কবিতা-পাঠকদের কাছে পরিচিত নাম তাপস ওঝা। আলোপৃথিবী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘বৃষ্টির বিপন্ন দিনে’। কবিতাগুলো মূলত সংকেতধর্মী। নিচু স্বরে বাঁধা। যেন কোনও ঘোর থেকে লেখা। স্বগতোক্তি মনে হতে পারে। একবার নয়, বারবার ছুঁয়ে যেতে হয়। তিনি বলেন বনভূমির কষ্টের কথা। চেষ্টা করেন ক্রোধের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। ভুলে যেতে চান বিশুদ্ধ আড্ডার দিনগুলো।
আরও পড়ুন-হোয়াটসঅ্যাপে মাদক অর্ডার দিয়ে পুলিশের জালে হায়দরাবাদের চিকিৎসক
তাঁর কবিতায় অসম্মানে ঝোলা পূর্ণ এক মানুষ চাক্ষুষ করেন নিজের মৃতদেহ। গভীর হয় মনখারাপ। তিনি দিন কাটান অন্য এক সর্বনাশের আশায়। নিজের সম্পর্কে সন্ধিহান। তাই হয়তো বলেন, আলতোভাবে সরিয়ে রাখছি বুদ্ধিশুদ্ধি। আবার প্রচ্ছন্ন মানুষ হয়ে ঘুমের ওষুধ খেয়ে বিছানায় যান। বোঝা যায়, ভুলে যাওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। সতর্ক থাকেন। কারণ, গভীরতম রাতে বটগাছের পেছনের অন্ধকার বড় সন্দেহজনক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অদ্ভুত বৈপরীত্য দেখা যায়। দানা বাঁধে রহস্য। কবিতা তো রহস্যই খোঁজে, তাই না? সবমিলিয়ে কাব্যগ্রন্থটি অনবদ্য। প্রচ্ছদশিল্পী মৌমিতা পাল। ৬৪ পৃষ্ঠার বই। দাম ১৮০ টাকা।
কবিতা পাক্ষিক থেকে প্রকাশিত হয়েছে বনশ্রী রায় দাসের কাব্যগ্রন্থ ‘খিদের কোনও ধর্ম নেই’। চমৎকার নামকরণ। সহজেই বলেছেন গভীর কথা। দীর্ঘদিন লিখছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। তাঁর সাহিত্যকর্মের সঙ্গে পরিচয় নতুন নয়। লক্ষ্য করেছি, কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে না তাঁর কবিতা। যা বলেন, স্পষ্ট ভাষায় বলেন। নিজেকে, নিজের কবিতাকে চেনাতে চেয়েছেন অন্যভাবে। অন্য স্বরে। তিনি শোনান আটপৌরে জীবনের গল্প। যে জীবনে ঘুঘু ডাকা রোদের নিচে ঝুঁকে পড়ে নির্জন জানালা। প্রজাপতি ডানা মেলে বসলেই মনে হয় বিবাহ আসন্ন। দুঃখ লেখেন তিনি। কষ্ট লেখেন। সেই সঙ্গে লেখেন ছোট ছোট সুখ। গুঁড়ো গুঁড়ো আনন্দ। মাঝেমধ্যে ঝুপ করে প্রেম এসে বসে সাদা পাতায়। পেয়ে যায় আশ্চর্য অক্ষর-রূপ। মাঝেমধ্যে নিজের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। সম্পূর্ণ ঝলসে যাওয়ার আগে মেতে উঠতে চান আনন্দ-খেলায়। কবিতাগুলো ভাবায়। মনকে নিয়ে যায় অন্য জগতে। প্রচ্ছদশিল্পী স্বপন মণ্ডল। ৬৪ পৃষ্ঠার বই। দাম ১৮০ টাকা।
আদম থেকে প্রকাশিত হয়েছে অসিতবরণ চট্টোপাধ্যায়ের কাব্যগ্রন্থ ‘কাঁকড়া ও বালির ভাস্কর্য’। নামকরণ গভীর, অর্থবহ। চোখের সামনে ফুটে ওঠে বিস্তীর্ণ সমুদ্রতট। এই কবি নিজেকে রাখেন ইঁদুর দৌড়ের বাইরে। লেখেন তুলনায় কম। তবে যেটুকু লেখেন, চেনান নিজের জাত। তাঁর কবিতায় মহামিলন ঘটে বাস্তব এবং পরাবাস্তবেরই। মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় প্রকৃতি ও মানুষ। তিনি দেখেন পাখির বিচ্ছেদ। দাবি করেন অভিমানী বৃষ্টির মুক্তি। হন্যে হয়ে ফেরেন একটি গানের খোঁজে। জানেন, প্রত্যেকেরই নিজের কিছু না-বলা গল্প থাকে। সেগুলো সযত্নে লুকিয়ে রাখতে হয়। বোঝার চেষ্টা করেন ছায়ার জ্যামিতি। প্রজন্মের গল্প শোনান। দেখতে পান, দীর্ঘ ছায়া রেখে হেঁটে যাচ্ছেন ঠাকুরদা। তিনি নির্মাণে আছেন, পরিবর্তনে আছেন, আবার নিষিদ্ধ পথেও আছেন। অক্ষরে অক্ষরে রচনা করেন আশ্চর্য মায়াজগৎ। যে জগৎ আমাদের কিছু জানা, কিছু অজানা। সবমিলিয়ে তাঁর কবিতা মনে থেকে যায়। হিরণ মিত্র-র প্রচ্ছদ এককথায় অসাধারণ। ৬৪ পৃষ্ঠার বই। দাম ২০০ টাকা।