিলেন। তাঁর উদ্যোগে বিন্দোলে ভৈরবী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মন্দির ইট, চুন ও সুরকি দিয়ে গড়ে ওঠে। তার দেওয়ালের পোড়ামাটির কারুকার্যখচিত। মন্দিরের পশ্চিম দেওয়ালে চিরাগ এবং গম্বুজাকৃতি ছাদ দেখে মনে হয় এসব মুসলিম স্থাপত্য। মন্দিরে উত্তর পূর্ব কোণে একটি সুড়ঙ্গ আছে। একদা পুজোর সময় ঐ সুড়ঙ্গের মধ্যে ফুল বেলপাতা ফেলা হত। আর মন্দির থেকে ৪০০ মিটার দূরে তালদীঘিতে গিয়ে সেই ফুল বেলপাতা ভেসে উঠত। এই মন্দিরে একটি কালো পাথরের মার্তণ্ড ভৈরবের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে। সুর্যরথ ও ঘোটকসমূহ তার বাহন। মূর্তিটির উচ্চতা সাড়ে তিন ফুট। মন্দিরের এই মূর্তির দশভুজ ছিল। ধর্মীয় বিদ্বেষবশত তা কোট দেওয়া হয়। শুধু হাত নয়, তার মাঝের অংশটি ভেঙে ফেলা হয়। মূর্তিটি রথে প্রস্ফুটিত পদ্মের উপর ললিতাসনে উপবিষ্ট আছে। বেদীতে সাতটি অশ্ব খোদিত আছে। সেখানে আছে আরও দুটি নারীমূর্তি। সম্ভবত এরা হলেন ঊষা ও প্রত্যুষা। এই মূর্তিটি এলব্য মার্তণ্ড ভৈরবের মূর্তি বলে পরিচিত। এক পরম সাধিকা এই ভৈরবের পুজো দিতেন। এই কারণে মন্দিরের নাম হয় ভৈরবী মন্দির। ভক্তদের বিপদ আপদের কথা এই সাধিকা পূর্বেই জানিয়ে দিতেন বলে প্রচলিত রয়েছে। প্রতিদিন দূর দূরান্তের বহু মানুষ এই মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের তত্ত্বাবধানে এই মন্দির সংস্কার করা হয়। এবারে ফের এই ঐতিহ্যবাহী মন্দির সংস্কার হতে চলেছে।

Latest article