১৭ বছরের পরিশ্রমের ফল ভূস্বর্গে চেনাব সেতু, নেপথ্যে এই জিওটেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ

২০২১ সালে সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা জিওটেকনিক্যাল গবেষকের সম্মান পেয়েছিলেন। ২০২২ সালে স্টেম অব ইন্ডিয়ার শীর্ষ ৭৫ মহিলার তালিকায় নাম ছিল মাধবী লাথার।

Must read

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। শুক্রবার ভুস্বর্গে বিশ্বের উচ্চতম ব্রিজ চেনাব সেতুর (Chenab Bridge) উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চেনাব নদী থেকে ৩৫৯ মিটার উঁচু এই সেতু আইফেল টাওয়ারের থেকেও ৩৫ মিটার বেশি উঁচু। দিল্লির কুতুব মিনারের তুলনায় এই সেতুর উচ্চতা পাঁচগুণ বেশি। কাটরা এবং কাজিগুন্ডের মধ্যে দুটি পাহাড়কে যোগ করেছে চেনাব সেতু। এক কথায় বলা যায় আধুনিক প্রযুক্তির অপূর্ব নির্দশন এই সেতু। এই ‘বিস্ময় স্থাপত্যে’র নির্মাণকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এক মহিলা ইঞ্জিনিয়ার তথা জিওটেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ। তিনি রক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ জি মাধবী লাথা।

আরও পড়ুন-১৭ বছরের পরিশ্রমের ফল ভূস্বর্গে চেনাব সেতু, নেপথ্যে এই জিওটেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের অধ্যাপক মাধবী লাথার ১৭ বছরের শ্রমের নির্দশন এই চেনাব সেতু। ১২০ বছর ধরে টিকে থাকার জন্য উপযুক্ত করা হয়েছে এর ডিজাইন। চেনাব সেতুটি বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল এবং খিলান সেতু, যার ডকের উচ্চতা নদীর তলদেশ থেকে ৩৫৯ মিটার। ১,৩১৫ মিটার লম্বা ইস্পাতের খিলান এবং কংক্রিটের এই কাঠামোর মধ্যে রয়েছে ৫৩০ মিটার লম্বা একটি অ্যাপ্রোচ ব্রিজ এবং ৭৮৫ মিটার লম্বা একটি ডেক আর্চ ব্রিজ। ২০০২ সালে এই প্রকল্পে সিলমোহর পড়ার পর ২০০৫ সালে এই ব্রিজ তৈরির প্ল্যানিংয়ের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয় সেতুর মূল কাজ। অবশেষে নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২২ সালে। ২০২৪ সাল থেকে চেনাব সেতুর উপরে রেলের ট্রায়াল রান চলতে থাকে। অবশেষে এই বছর জানুয়ারি মাসে সফলভাবে এই সেতুর উপরে ট্রায়াল রান শেষ করে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস।

আরও পড়ুন-বিধানসভা অধিবেশনের শুরুতে পহেলগাঁও হামলায় নিহতদের প্রতি শোকজ্ঞাপন

বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা ও অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই সেতু দাঁড় করানো হয়েছে। গোটা টিমকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাধবী লাথা। কৌতূহল থেকেই যায় কিভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুললেন তিনি। প্রাথমিকভাবে দুই পাহাড়ের পাথর পরীক্ষা করে দেখা হয় কোথায় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে নির্মাণ। সেখানেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় মাধবীর টিম। ব্রিজের ভিত শক্তিশালী করার জন্য পাথরের টুকরো এবং স্টিলের রড দিয়ে সিমেন্ট গ্রাউটিং করা হয়। হাওয়ার প্রবল গতি সহ্য করার মত বড় এবং গভীর ভিত নির্মাণ করা হয়। এই সেতু ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ট্রেনের গতি সহ্য করতে পারবে। শুধু তাই নয়, রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে। রিয়াসি জেলার বাক্কাল এবং কৌরির মধ্যে নির্মিত, সেতুটি জোন-ভি-তে পড়ে।

আরও পড়ুন-প্রখ্যাত পরিচালক পার্থ ঘোষ প্রয়াত

মাধবী লাথা সেতু নির্মাণ নিয়ে জানিয়েছেন সবরকম ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে ডিজাইনে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হয়েছে। মূল প্রজেক্টে ভিতগুলো যেখানে থাকার কথা ছিল সেখান থেকে সরানো হয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, ঝুঁকিপূর্ণ ডিজাইন করা যায় না। মাধবী লাথা বর্তমানে আইআইএসসির হায়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ গ্রেড (এইচএজি) অধ্যাপিকা। তিনি ১৯৯২ সালে জওহরলাল নেহরু টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি.টেক করেন। ডিসটিংশনের সঙ্গে ফার্স্টক্লাস পান। এরপর ওয়ারঙ্গলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে এম.টেক পড়ুয়া হিসেবে গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। ২০০০ সালে আইআইটি মাদ্রাজ থেকে জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডক্টরেট করেন তিনি। ২০২১ সালে সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা জিওটেকনিক্যাল গবেষকের সম্মান পেয়েছিলেন। ২০২২ সালে স্টেম অব ইন্ডিয়ার শীর্ষ ৭৫ মহিলার তালিকায় নাম ছিল মাধবী লাথার।

Latest article