প্রতিবেদন: আমেদাবাদের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পরে এখন তদন্তকারীদের পাখির চোখ ব্ল্যাক বক্সের দিকে। এই ব্ল্যাক বক্সই এখন দুর্ঘটনার উৎস সন্ধানে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। বিমান দুর্ঘটনার পিছনে পাইলটদের কোনও গাফিলতি ছিল কি না তার সন্ধান দেবে এই ব্ল্যাক বক্সই (black box)।
ব্ল্যাক বক্স কী?
ব্ল্যাক বক্স (black box) হল একটি যন্ত্র যাতে বিমান ওড়ার সময় থেকে অবতরণ পর্যন্ত সমস্ত ঘটনা রেকর্ড করা থাকে। এটিকে বিমানের ‘ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডারও’ বলা হয়। ১৯৫৩-৫৪ সালে বিমান দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় একটি ডিভাইস তৈরি করার কথা ভেবেছিলেন প্রযুক্তিবিদরা। যাতে সেটি বিমান দুর্ঘটনার পর তার কারণ সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে। এটিকে বিমানের ‘ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডারও’ বলা হয়। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ব্ল্যাক বক্স সাধারণত বিমানের পিছনের দিকে রাখা হয়। এটি টাইটেনিয়াম ধাতু দিয়ে তৈরি। একটি টাইটেনিয়াম বাক্সের মধ্যে সুরক্ষিত অবস্থায় রাখা থাকে সেটি। দুর্ঘটনা থেকে বিমানকে বাঁচাতেও সাহায্য করতে পারে ব্ল্যাক বক্স। প্রথমদিকে এটি লাল রঙের ছিল এবং ‘রেড এগ’ নামে পরিচিত ছিল। ডিভাইসের ভিতরের দেয়ালগুলি কালো রঙের ছিল, তাই পরবর্তীতে এটি ‘ব্ল্যাক বক্স’ নামে পরিচিতি পায়। ব্ল্যাক বক্সের মধ্যে দুটি আলাদা বাক্স থাকে। প্রথমত ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার। এই ব্ল্যাক বক্সে ফ্লাইটের দিকনির্দেশ, উচ্চতা, জ্বালানি, গতি, টার্বুল্যান্স ও কেবিনের ভিতরের নানা তথ্য থাকে। প্রায় ২৫ ঘণ্টা ধরে ৪৪ ধরনের বিভিন্ন ডেটা রেকর্ড করতে পারে এটি। এছাড়া ব্ল্যাক বক্সের অন্য অংশটি হল ককপিট ভয়েস রেকর্ডার। এই বাক্সটি শেষ দু’ঘণ্টার মধ্যে বিমানের মধ্যে ঘটে যাওয়া শব্দ রেকর্ড করে। এটি ইঞ্জিন, ইমার্জেন্সি অ্যালার্ম, কেবিন এবং ককপিটের শব্দ রেকর্ড করে যাতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটার আগে বিমানের অবস্থার পূর্বাভাস পাওয়া যায়। মূল্যবান ও শক্তিশালী ধাতু দিয়ে তৈরি ব্ল্যাক বক্স কোনও বিদ্যুৎ ছাড়াই টানা ৩০ দিন কাজ করতে পারে। এটি প্রবল উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে সক্ষম। দুর্ঘটনার পর ব্ল্যাক বক্সটি কোথাও হারিয়ে গেলে প্রায় ৩০ দিন ধরে ভাইব্রেশনের সঙ্গে জোরে আওয়াজ করতে পারে। প্রায় ২-৩ কিলোমিটার দূর থেকে তদন্তকারীরা এই ভয়েস শনাক্ত করতে পারবেন। সমুদ্রপৃষ্ঠের ১৪ হাজার ফুট গভীরতা থেকেও এটি তরঙ্গ নির্গত করতে পারে। যদিও ব্ল্যাক বক্স বিমান দুর্ঘটনার কারণ পুরোপুরি জানাতে পারে না। তা সত্ত্বেও বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে এটি নিঃসন্দেহে অতি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
আরও পড়ুন-ভারতে কবে কোথায় বড় বিমান দুর্ঘটনা