প্রতিবেদন: ভারত সরকার ২০২৭ সালে দেশব্যাপী জনগণনা পরিচালনা করবে এবং প্রথমবারের মতো এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জাতিগত গণনাও অন্তর্ভুক্ত হবে। বুধবার প্রকাশিত এক সরকারি ঘোষণায় একথা জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, জনগণনা প্রক্রিয়াটি দুটি ধাপে পরিচালিত হবে এবং গণনার রেফারেন্স তারিখ হবে ১ মার্চ, ২০২৭। তবে, আবহাওয়াগত ও তুষারপাতের কারণে লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে জনগণনা আগে পরিচালিত হবে, যার রেফারেন্স তারিখ ১ অক্টোবর, ২০২৬ নির্ধারিত হয়েছে। জাতিগত গণনা-সহ ২০২৭ সালের জনগণনা পরিচালনার আনুষ্ঠানিক উদ্দেশ্য ২০২৫ সালের ১৬ জুন ইন্ডিয়া গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা।
এদিকে এই প্রথমবার জাতীয় জনগণনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে জাতিগণনা করা হবে, যা প্রতি দশ বছর অন্তর সেন্সাস অ্যাক্ট, ১৯৪৮ এবং সেন্সাস রুলস, ১৯৯০-এর অধীনে পরিচালিত হবে। নীতি পরিকল্পনা এবং সরকারি কল্যাণমূলক কর্মসূচিতে সহায়তা করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক জাতিগত জনগণনার জন্য বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই দাবি করেছিল।
আরও পড়ুন-কর্নাটকে ৮০ বছরের বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে খুন
২০২১ সালে জনগণনা হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড অতিমারির কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। এখন এই নতুন ঘোষণার সাথে ভারত ২০২৭ সালে সার্বিকভাবে জনসংখ্যা এবং জাতিগত গণনার কাজ হাতে নেবে, যা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থগিত থাকা একটি প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করবে। ২০২৭ সালের জনগণনা সম্পন্ন হওয়ার পর নতুন জনসংখ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ডিলিমিটেশন লোকসভা এবং বিধানসভা কেন্দ্রগুলির সীমানা পুনর্গঠনে অনুসৃত হবে। সর্বশেষ জনসংখ্যার তথ্যের ভিত্তিতে সংসদীয় এবং বিধানসভা কেন্দ্রের সংখ্যা ও সীমানা নির্ধারিত হবে। সর্বশেষ জনসংখ্যা গণনা ২০১১ সালে পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে ২০১০ সালে বাড়ি তালিকাভুক্তি এবং ২০১১ সালের শুরুতে চূড়ান্ত গণনা করা হয়েছিল। ২০১১ সালের সর্বশেষ জনগণনায় ভারতের জনসংখ্যা ১২১ কোটিরও বেশি রেকর্ড করা হয়েছিল, যা ১৭.৭ শতাংশ বৃদ্ধির হার প্রতিফলিত করে। লোকসভার আসন সংখ্যা ১৯৭১ সালের জনগণনা থেকে ৫৪৩ রয়েছে, যদিও জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ২০০১ সালের জনগণনার পর নির্বাচনী এলাকার সীমানা এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা আপডেট করা হলেও মোট আসনের সংখ্যা পরিবর্তিত হয়নি। এখন ২০২৭ সালে জনগণনার পর ডিলিমিটেশনের ভিত্তিতে সংসদীয় আসনসংখ্যা নতুনভাবে বাড়তে পারে।
গত কয়েক দশকে উত্তর ভারতের জনসংখ্যা দক্ষিণ ভারতের চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকী যদি মোট আসনের সংখ্যা বাড়ানো হয়— যেমন ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ৮৪৮ পর্যন্ত— তবুও উচ্চ জনসংখ্যার কারণে উত্তর নতুন আসনগুলির একটি বড় অংশ লাভ করবে। সমালোচকরা যুক্তি দেন যে এটি জাতীয় নীতি এবং সংস্থানগুলিকে আরও জনবহুল উত্তরের পক্ষে স্থানান্তরিত করতে পারে, যদিও দক্ষিণ রাজ্যগুলি জাতীয় অর্থনীতিতে বেশি অবদান রাখে। উদাহরণস্বরূপ, তেলেঙ্গানার ভারতের জনসংখ্যার মাত্র ২.৮% কিন্তু জাতীয় জিডিপিতে ৫.২% অবদান রাখে। এই পরিস্থিতিতে দাবি উঠেছে, শুধু জনসংখ্যা নয়, অর্থনৈতিক অবদান এবং উন্নয়নও আসনসংখ্যা নির্ধারণে বিবেচনা করা উচিত। নতুন সংসদ ভবনে ৮৮৮ জন সাংসদের বসার ব্যবস্থা আছে। তবে, এই ধরনের পরিবর্তনের আগে সংবিধান সংশোধন করারও প্রয়োজন হবে, কারণ লোকসভার আসনের বর্তমান সীমা ৫৫০।