হাতছানি দেয় শেরগাঁও

পাহাড়ি গ্রাম শেরগাঁও। অরুণাচল প্রদেশের পশ্চিম কামেং জেলায় অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মনোরম পাহাড়, ঘন অরণ্য এবং ঐতিহ্যবাহী মনপা জনজাতির সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। স্থানীয় খাবার এবং সংস্কৃতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। বর্ষার মরশুমে হয়ে ওঠে স্বর্গরাজ্য। সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

অরুণাচল প্রদেশের পশ্চিম কামেং জেলার একটি সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম শেরগাঁও (Shergaon)। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মনোরম পাহাড়, ঘন অরণ্য এবং ঐতিহ্যবাহী মনপা জনজাতির সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। মনপা জনগোষ্ঠী মূলত তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। এখানে বেশ কয়েকটি মনাস্ট্রি রয়েছে, যেখানে শান্তি এবং আধ্যাত্মিকতার পরিবেশ অনুভব করা যায়। গ্রামটি আপেল, আখরোট এবং বিভিন্ন প্রকারের অর্গানিক ফলের জন্য বিখ্যাত।
শেরগাঁও (Shergaon) বমডিলা ও তাওয়াং যাওয়ার পথে অবস্থিত। পর্যটকদের কাছে একটি আদর্শ বিশ্রামস্থল। এখানকার স্থানীয় খাবার এবং সংস্কৃতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। আবহাওয়া সারা বছর মনোরম থাকে। বর্ষার মরশুমে ঝরনা এবং সবুজ বনানী মিলিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য হয়ে ওঠে এক স্বর্গরাজ্য। বনাঞ্চল হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কিছু জায়গায় ভ্রমণ করা কঠিন হতে পারে। একই সঙ্গে, কিছু জায়গায় ভূমিধসের সম্ভবনাও থাকে। যাঁরা প্রকৃতি এবং শান্ত পরিবেশ ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য বর্ষাকাল শেরগাঁও ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হতে পারে। এইসময় পর্যটকের সংখ্যা সাধারণত কম থাকে, তাই যাঁরা ভিড় এড়িয়ে শান্ত পরিবেশে থাকতে পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য এটা একটা উপভোগ্য সময়। তবে ভ্রমণের আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নেওয়া উচিত। কারণ ভারী বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটে সমস্যা হতে পারে। হালকা ও সহজে শুকনো হয় এমন পোশাক এবং বৃষ্টি থেকে বাঁচতে রেনকোট বা ছাতা সঙ্গে রাখা ভাল। বৃষ্টির জন্য উপযুক্ত জলরোধী জুতা সঙ্গে রাখা আবশ্যক, যা হাঁটার জন্য আরামদায়ক হবে।
শেরগাঁও (Shergaon) এবং আশেপাশের এলাকায় আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে অন্যতম চস্কোরং জলপ্রপাত। এটা শেরগাঁওয়ের এক গুপ্তধনের মতো। কারণ জলপ্রপাতটি প্রধান রাস্তা থেকে বহু দূরে। ঘন বনভূমির ভেতরে অবস্থিত। বাইরের জগতের কাছে দৃশ্যমান নয়। পৌঁছাতে একটু হাঁটতে হয়। যদিও সেটা খুব একটা কঠিন নয়। জলপ্রপাতের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে হয়। চারপাশে উড়ে বেড়ায় ছোট ছোট পাখি। মাঝেমধ্যে দোল খায় গাছের ডালে। উঁকি দিয়ে যায় সূর্য। এক ভিন্ন জগতের অনুভুতি হয়। জলপ্রপাতের পথে হেঁটে যাওয়ার সময় সুন্দর কাঠের সেতু, ঝরনা এবং ফলের বাগানের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।

আরও পড়ুন-মিরাকলের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কীই-বা করার আছে ওদের!

