বহু দর্শকের পছন্দের অভিনেত্রী রাজনন্দিনী পাল। আট এবং নয়ের দশকের নায়িকা ইন্দ্রাণী দত্তর কন্যা তিনি। অদ্ভুত সারল্য রয়েছে তাঁর মধ্যে। সিনেমা দিয়ে শুরু করেছেন অভিনয় জীবন। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রযোজনা সংস্থার ছবি। পরিচালক ছিলেন অভিষেক সাহা। অভিনয় করেন গ্রামের মেয়ের চরিত্রে। পরবর্তী সময়ে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘এক যে ছিল রাজা’য় অভিনয় ছিল তাঁর সিনেমায় বড় ব্রেক। অভিনয় করেছেন ‘সম্পূর্ণা’, ‘পাঁচফোড়ন’-এর মতো ওয়েব সিরিজেও। এইবার তিনি পা রাখতে চলেছেন টেলিভিশন দুনিয়ায়। স্টার জলসার আসন্ন ‘রাজরাজেশ্বরী রানী ভবানী’ সিরিয়ালে রানী ভবানীর চরিত্রে অভিনয় করবেন তিনি। অর্থাৎ নাম ভূমিকায়।
আরও পড়ুন-স্ত্রীকে উপহার দিতে স্বর্ণবিপণিতে ৯৩ বছরের বৃদ্ধ, মঙ্গলসূত্রের দাম নিলেন না মুগ্ধ দোকানি
কিছুদিন আগেই সামনে এসেছে প্রথম প্রোমো। সেই প্রোমোয় লাল বেনারসি, গা-ভরা গয়না, সিঁথিতে সিঁদুর, পায়ে আলতা পরে একেবারে ‘রাজরাজেশ্বরী’ বেশেই ধরা দিয়েছিলেন রাজনন্দিনী। ওই প্রোমোয় কেবল তাঁকেই দেখা গিয়েছিল। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ‘রাজরাজেশ্বরী রানী ভবানী’র দ্বিতীয় প্রোমো। এই প্রোমোয় সামনে এসেছে সিরিয়ালের বাকি কলাকুশলীদের লুক। এই মেগায় রাজনন্দিনীর বিপরীতে ‘দুই শালিক’-খ্যাত অভিনেতা সায়ন বোস অভিনয় করছেন। এছাড়াও দেখা যাবে অরিজিতা মুখোপাধ্যায়, মানসী সেনগুপ্ত, স্নেহা চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা মুখোপাধ্যায় প্রমুখকে। দ্বিতীয় প্রোমোয় রানী ভবানীর জন্ম থেকে বড় হয়ে ওঠা, বিয়ে, তারাপীঠের মন্দিরের সঙ্গে যোগ আর শেষে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার পুরো কাহিনির কোলাজ তুলে ধরা হয়েছে। রানী ভবানীর নানা বয়সের লুকে ধরা দিয়েছেন রাজনন্দিনী। কখনও লাল ফিতে দিয়ে কলা বিনুনি বাঁধা গ্রামের সাদামাটা মেয়ে। তাঁর হাতে লাঠি, সকলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লাঠি খেলছেন। আবার কখনও একেবারে নতুন কনের বেশে ভারী গয়না আর লাল টুকটুকে বেনারসি পরে পালকি চড়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছেন। আবার কখনও রাজবাড়ির বউরানি হয়ে ক্ষুধার্তদের মুখে তুলে দিচ্ছেন খাবার। সবশেষে তাঁকে রণরঙ্গিনীর সাজে তরোয়াল হাতে যুদ্ধযাত্রা করতেও দেখা গিয়েছে। এই সবের মাঝেই পিছন থেকে ভেসে এসেছে আবহ। পাশাপাশি শোনা গিয়েছে অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীর ভরাট কণ্ঠস্বর।
আরও পড়ুন-মণিপুরে গুলিতে হত কুকি মহিলা
