প্রতিবেদন: তাঁকে হত্যার হুমকি বারবার দিচ্ছে ইজরায়েল। ইরাকি শাসক সাদ্দাম হুসেনের মতো পরিণতি তাঁরও হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। আর তা সমর্থন করে চাপ বাড়াচ্ছে আমেরিকাও। এই পরিস্থিতিতে গোপন বাঙ্কারে বসেই নিজের উত্তরসূরি বাছার কাজ শুরু করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তথা শিয়া ধর্মগুরু ৮৬ বছরের আয়তোল্লা আলি খামেনেই। নানা সূত্রে জানা যাচ্ছে, তিনজন সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীর নাম বেছে নিয়েছেন তিনি। তবে সেই তালিকায় নেই খামেনেইয়ের ছেলে মোজতবা খামেনেইয়ের নাম।
এদিকে সংঘর্ষ ইস্যুতে অনমনীয় থেকে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরান-ইজরায়েল দু’পক্ষই জানিয়েছে, লড়াই চলবে, থামার প্রশ্নই নেই। শুক্রবার রাতে বসেছিল জরুরি বৈঠক। দু’দেশের প্রতিনিধিরাই যুদ্ধের জন্য দোষারোপ করেছেন পরস্পরকে। কিন্তু সেইসঙ্গে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে আর পিছিয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। লড়াই চালিয়ে যেতে দুই দেশই বদ্ধপরিকর।
আরও পড়ুন-নিয়োগে প্রভাব, ইউনিয়ন সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় নালিশ আইএনটিটিইউসির
ইতিমধ্যে ৯ দিন পূর্ণ হয়েছে ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের। শুক্রবার মাঝরাত থেকে আবার ইজরায়েলে হানা দিতে শুরু করেছে ইরান। বদলা নিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইজরায়েলও। তেল আভিভ থেকে ইরানকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর এক অত্যন্ত শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র। হামলা, পাল্টা হামলার আরও ঝাঁঝ বেড়েছে শনিবার। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ইরানিয়ান রেভলিউশনারি গার্ডসের ২ শীর্ষ কমান্ডারকে খতম করল ইজরায়েল। ইরানের একটি বহুতলে হানা দিয়ে নিকেশ করা হয়েছে আই আর জি কমান্ডার সইদ ইজাদিকে। এরপর গভীর রাতেই গাড়িতে হামলা চালিয়ে খতম করা হয়েছে আই আর জির আর এক কমান্ডার বেনহাম শরিয়ারিকে। নিহত হয়েছেন ইরানের আরেক পরমাণু বিজ্ঞানীও। তাঁর বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে খুন করেছে আইডিএফ।
ইজরায়েলের জরুরি পরিষেবা প্রকাশিত ছবিতে দেখা গিয়েছে, দাউদাউ করে জ্বলছে সেদেশের এক বহুতল। চারিদিকে আর্তচিৎকার। সংবাদমাধ্যমের ধারণা, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে তার ধ্বংসাবশেষ এসে পড়েছিল ওই বহুতলে। এরই পরিণতিতে অগ্নিকাণ্ড। শুক্রবার রাত আড়াইটে নাগাদ ইজরায়েলের সামরিক বাহিনী আইডিএফ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে সতর্কবার্তা জারি করে নাগরিকদের উদ্দেশ্যে। সাইরেন বেজে ওঠে তেল আভিভ, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক-সহ মধ্য ইজরায়েলের বেশ কিছু জায়গায়। তবে আকাশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র দেখামাত্রই সেগুলি মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করে দেওয়া হয় বলে দাবি ইজরায়েলের। দক্ষিণ ইজরায়েলেও সারারাত ধরে চলে সাইরেনে সতর্কবার্তা। ওই অঞ্চলে ইরান মোট পাঁচটি ব্যালাস্টিক মিসাইল ছুঁড়েছে বলে দাবি। শহর বারবার কেঁপে উঠেছে বিস্ফোরণে। তবে ছেড়ে কথা বলেনি তেল আভিভও। গভীর রাতে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণকেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্য করে। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইরানের সমস্ত পরমাণুঘাঁটি ধ্বংস করা হবে। আমেরিকা পাশে থাকুক কিংবা নাই থাকুক। এদিকে ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রী গিদন সার এক সাক্ষৎকারে মন্তব্য করেছেন, ইজরায়েল ইতিমধ্যেই যা করে দিয়েছে, তাতে ইরানের পরমাণু বোমা তৈরির স্বপ্ন অন্তত দু’বছরের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে। ইজরায়েলের সন্দেহ, পরমাণু বোমা তৈরির একেবারে দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে ইরান। সেই কারণেই ইরানের পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে ইরান। তবে ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে আমেরিকার অস্ত্র এবং সাহায্য ছাড়া ইরানের পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করার ক্ষমতা নেই ইজরায়েলের।
আরও পড়ুন-শিলিগুড়ির নাগরিকদের আর জল নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না, জানালেন মেয়র
ইরানের সঙ্গে তীব্র সংঘাতের আবহেই ইজরায়েল এবার বড় ধরনের আঘাত হানল লেবাননে। ইরানের মদতপুষ্ট হিজবুল্লার ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে তাদের শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার মহম্মদ খাদর আল হুসেইনিকে খতম করল ইজরায়েলি সেনা। আসলে ইরানের প্রতি সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লা। তাদের শিক্ষা দিতেই আক্রমণ হানল নেতানিয়াহুর সেনা। শুক্রবার লেবাননের উত্তর সীমান্তে হানা দেয় আইডিএফ।