সৈকতনগরীতে প্রথম রথযাত্রা, লক্ষ ভক্তের সমাগমে তৈরি হল নয়া ইতিহাস

Must read

মণীশ কীর্তনিয়া, দিঘা: দুপুর আড়াইটের কয়েক মুহূর্ত আগেই বলরাম-সুভদ্রা-জগন্নাথের রথের রশিতে টান পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নয়া ইতিহাস তৈরি হল দিঘার (Digha Rath Yatra) বুকে। উপস্থিত লক্ষ লক্ষ মানুষ সমস্বরে বলে উঠলেন— ‘জয় জগন্নাথ’। সেইসঙ্গে টেলিভিশনের পর্দায়-সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলার মানুষ সাক্ষী থাকলেন নয়া ইতিহাসের। তার আগে ঠিক ঘড়ির কাঁটায় বেলা ২টোতে হাজির হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারলেন আরতি।

এরপর ইসকনের রাধারমণ দাস-সহ সেবায়েতদের নিয়ে সোনার ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা ঝাঁট দিলেন। তার আগে এদিন পুরোনো দিঘা থেকে গোটা পথটা হেঁটে এসেছেন। শুক্রবার সকাল থেকেই প্রভু জগন্নাথদেব-সহ বলভদ্র ও সুভদ্রাকে রথে তোলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। সকাল ৯টা নাগাদ রথে তোলার পর্ব শেষ হয়। শুরু হয় পূজার্চনা। মুখ্যমন্ত্রীর আসার পর রথের রশিতে টান পড়ল। যাত্রা শুরু হল মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে। দিঘার (Digha Rath Yatra) রাজপথে তখন জনসমুদ্র। সেই জনসমুদ্রে ভেসেই প্রভু জগন্নাথ হেলতে-দুলতে চললেন মাসির বাড়ি। আগামী কয়েকটা দিন সেখানেই অধিষ্ঠান করবেন তিনি।

আরও পড়ুন- কলেজে ধর্ষণ : অভিযুক্তদের সরানো হয় আগেই, ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার দুর্বৃত্তরা

জগন্নাথধাম থেকে মাসির বাড়ি প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা। কিন্তু এটুকু রাস্তা পেরোতেই সময় লাগল প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো। রাস্তার দু’পাশে টানা ব্যারিকেডের ওপারে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও সাধারণ মানুষ দাঁড়িয়ে প্রবল আকুতিতে দুচোখ ভরে দেখলেন ঐতিহাসিক রথযাত্রা। সামনে তিনটি রথ। তার পিছনে কাঁসরঘণ্টা বাজাতে বাজাতে হাঁটছেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে রয়েছেন সেবায়েতরা। রয়েছেন পাঁচ মন্ত্রী।

সাধে কি আর বলে— রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম, ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম… সেই এক ছবি। সবাই রথের রশি ছুঁতে-মাথায় ঠেকাতে চান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের ভক্তদের এই আকুতির কথা মাথায় রেখে অনেক আগে পরিকল্পনা করেছিলেন গোটা যাত্রাপথেই যাতে সাধারণ মানুষ যে কোনও প্রান্তে রথের রশিতে হাত দিতে পারেন তার ব্যবস্থা করে রাখা। ঠিক তাই হয়েছে। রথের সঙ্গে যে রশি রয়েছে, তারসঙ্গে লম্বা রশি জুড়ে লাগানো হয়েছে দু-পাশের বাঁশের ব্যারিকেডে। রথের চাকা গড়ানোর আগে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, যাঁরা রথের রশি ছুঁতে চান তাঁরা ওই ব্যারিকেডে রাখা দড়িতে হাত ছোঁয়ালেই হবে। সাধারণ মানুষ কোনও রকম বিশৃঙ্খলা না করে ঠিক এই পদ্ধতি মেনেই রথের রশি মাথায় ছুঁইয়েছেন। জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা চলেছেন আর চলেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই শুধু কালো কালো মাথা। মাসির বাড়িতে পৌঁছনো পর্যন্ত নিজে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। এই লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ের মাঝেও মুখ্যমন্ত্রীকে মাঝেমধ্যে যেতে হয়েছে ব্যারিকেডের দিকে জনতার আবদারে। এখন মাসির বাড়িতেই থাকবেন প্রভু। দর্শন হবে এখানেই।

Latest article