আন্তঃধর্মীয় বিবাহে সুপ্রিম কোর্টের রায়, প্রাপ্তবয়স্কদের স্বেচ্ছা-সহাবস্থানের অধিকারে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নয়

শীর্ষ আদালতের এই রায় ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, ধর্মীয় সহাবস্থান এবং আন্তঃধর্মীয় বিবাহের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করল।

Must read

প্রতিবেদন : ধর্মান্তরণ-সহ একাধিক বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে যুগান্তকারী রায় দিল দেশের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় একসঙ্গে বসবাস করতে সম্মত হন, তবে তাঁদের ধর্ম ভিন্ন হলেও রাষ্ট্র তাতে আপত্তি জানাতে বা নাক গলাতে পারে না। শীর্ষ আদালতের এই রায় ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, ধর্মীয় সহাবস্থান এবং আন্তঃধর্মীয় বিবাহের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করল।

আরও পড়ুন-রেলের নতুন ব্রিজ নির্মাণে সময় লাগায় যানজট নিয়ে বৈঠক

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগরত্না এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ সম্প্রতি একটি মুসলিম পুরুষের জামিন মঞ্জুর করার সময় এই নির্দেশ দিয়েছে। ওই ব্যক্তি প্রায় ছ’মাস ধরে জেলে ছিলেন কারণ তিনি মুসলিম হয়ে একজন হিন্দু মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন বলে তাঁকে অভিযুক্ত করে রাজ্যের বিজেপি সরকার। উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই ব্যক্তির জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট অভিযুক্তর আপিল মঞ্জুর করে এই বিষয়ে স্পষ্ট আদেশ দেয়। সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে, প্রতিবাদী আবেদনকারী এবং তাঁর স্ত্রীর একসাথে বসবাসের বিষয়ে রাষ্ট্রের কোনও আপত্তি থাকতে পারে না, যেহেতু তাঁরা তাদের নিজেদের পিতা-মাতা এবং পরিবারের সম্মতি ও ইচ্ছানুযায়ী বিবাহ করেছেন। এই মন্তব্যের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের একসাথে বসবাস করার অধিকারকে ধর্মীয় পার্থক্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কর্তৃক খর্ব করা যাবে না। শীর্ষ আদালত আরও বলেছে যে, চলমান ফৌজদারি কার্যক্রম দম্পতির স্বেচ্ছায় একসাথে বসবাসের পথে বাধা হবে না। এই রায়টি এক মুসলিম পুরুষের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে, যিনি এক হিন্দু মহিলাকে বিবাহ করার পর প্রায় ছয়মাস জেলে ছিলেন। আবেদনকারীর আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন যে, কিছু ব্যক্তি এবং সংগঠন আন্তঃধর্মীয় বিবাহে আপত্তি জানানোর পর এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছিল। এফআইআর দায়ের করার পর, আবেদনকারীকে উত্তরাখণ্ড ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন, ২০১৮ এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ২০২৩-এর বিধানের অধীনে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি তাঁর ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে প্রতারণামূলকভাবে হিন্দু রীতি অনুযায়ী মহিলাকে বিবাহ করেছেন। আবেদনকারীর বক্তব্য, বিবাহটি উভয় পরিবারের পূর্ণ সম্মতি ও উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছিল। এমনকী, বিয়ের পরের দিনই ওই ব্যক্তি একটি হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে তিনি তাঁর স্ত্রীকে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করবেন না এবং তাঁর স্ত্রী নিজের ধর্ম পালনে সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবেন। এরপরেও তাঁকে হেনস্থা করেছে রাজ্য প্রশাসন। বর্তমান বিজেপি জমানায় প্রায়শই দেখা যায় এধরনের পরিস্থিতিতে কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আন্তঃধর্মীয় বিবাহকে ‘লাভ জিহাদ’ বা প্রতারণার অভিযোগ এনে আইনি জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। এমনকী যদি বিবাহ স্বেচ্ছায় এবং সম্মতিক্রমে হয় তারপরেও হেনস্থা করা হচ্ছে। এই আবহে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় আন্তঃধর্মীয় বিবাহ এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের পছন্দ অনুযায়ী জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার এবং একসাথে বসবাস করার মৌলিক অধিকারকে শক্তিশালী করবে। পাশাপাশি এই রায় আন্তঃধর্মীয় বিবাহকে ঘিরে সৃষ্ট বিতর্ক এবং সামাজিক চাপের মুখে একটি আইনি সুরক্ষা প্রদান করবে। এই রায় স্পষ্ট করেছে যে, যদি বিবাহ স্বেচ্ছায় এবং সম্মতিক্রমে হয়, তবে তা রাষ্ট্র বা তৃতীয় পক্ষের আপত্তির কারণে অবৈধ হতে পারে না।

Latest article