বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (Sheikh Mujibur Rahman) স্মৃতি মুছতে মুছতে এবার তাঁর মুক্তিযোদ্ধার তকমাও কেড়ে নিল বাংলাদেশ তদারকি ইউনূস সরকার। নতুন টাকায় বঙ্গবন্ধুর ছবি সরানোর পরে মঙ্গলবার রাতে সরকারি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীনের মতো মুক্তিযুদ্ধের সেনানিরা আর মুক্তিযোদ্ধা বলে বিবেচিত হবেন না। তাঁদের মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী সঙ্গী হিসেবে বিবেচিত করা হবে।
শেখ হাসিনা সরকারে পতনের পর থেকেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা চলছে। আওয়ামি লিগ শুধু নয়, মুক্তিমনা সবার স্মৃতিই মোছা হচ্ছে। বদলে ফেলা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা। ছাড় পাচ্ছে রাজাকাররা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হলের নাম রাখা হয়েছে ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে এক কুখ্যাত গণহত্যাকারী রাজাকারের নামে। প্রকাশ্যে ঢাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে হিজবুত তাহরিরের জঙ্গিরা। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় করে রাজাকারদের স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে প্রমাণ করতে চাইছে ইউনুস সরকার।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে পাকিস্তানি সেনা শেখ মুজিবুর রহমানকে (Sheikh Mujibur Rahman) গ্রেফতার করে। নিয়ে যায় করাচিতে। পরের নমাস তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের জেলে বন্দি ছিলেন। কলকাতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেনতাজউদ্দিন, সৈয়দ নজরুল ইসলামের মতো নেতারা। তাঁরা সকলেই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে বিবেচিত হতেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতির অনুমতি অনুসারে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করা হয়। এর ফলে মুজিবুর রহমান-সহ প্রায় চারশো জাতীয় পরিষদের সদস্য ও এমপিএ বীর মুক্তিযোদ্ধা থেকে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসাবে গণ্য হবেন। নয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অস্ত্র হাতে ময়দানে যুদ্ধ করেছেন যাঁরা তাঁরাই শুধু মুক্তিযোদ্ধা বলে গণ্য হবেন। সেই অনুযায়ী বিএনপি-র প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানও এখন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন তৎকালীন ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডার।
আরও পড়ুন- মারণ ছত্রাক ছড়ানোর অভিযোগ! আমেরিকায় গ্রেফতার চিনা পডুয়ারা
ইউনুসের সরকার মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছে।
যেসব বাংলাদেশি মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে থেকেও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখেন এবং বাংলাদেশের যেসব নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত, মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যুক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ, যাঁরা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক।
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, তালিকাটি এমনভাবে সংশোধন করা হয়েছে, যাতে প্রথম তালিকায় প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস ও তাঁর মতো অনেকের নাম মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সমতুল করে ঘোষণা করা যায়। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের সময় ইউনূস বিদেশে লেখাপড়া করছিলেন। তিনি বিদেশে অর্থ সংগ্রহের কাজ করেছেন বলে দাবি করে ঘনিষ্ঠ মহল। অথচ মুক্তিযুদ্ধের কোনও কিছুর সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগ পাওয়া যায়নি।
গত বছর ৫ অগাস্টের পর থেকে বাংলাদেশে শেখ মুজিবর রহমানের অবদানকে অস্বীকার, তাঁর স্মৃতিকে মুছে ফেলার যে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে তার ধারাবাহিকতায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকাও সংশোধন করে ফেলা হল।
অনেকেই মনে করছেন, নয়া মানদণ্ড অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর তালিকায় বহু নতুন নাম অম্তর্ভুক্ত করা হবে। তাঁদের অন্যতম হল মহম্মদ ইউনুস। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে ছিলেন না। এমনকী দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও স্বাধীনতা যুদ্ধ বিষয়ক কোনও কিছুর সঙ্গেই তাঁর সম্পৃক্তকার প্রমাণ মেলেনি। এমন ঢাকার শহিদ মিনার, সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধও প্রথম পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর। এই সব বিষয় আলোচনায় আসার পর তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে দাবি করা হতে থাকে তিনি সেই সময় পড়াশুনোর জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন।
ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ২০, ৫০ এবং ১,০০০ টাকার নতুন নোট থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মুজিবের পরিবর্তে এক হাজার টাকার নোটে শাহবাগ স্মৃতি সৌধ, জাতীয় সংসদ রয়েছে। ৫০ টাকার নতুন নোটে দেড়শো বছর পুরনো আহসান মঞ্জিলের ছবি রয়েছে। নোটের উল্টো দিকে ছাপানো হয়েছে জয়নুল আবেদিনের তৈরি ভাস্কর্য সংগ্রামের ছবি। আর ২০ টাকার নোটে একদিকে রয়েছে দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির এবং অন্যদিকে নওগাঁর বৌদ্ধ বিহার। এই ভাবেই বাংলাদেশ থেকে মুজিবের স্মৃতি মুছে ফেলছে তদারকি সরকার।