কে এই রানী ভবানী? ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা এক নারী চরিত্র। ১৭১৬ সালে বগুড়া জেলার ছাতিমগ্রাম গ্রামের একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম। তাঁর পিতার নাম আত্মারাম চৌধুরী, যিনি বগুড়া জেলার ছাতিন গ্রামের জমিদার ছিলেন, যা বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত। ভবানীর বিয়ে হয়েছিল রাজশাহির তৎকালীন জমিদার রাজা রামকান্ত মৈত্র রায়ের সঙ্গে। ১৭৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর, ভবানী ডি জুরে জমিদার হন এবং তাঁকে রানী বলা শুরু হয়। সেই সময়ে জমিদার হিসেবে একজন মহিলা একপ্রকার বিরল ছিল। কিন্তু রানী ভবানী চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দক্ষতার সঙ্গে এবং কার্যকরভাবে বিশাল রাজশাহি জমিদারি পরিচালনা করেছিলেন। পলাশির যুদ্ধের ৪৬ বছর পর, ১৮০৩ সালে ৭৯ বছর বয়সে তিনি মারা যান। জমিদার বংশের দুর্দান্ত বধূ ছিলেন। এককথায় ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ নারী চরিত্র।
চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য রাজনন্দিনীকে বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। তার মধ্যে আছে লাঠিখেলা, তলোয়ার চালানো, ঘোড়ায় চড়া শেখা। প্রোমোর শ্যুটিংয়ের সময় অনেকটাই করেছেন তিনি। বসেছেন চিত্রনাট্যকার, পরিচালকের সঙ্গেই। রানী ভবানীর আবেগকে তুলে ধারাই তাঁর কাছে বেশি চ্যালেঞ্জের। শারীরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে খুব একটা ভয় পাননি তিনি। চরিত্রটার সঙ্গে জাস্টিস করতে চান।
প্রসঙ্গত, একসঙ্গে এই প্রোজেক্টের ঘোষণা করে স্টার জলসা ও জি বাংলা। অর্থাৎ, সেই প্রথমা কাদম্বিনীর পর, আরও একবার, একই গল্প, একইসঙ্গে চালাবে দুই চ্যানেল। তবে জি বাংলার আগেই ধারাবাহিকের দুই প্রোমো প্রকাশ্যে আনল স্টার জলসা।
আরও পড়ুন-যশস্বী-শুভমনের জোড়া সেঞ্চুরি, বড় রান ভারতের
সংবাদমাধ্যমের সামনে রাজনন্দিনী বলেছেন, আমার মাথায় কোনও প্রতিযোগিতা নেই। নিজের কাজে মন দিতে চাই। এই প্রোজেক্টের নেপথ্যে আরও ২০০ জন মানুষ আছেন। তাঁরাও দিনরাত পরিশ্রম করছেন। অনেক অর্থ লগ্নি হয়েছে। ছেলেখেলার বিষয় নয়। ফলে কোনও বিতর্ক কিংবা প্রতিযোগিতায় যেতে চাই না। লক্ষ্য একটাই, কাজটা ভাল করে করতে হবে। দর্শকের উপরই সবটা। আমি চাই, এই কাজটার জন্য দর্শক আমায় ভালোবাসুন। মনে রাখুন। কাজ ভালো না হলে, সেই ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হব।
তিনি আরও বলেন, গল্পটা শুনে নিজেই চমৎকৃত হয়েছি। আমি নিজেও কিন্তু রাসমণি কিংবা ভবানীর মতো আধ্যাত্মিক। বিশ্বাস করি অলৌকিকতায়। রোজ সকালে স্নান সেরে পুজোর ঘরে যাই। এটা আমি বাবার থেকে পেয়েছি। আমার বাবা নিত্যপুজো করেন। আমিও তাই। ফলে মায়ের চেয়েও বাবা বেশি খুশি হয়েছেন এটা দেখে যে, আমি সিরিয়ালে আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক গল্পের অংশ হয়েছি।
কবে থেকে সম্প্রচার শুরু হবে ‘রাজরাজেশ্বরী রানী ভবানী’র চ্যানেলের পক্ষ থেকে এখনও জানানো হয়নি। তবে শ্যুটিং চলছে। প্রোমো দেখে খুশি দর্শকেরা। তৈরি হয়েছে আগ্রহ।