নকিব উদ্দিন গাজি রায়দিঘি: ওদের কেউ নদীতে মাছ ধরে। কেউ সুন্দরবনের গহীনে মধু সংগ্রহ করে। কেউ আবার জঙ্গলের মধ্যে কাঁকড়া খোঁজে। এটাই ওদের জীবিকা আর সেই জীবিকার টানে সুন্দরবনের গভীর থেকে গভীরে যায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। পেটের টানে বাঘ-কুমিরের ভয়কে উপেক্ষা করে জঙ্গলে যেতে হয় যাঁদের, সেই মানুষগুলো এবার নাটকের মঞ্চে। পৌরাণিক কাহিনী মনসা মঙ্গলের আঙ্গিকে ও বর্তমান জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন বিষয়ে সুন্দরবনের মানুষের সচেতনতায় ‘বেহুলা এখন’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয় রায়দিঘির শ্রীধরপুর গ্রামে, মনি নদীর পাড়ে। কলকাতার নাট্যদল পূর্ব-পশ্চিম-এর প্রযোজনায় ও স্থানীয় সংস্থা ‘মুক্তি’র সহযোগিতায় সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষদের অভিনয়েই এই নাটক।
আরও পড়ুন-সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন পাকিস্তানের, শহিদ BSF সাব ইন্সপেক্টর
প্রত্যন্ত সুন্দরবনের গ্রাম-গঞ্জে সাপে কাটলে প্রথমেই নিয়ে যাওয়া হয় ওঝার কাছে। সেই কুসংস্কার দূর করতেই মনসামঙ্গলের বেহুলা চরিত্রের অবতারণা করা হয়েছে। কথিত আছে, চাঁদ সদাগর-পুত্র লখিন্দরকে বাসরঘরে সাপে কাটলে স্ত্রী বেহুলা সুন্দরবনের নেতি ধোপানীর ঘাট হয়ে বিভিন্ন নদীপথ ধরে মৃত স্বামীর প্রাণভিক্ষায় স্বর্গে দেবতাদের কাছে পৌঁছন। এই নাটকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সাপে কাটলে ওঝার কাছে নয়, রোগীর প্রাণ বাঁচাতে প্রথমেই হাসপাতালে যেতে হবে। এছাড়াও নাটকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবেশ সচেতনতায় জোর দেওয়া হয়েছে। কুলতলি, রায়দিঘি ,পাথরপ্রতিমা-সহ বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে এই নাটকের মহড়া চলছে প্রায় দশ দিনের বেশি, রায়দিঘির শ্রীধরপুরের সংস্থা ‘মুক্তি’র অঙ্গনে।
নির্দেশক সৌমিত্র মিত্র’র কথায়, সমাজ সচেতনতা মূলক প্রচারেই এই নাটক মঞ্চস্থ হবে। বেহুলার নদীপথে স্বর্গে যাওয়ার সময় তাঁর প্রতি কুদৃষ্টির প্রসঙ্গ তুলে নাটকটিতে যেমন নারী-নির্যাতনের প্রসঙ্গ দেখানো হয়েছে, তেমনই কুসংস্কারের বশবর্তী না হয়ে সাপে কাটলে প্রথমেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও এই নাটকে মহিলাদের ঘরবন্দি না রেখে তাঁদের স্বপ্নপূরণে পরিবারের উৎসাহ ও সহযোগিতার কথাও রয়েছে। **