চাকরিহারা শিক্ষকদের জন্য চাকরিখেকো বাম-রামের কান্না

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, রূপশ্রী— অসংখ্য জনমুখী প্রকল্প নিজ রাজ্যে দিব্যি কপি পেস্ট মারছে রামরেডরা আর পশ্চিমবঙ্গে তারা প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে আর যূপকাষ্ঠে বলি দিচ্ছে বাংলার যৌবন। ওদের মুখোশ টেনে খুললেন পার্থসারথি গুহ

Must read

‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ,
আমি আজ চোর বটে।’

আইনের বেড়াজালে বাংলার ২৬ হাজার স্কুল শিক্ষককে অথৈ জলে ফেলে চাকরিখেকো কতকগুলো রক্তপিশাচ ভণ্ড আজ সমাজে এভাবেই সাধু সাজার চেষ্টা করছে। জনগণের দরবারে বারবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরেও তাদের জিঘাংসা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
৩৪ বছর ধরে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিষেবা, পরিকাঠামো, কলকারখানা লাটে তুলে বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করেছিল যে ধ্বংসাত্মক শক্তি তারা ফের কবর থেকে কাউন্ট ড্রাকুলার মতো উঠে এসেছে। ঠোঁটের কোনায় এখনও রক্ত ঝরছে। আর এমন একটা সময়ে এই নরপিশাচদের আবির্ভাব হয়েছে যখন মমতা ম্যাজিকে ভরপুর হয়ে বাংলা আবার তার হৃতগৌরব ফিরে পাচ্ছে। বাংলার কন্যাশ্রী ডানা মেলেছে জগতসভায়। লক্ষ্মীভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, রূপশ্রী থেকে অসংখ্য জনমুখী প্রকল্প সারা দেশ তথা বিশ্ব জুড়ে বন্দিত হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবল সমালোচকরাও নিজ রাজ্যে দিব্যি কপি পেস্ট মারছে এই উন্নয়ন মডেল।
অন্যদিকে, ময়ূরের পেখমের বকলমে বাংলা বিরোধীদের কাকস্য চেহারা ও কর্কশ স্বরটা বেরিয়ে আসছে বারংবার। তাও ক্ষান্ত না দিয়ে কতগুলো পেটোয়া গণমাধ্যমের হাত ধরে লাইমলাইটে আসার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চলছে। মাঝখান দিয়ে শিক্ষকদের একটা অংশ ভুল বুঝে এইসব আইনবাজের পাল্লায় পড়ে দিকভ্রান্ত হচ্ছেন।

আরও পড়ুন-সংসদীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করলেন বিদেশ সচিব

তাঁদের মনে রাখা উচিত, আগরতলা হাইকোর্টের রায়ে মানিক সরকারের ভরা বাম জমানায় ত্রিপুরায় ১০,৩২৩ জন শিক্ষকের চাকরি চলে যায়। বাতিল হয় পুরো প্যানেলটি। বাংলার চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে কালো কোট পরে এখন কুম্ভীরাশ্রু করছেন যে আইনবাবুটি তিনি কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে বাম সরকারের মুখ রক্ষা করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছিলেন। বলাবাহুল্য, আগরতলা হাইকোর্টের রায়ই বহাল রেখেছিল শীর্ষ আদালত। তার জেরে বাম সরকারের ভরাডুবিও হয় ত্রিপুরায়৷ মাথাচাড়া দেয় এখানে বামেদের পরম বন্ধু রাম। বাংলাতে ইতিমধ্যেই সিপিএম প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত। কয়েকটা মিডিয়া চ্যানেল ছাড়া কার্যত তাদের অস্তিত্ব নেই।
যদিও এরমধ্যে শিক্ষকদের একটা বড় অংশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদনে সাড়া দিয়ে মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন। কারণ, তাঁরা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন এত আইনি জটিলতার মধ্যেও রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বেতন বন্ধ করেননি এবং সর্বতোভাবে পাশে আছেন।
চাকরিহারা শিক্ষকদের নিয়ে বিরোধীদের এই অনৈতিক রাজনীতির তীব্র নিন্দা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বহিরাগতদের নিয়ে এসে চাকরিহারাদের বেপথে চালনা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। বাম হার্মাদদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বাংলার মা-মাটি-মানুষের মুক্তিকামী শত শত আন্দোলনের কাণ্ডারী বলেছেন, আন্দোলনের বিরুদ্ধে তিনি নন। তবে আন্দোলনের লক্ষ্মণরেখা মেনে চলতে হবে।
আর এই প্রসঙ্গে, মুখ্যমন্ত্রী বিঁধেছেন সেই নাটের গুরুদের যারা কার্যত এখন স্বার্থরক্ষার গুরু। তিনি স্পষ্ট করেছেন আদালতের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য রাজ্য। তাও মানবিক কারণে কারো বেতন বন্ধ করা হয়নি। গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদেরও টাকা দেওয়া হচ্ছে। তাও বিরোধীরা লাগাতার কুৎসা করে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত শিক্ষকদের অবসাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। নিজেদের সংকীর্ণ রাজনীতির বোড়ে বানিয়ে শিক্ষকদের বেপথে ঠেলে দিয়েছেন। আন্দোলনের নামে বিকাশ ভবন ও এসএসসি অফিস অবরোধ করে সেখানকার কর্মচারীদের লাগাতার ঘেরাও করে রাখছেন। গর্ভবতী মহিলারা পর্যন্ত ঘেরাও থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। এই চূড়ান্ত অমানবিকতার জন্যই শিক্ষকদের সঠিক রাস্তায় ফিরতে অনুরোধ-উপরোধ করছেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন-জামিন পেলেন নুসরত ফারিয়া

তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও আন্দোলনের নামে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা, গেট ভাঙা তথা হিংস্র পথে না যেতে শিক্ষকদের অনুরোধ করেছেন। রাজনীতির রঙে আন্দোলন যে দিশা হারায় সেকথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। রাজ্যের ১০০ দিনের বকেয়া টাকা নিয়ে দিল্লিতে আন্দোলন করার সময়ে কীভাবে তৃণমূলের মহিলা প্রতিনিধিদের চুলের মুঠি ধরে বের করে দেওয়া হয়েছিল এবং তার প্রতিবাদে রাজভবনের কাছে তৃণমূলের শান্তিপূর্ণ ধর্নার কথাও তুলে ধরেছেন তৃণমূলের তরুণ তুর্কি।
প্রসঙ্গত, আরজি কর কাণ্ডর পর অভিযোগ উঠেছিল, আন্দোলনের মঞ্চ ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে টাকা তোলার। এখানেও চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রকৃত উদ্দেশ্য মাঠে মারা যাচ্ছে।
যে বিজেপি এত বড় বড় কথা বলছে, সেই গৈরিক আমলে শিবরাজ সিং চহ্বানের মুখ্যমন্ত্রিত্বকালে মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম দুর্নীতিতে সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছিল। যেসব চুনোপুঁটিদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের আবার রহস্যমৃত্যু হয়। যথারীতি কোনও রাঘব-বোয়ালের কেশাগ্র স্পর্শ করা যায়নি।
বস্তুত, ব্যাপক কেলেঙ্কারির মতো ব্যাপক আকারের কেলেঙ্কারির কুশীলবদের দল এখানে বড় বড় বাতেলা দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে অলিখিত জোট বেঁধেছে শূন্য কলসির বামেরা।
অথচ এই বামফ্রন্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর যে কাজটি সুকৌশলে সম্পাদন করেছিল তা হল প্রাথমিক থেকে ইংরেজি তুলে দেওয়া। বস্তুত, বাংলার বেশ কতগুলো প্রজন্মকে শুধুমাত্র এই ইংরেজি শিক্ষায় অজ্ঞতার কারণে শত যোজন পিছিয়ে পড়তে হয়েছিল। সর্বত্র পিছিয়ে পড়তে পড়তে ভয়ঙ্কর হীনমন্যতায় ভুগত সেই সমাজ। অবসাদে তলিয়ে গিয়েছিল ছাত্র-যুবরা।
সিপিএমের নেতা-মন্ত্রীর ছেলেরা দামি গাড়ি চেপে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়তে যেত। বাড়িতে একগাদা টিচারের কাছে পড়ে বিলাতিবাবু হওয়ার সোপান গড়ত।
আর হতভাগ্য সাধারণ বাঙালিকে পড়তে হত ইংলিশ-বর্জিত স্কুলে। এভাবেই দায়িত্ব নিয়ে পুঁজিপতিদের ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল চালানোয় উৎসাহিত করেছিল রাজ্যের তৎকালীন কমিউনিস্ট সরকার। প্রলেতারিয়েতদের গিনিপিগ বানিয়ে উলুখাগড়া তৈরির সেই রুশ-চৈনিক মডেল এখানেও বাস্তবায়িত করেছিল বামফ্রন্ট। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতিতে ‘বুর্জোয়া’ নার্সিংহোমের রমরমা বাড়িয়েছিল সিপিএম নেতৃত্বাধীন তথাকথিত জনদরদী সরকার। সরকারি হাসপাতালগুলোকে বেহাল বানিয়ে গরিবগুর্বোদের মৃত্যুর পথ আরও সুগম করেছিল স্তালিনিস্ত সিপিএম।
আজ যখন সেই অত্যাচারী হিপোক্রিট সিপিএম চাকরিহারা শিক্ষকদের জন্য মরাকান্না কাঁদে তখন ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ ছাড়া তাদের জন্য আর কোনও উপমা কি বাছা যায়?

Latest article