প্রতিবেদন: বৃহস্পতিবার আমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ভেঙে প্রায় তিনশোর কাছাকাছি মৃত্যুর ঘটনাই সম্ভবত ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিমান বিমা-নিষ্পত্তির বিষয় হতে চলেছে। শিল্প বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, এই দুর্ঘটনার মোট দায় ২১১ মিলিয়ন ডলার থেকে ২৮০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২,৪০০ কোটি টাকা) হতে পারে। লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে আমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে বিমানটির যাত্রা শুরু হয়। উড়ানের মাত্র ৩৩ সেকেন্ডের মধ্যে আবাসিক এলাকায় ভেঙে পড়ে ড্রিমলাইনার। যাত্রী এবং ক্রু সদস্য মিলিয়ে ২৪১ জন ছাড়াও ঘটনাস্থলের বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বিমানের যাত্রীদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ নাগরিক, সাতজন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয় যাত্রী ছিলেন। আন্তর্জাতিক বিমান আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে এই বিস্তৃত জনসংখ্যাগত পরিসর গুরুত্বপূর্ণ হবে।
আরও পড়ুন-কালীগঞ্জে আলিফার প্রচারে দেবাংশু, মোশারফ, বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি বাংলা মানে না
প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ, বিমানের বয়স, অবস্থা এবং কনফিগারেশনের মতো মূল্যায়ন করে ৮০ মিলিয়ন ডলার থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ক্ষতির অঙ্ক অনুমান করা হচ্ছে। প্রুডেন্ট ইন্স্যুরেন্স ব্রোকার্স-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিতেশ গিরোত্রা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, যেহেতু বিমানটি একটি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টে ভেঙে পড়েছে তাই অপারেটরের উপর তৃতীয় পক্ষের সম্পত্তির ক্ষতির দায় রয়েছে। এছাড়াও যে আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেখানেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বিমানসংস্থা মৃতদের জন্য ভারতীয় মুদ্রায় ১ কোটি অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করলেও যাত্রীদের চূড়ান্ত ক্ষতিপূরণ ১৯৯৯ সালের মন্ট্রিল কনভেনশন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। মৃত যাত্রীপ্রতি ক্ষতিপূরণ ১,২৮,৮২১ স্পেশাল ড্রইং রাইটস বা প্রায় ১৭১,০০০ ডলার (প্রায় ১.৪৭ কোটি টাকা) পর্যন্ত হতে পারে। সমস্ত ধরনের দাবি অন্তর্ভুক্ত করে এয়ার ইন্ডিয়ার মোট ক্ষতি ২১১ মিলিয়ন ডলার থেকে ২৮০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে অনুমান করা হয়েছে।
তবে এই দুর্ঘটনার ব্যাপকতা ও ভয়াবহ আকারের ধ্বংসযজ্ঞের কারণে বিমানসংস্থার মোট আর্থিক দায় কত হবে তা নির্ধারণ করা সময়সাপেক্ষ। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থার মতো এয়ার ইন্ডিয়া বিমা কভারেজের জন্য কোনও একক ভারতীয় বিমাকারীর উপর নির্ভর করে না। পরিবর্তে, কভারেজ বিশ্বব্যাপী বিমা বাজারের মাধ্যমে পুনঃবিমাকারীদের একটি নেটওয়ার্ক জুড়ে ছড়িয়ে থাকে। ইন্স্যুরেন্স ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি নরেন্দ্র ভান্দেরওয়াল বলেছেন, কোনও একক বিমাকারী পুরো ঝুঁকি বহন করে না— কভারেজ বিশ্বব্যাপী পুনঃবিমাকারীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিতরণ করা হয়, যেখানে শেয়ারগুলি ১.৫% থেকে ২% পর্যন্ত ছোট এবং একটি প্রধান পুনঃবিমাকারী সাধারণত ১০% থেকে ১৫% নেয়। এয়ার ইন্ডিয়ার মতো বড় বিমান সংস্থাগুলির জন্য বিমান বিমা প্রোগ্রামগুলি একটি ফ্লিট ভিত্তিতে সাজানো হয় এবং লন্ডন ও নিউইয়র্কের মতো আন্তর্জাতিক বাজারে পুনঃবিমা করা হয়। এই মডেলটি নিশ্চিত করে যে, ভয়াবহ দুর্যোগজনিত ঘটনাগুলোর আর্থিক প্রভাব একটি বিস্তৃত আন্তর্জাতিক ভিত্তির উপর ভাগ হয়ে যায়। টাটা গ্রুপ এয়ার ইন্ডিয়া অধিগ্রহণের পর, বিমা সংগ্রহের দায়িত্ব সরকারি টেন্ডার থেকে ব্যক্তিগত ব্যবস্থায় স্থানান্তরিত হয়েছে। এর আগে পাবলিক-সেক্টর বিমাকারীরা বার্ষিক টেন্ডারে প্রতিযোগিতা করত। এখন টাটা গ্রুপের ঝুঁকি এবং ব্যয়ের মূল্যায়নের ভিত্তিতে বিমাকারী
এবং পুনঃবিমাকারী নিয়োগের স্বাধীনতা রয়েছে।