মণীশ কীর্তনিয়া, দিঘা: নির্বাচন কমিশন ও এজেন্সি দিয়ে বাংলায় ভোট দখলের চেষ্টা করছে বিজেপি। বিহারের নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাকে টার্গেট করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে ঢাল করে বিজেপির ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। তাঁর কথায়, এটা এনআরসি-র থেকেও ভয়ঙ্কর। বৃহস্পতিবার দিঘাতেই জরুরি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এই ঘৃণ্য চক্রান্ত প্রকাশ্যে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন নির্বাচন কমিশন ও বিজেপিকে একযোগে তোপ দেগে তিনি বলেন, এরা ঘুরপথে এনআরসি করতে চাইছে। কিন্তু এটা এনআরসি-র থেকেও ভয়ঙ্কর। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। আপাতত যেটুকু তথ্য পাওয়া গিয়েছে সেটুকু আপনাদের জানালাম। ডিক্লেয়ারেশন ফর্মে কেন মা-বাবার জন্ম শংসাপত্র দিতে হবে? এটা বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। আরও বিশদে আমরা খতিয়ে দেখছি। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাবে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী বাকি রাজনৈতিক দলগুলিকেও এ-বিষয়ে নিজেদের মতো করে ভেবে দেখতে অনুরোধ করেছেন। সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা, এই ভুল শুধরে নিন। শুধু তাই নয়, জাতীয় নির্বাচন কমিশনারের নাম না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সচিব হিসেবে একসময় কাজ করেছেন বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee)। এরপরই তাঁর তোপ, এখন তো দেশ চালাচ্ছেন অমিত শাহ। উল্লেখ্য, বিহারের জন্য জারি করা কমিশনের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে (যা গোটা দেশের জন্যই লাগু হবে) শুরু হচ্ছে বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর)। ভোটার তালিকা থেকে অবৈধ নাম বাদ দেওয়া এবং প্রকৃত ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে করা হবে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা। সেইসঙ্গে বলা হয়েছে, ১৯৮৭ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে যাঁরা জন্মেছেন তাঁরাই ভারতীয় নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন।
এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম তো ১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাসে। নির্বাচন কমিশনের জারি করা নির্দেশিকায় সাধারণ মানুষের বাবা-মায়ের জন্ম-জায়গা ও জন্ম-সার্টিফিকেট দাখিল করতে বলা হয়েছে। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা কী হচ্ছে? গোটা বিষয়টিতে বিরাট কারচুপি রয়েছে। এরা বাংলাকে টার্গেট করেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের টার্গেট করেছে। আসলে ভোটার তালিকা থেকে সব জেনুইন ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে বাইরে থেকে নাম ঢোকাবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, কিছুদিন আগে চিঠি দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ লেভেল কর্মীদের নাম ও ফোন নম্বর চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন? এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন নেত্রী। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলি কোনও বন্ডেড লেবার নয়। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তারপর এতগুলো বছর কেটে গিয়েছে। এখন এই বিজ্ঞপ্তি বা নির্দেশিকা জারি করার মানে কি? তিনি সরাসরি কৈফিয়ত চেয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, আমরা ব্যাটিংটা শুরু করলাম। বাকি রাজ্যগুলো বোলিং করুক এবার। তবে বিজেপির এই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত কিছুতেই আমরা বাংলায় হতে দেব না। নির্বাচন কমিশন দেখে দেখে এমন অবজারভার দেয় তারা বিজেপিকে সাপোর্ট করে। এটাই এমারজেন্সি উইপন বিজেপিকে সাহায্য করার জন্য। এটা ইলেকশন কমিশনের কাজ নয়, ওদের নিরপেক্ষ থাকা উচিত।
১৯৮৭ সালের আগে যাঁরা জন্মেছেন তাঁরা ভারতীয় নাগরিক নন? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাঁর সংযোজন, আমরা কম জানি। তাঁরা কি মনে করেছেন নতুন জেনারেশন ভোট দেবে না? বাবা-মায়ের সার্টিফিকেট কোথায় পাবে গরিব লোকেরা? এটা কি এনআরসির ইঙ্গিত? ইচ্ছাকৃত করা হচ্ছে। দেশে কী হচ্ছে এটা? ছাত্র-যুব তারা ভোট দেবে না? প্রধানমন্ত্রী ২০২৪-এ ভোটে জিতেছেন। আমি ২০২১-এ আমি জিতেছি। আমরা কি তবে নির্বাচিত নই? নির্বাচন কমিশন তো সবটা গুলিয়ে দিচ্ছে। এ জিনিস চলতে পারে না। এর তীব্র প্রতিবাদ করব আমরা।
কমিশনকে দিয়ে ভোট দখলের চেষ্টা, টার্গেট সেই বাংলাই, চক্রান্ত ফাঁস নেত্রীর
