প্রতিবেদন: ভারত সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত নির্বাহী আদেশের ভিত্তিতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (পূর্বতন টুইটার) ভারতে ৮ হাজারেরও বেশি অ্যাকাউন্ট ব্লক করতে বাধ্য হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে ইলন মাস্কের সংস্থা সম্ভাব্য বিপুল জরিমানার পাশাপাশি ভারতে কর্মরত স্থানীয় কর্মচারীদের কারাদণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম হয়েছে। এই আদেশগুলির মধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা, স্বতন্ত্র সাংবাদিক এবং কয়েকজন বিশিষ্ট এক্স ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট ভারতে ব্লক করার নির্দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন-দুই মঞ্চ দুই নাটক
মাস্কের সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই আদেশগুলি মেনে চলার জন্য আমরা শুধুমাত্র ভারতে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ রাখব। আমরা সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তবে, আমরা ভারত সরকারের দাবিগুলির সঙ্গে পুরোপুরি একমত নই। এক্স-এর অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারত সরকার নির্দিষ্ট করে জানায়নি যে, কোন পোস্ট বা বিষয়বস্তু ভারতের কোন আইনি ধারা লঙ্ঘন করেছে। এমনকী অনেক অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেই ব্লক করার যৌক্তিকতা বা কোনওরকম প্রমাণ সরকার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। এক্স-এর মতে, সম্পূর্ণ অ্যাকাউন্ট ব্লক করা কেবল অপ্রয়োজনীয় নয়, এটি বিদ্যমান এবং ভবিষ্যতের বিষয়বস্তুর সেন্সরশিপের সমতুল্য এবং মৌলিক বাকস্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থী। প্রসঙ্গত, ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইন ও বিধির আওতায় সরকার কোনও অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’, ‘সার্বভৌমত্ব’, বা ‘জনশৃঙ্খলা রক্ষা’র স্বার্থে নির্দিষ্ট কনটেন্ট ব্লক করার আদেশ দিতে পারে। তবে, ক্রমবর্ধমানভাবে এমন অভিযোগ উঠছে যে এই বিধিগুলিকে বেলাগামভাবে ব্যবহার করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রাজনৈতিক ভিন্নমত ও সমালোচনা দমন করতে তৎপর। এক্স জানিয়েছে, ভারত সরকারের চাপে পড়েও তারা বিশ্বব্যাপী এই অ্যাকাউন্টগুলিকে ব্লক করবে না, বরং শুধুমাত্র ভারতীয় ব্যবহারকারীদের জন্য সেগুলি সীমিত করা হবে। সংস্থার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি একটি সহজ সিদ্ধান্ত নয়, তবে ভারতে প্ল্যাটফর্মটি অ্যাক্সেসযোগ্য রাখা ভারতীয়দের তথ্যে প্রবেশের ক্ষমতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনাটি শুধু এক্স-এর স্বাধীনতা নয়, বৃহত্তর অর্থে ভারতের ডিজিটাল পরিবেশ এবং বাকস্বাধীনতার ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ডিজিটাল অধিকারের জন্য কাজ করা সংগঠনগুলি বলছে, সরকারের এই ধরনের চাপ ও গোপন নির্দেশনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাধীনতা হরণ করছে এবং জনগণের তথ্য জানার অধিকার বিপন্ন করছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এই নির্দেশ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে আইটি মন্ত্রকের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ডিজিটাল বাজার হওয়ায় আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির জন্য এই ধরনের দ্বন্দ্ব এখন কেবল প্রযুক্তিগত নয় বরং রাজনৈতিক ও নীতিগত প্রশ্নেও পরিণত হয়েছে।