দক্ষিণ সিকিমের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র রাবাংলা। পেলিং এবং গ্যাংটকের মাঝামাঝি, পাহাড়ের ৭০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। শান্ত জায়গা। মেঘে ঢাকা পাহাড়িয়া শহরটি দিনের আলোয় হঠাৎ হঠাৎ অন্ধকার ডুবে যায়। পান্ডিম, কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাব্রু, হিমালয়ের এই বরফে ঢাকা পর্বত শিখরগুলো এই শহরের প্রতিবেশী। প্রায় সারা বছর ছড়িয়ে থাকে শীত শীত ভাব। শহরের ভিড়-ভাট্টা, শব্দদূষণ থেকে বহুদূরে প্রকৃতির শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসা যায়। খুব বেশি বাড়িঘর নেই৷ বড়োজোর একশোর মতো। অনেকগুলোই আবার হোটেল৷ রাবাংলা যেন হিমালয়ের কোলে নানা সংস্কৃতির এক মিলনমেলা৷ নেপালি, ভুটিয়া, তিব্বতিরা তো বটেই, এমনকী প্রচুর বাঙালিও পাওয়া যায়, যাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই শহরে বাস করেছেন৷ এখানে আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। ঘুরে দেখা যায়। সেগুলো কী কী?
আরও পড়ুন-পর্যটনের নয়া দিশা হতে চলেছে ভৈরবী মন্দির
বুদ্ধ পার্ক
২০০৬ সালে গৌতম বুদ্ধের ২৫৫০ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বুদ্ধ পার্কটি নির্মিত হয়েছিল। এটা সিকিমের তীর্থযাত্রা পর্যটন সার্কিটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে ১৩০ ফুট উঁচু গৌতম বুদ্ধের একটি মূর্তি রয়েছে, যার চারপাশে রয়েছে সু-রক্ষণাবেক্ষণ করা একটি পার্ক, যেখান থেকে হিমালয়ের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এছাড়াও রয়েছে একটি হ্রদ, যা এই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পার্কের মধ্যে আছে জাদুঘর, ধ্যানঘর। ধ্যানঘরে কিছুক্ষণ সময় কাটালে মনের মধ্যে আধ্যাত্মিক ভাবের উদয় হয়।
বন মঠ
বন মঠ বা বন ইয়ং ডুং মঠ রাবাংলা থেকে অল্প দূরে, কেওজিং-এ অবস্থিত। ভারতের দুটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মঠের মধ্যে একটি। এই মঠটি ১৯৮০ সালে ইউং ডুং সুলট্রিম দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। বন মঠ এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে সুবিধাবঞ্চিতদের শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে। বৌদ্ধদের কিছু শিল্পকর্ম, চিত্রকর্ম সাজানো রয়েছে সাধারণ দর্শকদের জন্য।
রালাং মঠ
রাবাংলা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রালাং মঠ। সিকিমের একটি অনন্য মঠ। অন্যান্য মঠের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এর গঠনের মধ্যে প্রতিসাম্য রয়েছে। আরেকটি পার্থক্য হল এই মঠটিতে কেবল ট্রেকিং করেই যাওয়া যায়। একটি কিংবদন্তির উপর নির্মিত। জনশ্রুতি অনুসারে, সিকিমের চতুর্থ চোগিয়াল বা রাজা ফিরে আসার পর, কর্মপা তিব্বতে আশীর্বাদ স্বরূপ কিছু ধানের শীষ ছড়িয়েছিলেন, যার কিছু বর্তমান মঠের জায়গায় পড়েছিল। এইভাবেই এখানে মঠটি নির্মিত হয়েছিল। অগাস্ট মাসে মঠে পাং লাবসোল নামে একটি বার্ষিক সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়। এটা একটা অনন্য জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান, যার মধ্যে দিয়ে বৌদ্ধরা নিজেদের ঐতিহ্য এবং গৌরবকে জনসমক্ষে তুলে ধরেন। ভিড় জমে বহু মানুষের।
আরও পড়ুন-ফেরিওয়ালার ছেলে উর্দু মাধ্যমে রাজ্যে প্রথম
রালং হট স্প্রিংস
রালং হট স্প্রিংস স্থানীয়ভাবে রালং চা চু নামে পরিচিত। রাবাংলার কাছে অবস্থিত প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণ। এটা উষ্ণ সালফারযুক্ত জলের পুল, যার থেরাপিউটিক ক্ষমতা রয়েছে। এগুলোকে আরও সুন্দর করে তোলে আশেপাশের দৃশ্য, যা উপভোগ করা যায়। বেড়ানো এবং কিছু সময় কাটানোর জন্য এটা একটা সুন্দর জায়গা। মার্চ-মে মাস বেড়ানোর আদর্শ সময়। আবহাওয়া মনোরম থাকে।
তেমি চা-বাগান
ঘুরে দেখা যায় তেমি চা-বাগান৷ রাবাংলা থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দারুণ জায়গা। মন ভাল হয়ে যায়। রাবাংলার অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা হল কেউজিং গ্রাম৷ ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মাংব্রু গোম্পা ভিউ পয়েন্ট থেকে হিমালয়ের শোভা দেখার মজাই আলাদা৷ রাবাংলা থেকে গাড়িতে ১২ কিলোমিটার গেলে পৌঁছনো যায় মেনামে৷ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে এখানে ভিড় জমান পর্যটকরা৷ রাবাংলা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে পেলিং, ৯০ কিলোমিটার দূরে ইয়ুকসম এবং ৪০ কিলোমিটার দূরে নামচি ঘুরে আসা যায়। হাতছানি দেয় রাবাংলা। গরমের দিনে সপরিবারে ঘুরে আসুন। মিলবে শরীর, চোখ ও মনের আরাম।
কীভাবে যাবেন?
শিয়ালদহ থেকে নিউ জলপাইগুড়িগামী ট্রেনে চেপে পড়ুন৷ সেখানে নেমে গাড়িতে ১১০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করলেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন৷ আকাশপথে যেতে হলে কলকাতা থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামতে হবে৷ সেখান থেকে গাড়িতে ঘণ্টা চারেকের পথ হল রাবাংলা৷
কোথায় থাকবেন?
প্রায় সারা বছরই এখানে পর্যটকেরা ভিড় জমান৷ তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে৷ শহরের কেন্দ্রে সমস্ত সুবিধাযুক্ত ছোট-বড় বহু হোটেল পেয়ে যাবেন। আগে থেকে হোটেল বা রিসর্ট বুক করে রাখুন৷ থাকা খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না।