সৌম্য সিংহ : স্কুলিং কনভেন্টে। অনর্গল কথা বলে যেতে পারেন ইংরেজিতে। বলতে ভালবাসেন। কিন্তু এলাকার বস্তিবাসীদের কাছে তিনি যেন একেবারে ঘরের মেয়ে। কথা বলেন একদম তাঁদের ভাষাতেই। ভাগ করে নেন সুখদুঃখ। এই গুণেই ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে বলতে গেলে অপ্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের তরুণী প্রার্থী সানা খাতুন। বললেন, ‘২০১৫-তে প্রথম নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জিতেছিলাম ১৬,০০০ ভোটে। নিজেদের রাজ্য দফতরের ওয়ার্ডেই এবারে প্রার্থীই দিতে পারেনি সিপিএম। বিজেপি প্রার্থী আমদানি করেছে অন্য ওয়ার্ড থেকে। আর কংগ্রেসের প্রার্থী এলাকায় অপরিচিত। তাই আমাকে কিছু ভাবতেই হচ্ছে না।’
বাবা ইকবাল আহমেদ। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র এবং খানাকুলের প্রাক্তন বিধায়ক। প্রয়াত সাংসদ সুলতান আহমেদের ভাই। কিছুদিন ধরেই শরীরটা ভাল যাচ্ছে না ইকবাল আহমেদের। বাবার সেবা করা এবং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের যত্ন নেওয়া, হাসিমুখে দু’টোই সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছেন সানা। ৬২ নম্বর ওয়ার্ড মধ্যকলকাতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। মিশনারিজ অফ চ্যারিটি, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে রাজ্য সিপিএমের সদর দফতর, হাজি মহম্মদ মহসিন স্কোয়্যার, রিপন স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড এবং এজেসি বোস রোডের একাংশ— সবই এই ওয়ার্ডে। এলাকার একটা বড় অংশের মানুষ বস্তিবাসী। তাই ২০১৫-তে প্রথমবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েই তাঁদের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন সানা। পানীয় জল, নিকাশি, আলো— সব সমস্যার সমাধান করেছেন দ্রুতগতিতে। রূপ বদলে দিয়েছেন হাজি মহম্মদ মহসিন স্কোয়্যারের। তৈরি করেছেন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, ফ্রি হেলথ ক্লিনিক। ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক অনগ্রসর ছেলেমেয়েদের বিয়ের জন্য বিনামূল্যে কমিউনিটি হল ব্যবহারেরও ব্যবস্থা করেছেন। তাই এলাকায় বিশেষ স্নেহের পাত্রী হয়ে উঠেছেন সানা। গোটা পরিবার ঘিরে রয়েছে রাজনীতির আবহ। স্বভাবতই সানা জানেন কীভাবে ভোট করতে হবে। সেই অভিজ্ঞতা তাঁর কাজে লাগছে।
আরও পড়ুন : KMC 111: আত্মবিশ্বাসী তৃণমূলের সন্দীপ বললেন বামেদের শিবরাত্রির সলতে নিভবে,
লড়াইয়ে আছেন সবাই। বিজেপি থেকে কংগ্রেস, বাম হয়ে এসইউসিআই পর্যন্ত। কিন্তু পুর ভোটের প্রচারের ময়দানে তাঁদের দূরবিন দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে। বেসরকারি এজেন্সি দিয়ে দু’এক জায়গায় ব্যানার, পোস্টার লাগালেও ময়দানে বিরোধী বলে কার্যত কিছু নেই। দেখা নেই খোদ প্রার্থীদেরও। বিজেপি প্রার্থী দু’একজনকে নিয়ে ঘুরলেও বাকিরা কোথাও নেই। আসন্ন পুর নির্বাচনে মধ্য কলকাতার ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের ছবিটা অনেকটা এরকমই। তাই এই ওয়ার্ডে নিজের জয় নিয়ে ভাবছেনই না তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ইন্দ্রনীল কুমার। জয় নিয়ে কতটা আত্মবিশ্বাসী? প্রশ্নে প্রথমবার ভোটের ময়দানে নামা ইন্দ্রনীল কুমার বলছেন, জয় নিয়ে আমি শতকরা একশো ভাগ নিশ্চিত। মানুষের কাছে যাচ্ছি, দারুণ সাড়া পাচ্ছি। এরই মধ্যে ওয়ার্ডের প্রায় ৯৮ ভাগ মানুষের দরজায় পৌঁছে গিয়েছি। বিরোধীদের তো কোথাও দেখতেই পাওয়া যাচ্ছে না। রীতিমতো আত্মবিশ্বাসী তাঁর গলা। মূলত ‘ডোর টু ডোর’ প্রচারকেই হাতিয়ার করে এগোচ্ছেন ইন্দ্রনীল কুমার। তাঁর হয়ে ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে এরই মধ্য রোড শো করে গিয়েছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ডোর টু ডোর’ প্রচারেও থাকছেন নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের ময়দানে নতুন হলেও রাজনীতির ময়দানে পুরনো খেলোয়াড় ইন্দ্রনীল কুমার। প্রায় এক দশক ধরে ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি। সামলেছেন নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইলেকশন এজেন্টের দায়িত্ব। মধ্য কলকাতার এই অঞ্চলের বেশ কিছু বস্তি আছে। সামান্য হলেও আছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার সমস্যা। আর কয়েকটি ছোট ছোট এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাগুলিকেই পাখির চোখ করে এগোচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। বলছিলেন, জেতার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সমস্যাগুলো মেটাতে চান তিনি। বস্তি এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিটি বস্তিতে মহিলাদের জন্য একটি করে শৌচাগার করে দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেসব প্রকল্প চালু করেছেন তার সুফল ওয়ার্ডের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হবে জিতে আসার পর তাঁর সবচেয়ে প্রথম ও প্রধান কাজ।