শেরগাঁওয়ে দুটি মঠ রয়েছে। প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো পাহাড়ের উপর জেংবু গোম্পা। অন্যটি জেংবু পাহাড়ের পাদদেশে। দ্বিতীয়টি সাম্প্রতিক সংযোজন, যেখানে স্থানীয়রা মূলত ভিড় জমান। জেংবু গোম্পার চারপাশের পরিবেশ অরুণাচলের মধ্যে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ। পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত মঠটি গ্রামবাসীদের ভিড়ে মুখরিত থাকে। আছে বুদ্ধ পার্ক। একটি নতুন আকর্ষণ। পর্যটক বা ট্যাক্সি ড্রাইভারদের কাছে এখনও খুব একটা পরিচিত নয়। এখানকার অসাধারণ শিল্পকর্ম দেখে মন ভাল হয়ে যাবে। পাহাড়ের চূড়ায় অলঙ্কৃত প্ল্যাটফর্মে একটি দুর্দান্ত সোনালি বুদ্ধমূর্তি রয়েছে, যার চারপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্তূপ এবং বিভিন্ন রঙের প্রার্থনা পতাকা। উপত্যকার দৃশ্যও অসাধারণ। এটা দেশ জুড়ে দেখা সবচেয়ে সুন্দর পার্কগুলোর মধ্যে একটা। এখনও অনেকের কাছেই অপরিচিত। ঠিক শেরগাঁওয়ে নয়, জায়গাটা অনতিদূরে মুশাকসিং গ্রামে অবস্থিত। জিগাঁও পর্যন্ত গাড়িতে যেতে হবে এবং তারপর সেতু পার হয়ে পায়ে হেঁটে ডানদিকে যেতে হবে। প্রায় ২০ মিনিটের চড়াই পথ।
এখানকার ঈগলনেস্ট বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পাখিপ্রেমীদের জন্য একটি চমৎকার জায়গা। যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও গাছের দেখা মেলে। সাংতি উপত্যকার প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই মনোরম এবং উপত্যকাটি শেরগাঁও থেকে খুব বেশি দূরে নয়। বোমডিলা মঠ একটি বিখ্যাত মঠ, যা শেরগাঁও থেকে সহজেই যাওয়া যায়।
শেরগাঁওয়ের সর্বত্রই পর্যটকদের হাসি আর উষ্ণতার মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। মনে হয় যেন নিজের ঘর। স্থানীয়রা এতটাই আন্তরিক। তাই শেরগাঁও বেড়াতে গিয়ে শুধুমাত্র না ঘুরে বেড়িয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলতে হবে। চেষ্টা করতে হবে মিশে যেতে। মনের মধ্যে জন্ম নেবে আনন্দ। হাতছানি দেয় শেরগাঁও? সপরিবার ঘুরে আসুন।
কীভাবে যাবেন?
গুয়াহাটি গিয়ে, সেখান থেকে শেরগাঁও যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি নিতে পারেন। নিকটতম বিমানবন্দর হল তেজপুর। প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তেজপুর বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে যেতে পারেন। এছাড়াও, আসান রেলওয়ে স্টেশন থেকে শেরগাঁও পর্যন্ত ট্যাক্সি পাওয়া যায়। দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। যদি গুয়াহাটি থেকে যেতে চান, তাহলে বাইহাটা চারিয়ালি, মঙ্গলদোই, উদালগুড়ি, ভৈরবকুণ্ড, এবং কালাকটাং হয়ে শেরগাঁও পৌঁছাতে পারেন। এই পুরো যাত্রাটি প্রায় ৬.৫ ঘন্টার হতে পারে।
কোথায় থাকবেন?
শেরগাঁওয়ে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোমস্টে এবং হোটেল আছে। এদের মধ্যে রেড বেরি রিভারভিউ হেরিটেজ হোমস্টে, ইয়ংজি রিট্রিট, টিউলিপ ভ্যালি হোমস্টে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, শেরগাঁওয়ে কিছু স্থানীয় মানুষের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে, যা তাঁদের সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ দেয়।

Latest article