প্রতিবেদন: বেঙ্গালুরুতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করল কর্নাটক হাইকোর্ট। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমারের বিরুদ্ধে এফআইআর করলেন স্নেহময়ী কৃষ্ণ নামে এক সমাজকর্মী। এফআইআর করা হয়েছে কর্নাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও। অবশ্য ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন উপমুখ্যমন্ত্রী। সরকারের রিপোর্ট তলব করেছে হাইকোর্ট। কিন্তু সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, পুলিশ পরামর্শ দিয়েছিল, বুধবার নয়, রবিবার আয়োজন করা হোক বিজয়োৎসবের। কিন্তু পুলিশের কথায় কান দেয়নি সরকার। উলটে নিজেদের দোষ ঢাকতে বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনারকে সাসপেন্ড করল সিদ্দারামাইয়ার সরকার। লক্ষণীয়, বুধবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে কোহলিদের সেলিব্রেশন দেখতে এসে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ১২ জন। জখম হন অন্তত ৫০ জন।
আরও পড়ুন-বর্ধমানে বাগদি সম্প্রদায়ের নতুন অফিস
বুধবারের এই মর্মান্তিক ঘটনার ব্যাপারে উঠে আসছে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তা হল দুর্ঘটনার ঠিক পরে আহতদের প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি আদৌ। আশ্চর্যজনকভাবে তাঁদের স্টেডিয়ামের বাইরে থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভেতরে। কালক্ষেপ করা হয়েছে অযথা। ফলে দেরি হয়েছে চিকিৎসায়। কেন এমন হল? দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সই ছিল স্টেডিয়ামের ভেতরে। রাস্তায় পড়ে থাকা জখমদের হাসপাতালে পাঠাতে তাই সেই অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ভেতরে। কিন্তু মাত্র দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সে জায়গা হয়নি সকলের। তাই কাঁধে করে জখমদের আবার রাস্তায় নিয়ে আসেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কিন্তু সেলিব্রেশনের জন্য রাস্তা বন্ধ থাকায় সেখানেও পাওয়া যায়নি কোনও যানবাহন। কাঁধে করে জখমদের ৫০০ মিটার নিয়ে যাওয়ার পরে কোনওরকমে গাড়ি মেলে। আসলে স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৩৩ হাজার হলেও, প্রবেশের চেষ্টা করেছিল প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ। আরও একটি উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। কর্নাটক সরকারকে পুলিশ পরামর্শ দিয়েছিল, ফাইনালে জেতার পরদিনই যাতে বিজয়োৎসব না করা হয়। কারণ, তখন মানুষের উচ্ছ্বাস থাকে চরমে। তাছাড়া বুধবার কাজের দিনে বিজয়োৎসব করলে স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারির কারণে রাস্তাঘাটে চাপ থাকবে ভিড়ের। ফলে বিঘ্নিত হতে পারে সাধারণের নিরাপত্তা। সরকারের কাছে পুলিশের অনুরোধ ছিল সেলিব্রেশন হোক রবিবার বা অন্য কোনও ছুটির দিনে। কিন্তু পুলিশের কথায় কান দেয়নি সরকার। এখানেই শেষ নয়, টানা দু’দিন-দু’রাত ধরে একটানা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির ফলে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন পুলিশকর্মীরা। ফলে ওই বিশাল উপচে পড়া ভিড় সামলানোর মতো এনার্জি আর ছিল না পুলিশের। তাছাড়া, ভিড়ের তুলনায় অনেক কম ছিল পুলিশকর্মীর সংখ্যাও। স্টেডিয়ামে প্রবেশের পথও ছিল সংকীর্ণ। বৃহস্পতিবার দুপুরে কর্নাটক হাইকোর্টে শুরু হয় স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানি। সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, আমরা কোনও দায় চাপানোর কথা বলতে চাই না। যা ঘটেছিল, আদালতে তুলে ধরতে চাই সেটাই। কিন্তু এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পদপিষ্ট হয়ে ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করলেও কোনও ব্যক্তি, সংগঠন বা সংস্থার বিরুদ্ধে কেন এফআইআর করল না বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশ, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।