৫০ বছর আগের হিন্দি সিনেমা ‘শোলে’ নতুন করে মুক্তি পেল

শিবেন্দ্র সিং দুঙ্গারপুর জানান, এবারকার সংস্করণই সবচেয়ে আসল ও সম্পূর্ণ। এখানে মূল শেষাংশ ও বাদ দেওয়া দৃশ্যগুলি রয়েছে।

Must read

বিশেষ প্রতিবেদন: কালজয়ী হিন্দি সিনেমা ‘শোলে’র মুক্তির ৫০ বছর পূর্ণ উপলক্ষে শুক্রবার ছবিটির নতুন সংস্করণ দেখানো হল ইতালিতে। ভারতের ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত হিন্দি সিনেমাটি মুক্তির ৫০ বছর পর আবার বড় পর্দায় আসছে। ১৯৭৫ সালে নির্মিত রমেশ সিপ্পির এই কালজয়ী সিনেমা এবার পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এতে রয়েছে সিনেমার আসল শেষাংশ ও কিছু বাদ দেওয়া দৃশ্য। এই নতুন সংস্করণটি ইতালির বোলোনিয়ায় শুক্রবার প্রথমবার দেখানো হল ইল সিনেমা রিট্রোভাতায়। এটি বড় এক খোলা জায়গায় স্ক্রিনে দেখানো হয়, যা দর্শকদের এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

আরও পড়ুন-প্যাকেজের ওপর বাড়তি টাকা, কমিশনের কাঠগড়ায় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল

সেলিম-জাভেদ এই কালজয়ী সিনেমার কাহিনি লিখেছেন। অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনী, জয়া ভাদুড়ি, সঞ্জীব কুমার ও ‘গব্বর সিং’ চরিত্রে আমজাদ খান। মূল কাহিনি পশ্চিমি ও জাপানি সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হলেও এটি পুরোপুরি ভারতীয় আবহে তৈরি। এই ২০৪ মিনিটের ছবিতে ভাল-খারাপের চিরাচরিত লড়াই দেখানো হয়েছে। মুক্তির পর ‘শোলে’ মুম্বইয়ের মিনার্ভা হলে টানা পাঁচ বছর চলে। সিনেমাটি বিবিসি ইন্ডিয়ার বিচারে ‘শতাব্দীর সেরা সিনেমা’ হয় এবং ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট এটি ভারতের সেরা সিনেমা হিসেবে ঘোষণা করে। এর গান ও সংলাপের ক্যাসেট ও রেকর্ড অর্ধমিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়েছিল। এটি যেন শুধু এক সিনেমা নয়, বরং হয়ে উঠেছে সংস্কৃতির প্রতীক। এর সংলাপ বিয়েতে বলা হয়, রাজনীতিতে ব্যবহার করা হয়, এমনকী বিজ্ঞাপনচিত্রেও দেখা যায়। ‍‘‍‘শোলে যেন বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য,’’ বলেছেন ধর্মেন্দ্র। অমিতাভ বচ্চন বলেছেন, ‘‍‘এই সিনেমা শুট করার সময় বুঝিনি এটি এত বিখ্যাত হবে, তবে এটা আমার জীবনের এক স্মরণীয় সময় ছিল।’’ শিবেন্দ্র সিং দুঙ্গারপুর জানান, এবারকার সংস্করণই সবচেয়ে আসল ও সম্পূর্ণ। এখানে মূল শেষাংশ ও বাদ দেওয়া দৃশ্যগুলি রয়েছে।

আরও পড়ুন-এমএসএমই ক্ষেত্রে রাজ্যে বিপুল সম্ভাবনা

প্রথমে সিনেমার শেষাংশে ঠাকুর গব্বরকে হত্যা করত। কিন্তু সেন্সর বোর্ড এতে আপত্তি করে। তারা মনে করেছিল, একজন প্রাক্তন পুলিশ অফিসার এভাবে আইন নিজের হাতে নিতে পারেন না। সেই সময় দেশে জরুরি অবস্থা চলছিল, তাই সেন্সরের নিয়ম ছিল অনেক কড়া। শেষে রমেশ সিপ্পি সিনেমার শেষাংশ পরিবর্তন করে দেখান, গব্বর ধরা পড়ে, মারা যায় না। তারপরই সিনেমাটি সেন্সরের ছাড়পত্র পায়। এই সিনেমার পুরনো প্রিন্ট নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ক্যামেরা নেগেটিভও অনেক খারাপ ছিল। ২০২২ সালে রমেশ সিপ্পির ছেলে শহজাদ সিপ্পি ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, মুম্বইয়ের এক গুদামে কিছু কৌটা আছে। সেখানেই খুঁজে পাওয়া যায় ছবির মূল ক্যামেরা ও সাউন্ড নেগেটিভ। এরপর ব্রিটেন থেকেও কিছু অতিরিক্ত রিল পাওয়া যায়। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও ইতালির লা ইমাজিনে রিট্রোভাতার সাহায্যে ছবির সব অংশ জোড়া লাগানো হয়। এমনকী এই সিনেমাতে ব্যবহৃত আসল ক্যামেরাটিও উদ্ধার করা হয়।
তবে প্রথম মুক্তির সময় ‘শোলে’ তেমন প্রশংসা পায়নি। অনেক সমালোচক সিনেমাটিকে ‍‘ব্যর্থ’ বলেছিলেন। ইন্ডিয়া টুডে সিনেমাটিকে বলেছিল ‘নিভে যাওয়া কয়লা।’ ফিল্মফেয়ারের এক লেখক বলেছিলেন, ‘এটি না ঠিক ভারতীয়, না ঠিক পশ্চিমি।’ প্রথম সপ্তাহে দর্শক ছিল নীরব। অনুপমা চোপড়া তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘দর্শকরা চুপচাপ বসে থাকত—না হাসি, না কান্না, না হাততালি।’ তৃতীয় সপ্তাহে দর্শক সংলাপ বলতে শুরু করে, অনেকে দ্বিতীয়বার দেখতে আসে। একমাস পর একটি সংলাপ রেকর্ড বের হয়, যেটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। এরপরই সিনেমাটি ঘুরে দাঁড়ায়। গব্বর সিং চরিত্র ভয়ঙ্কর হলেও খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ‘শোলে’ টানা পাঁচ বছরের বেশি মিনার্ভা হলে চলে—তিন বছর নিয়মিত শো, দুই বছর ম্যাটিনি শো। এমনকী ২৪০তম সপ্তাহেও হলে ভিড় ছিল। পাকিস্তানে সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১৫ সালে এবং তখনও অনেক নতুন ছবিকে হারিয়ে দেয়। সিনেমা পরিবেশক শ্যাম শ্রফ বলেন, যেমন একসময় বলা হত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নিয়ে, ‍‘শোলে’ নিয়েও বলা যায়—সূর্য কখনও অস্ত যায় না। হিন্দি সিনেমার আশ্চর্য লেখক-জুটির গল্প ‘শোলে’ এখনও মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে কেন? অমিতাভ বচ্চনের উত্তর, অন্যায়ের উপর ন্যায়ের বিজয় আর সবচেয়ে বড় কথা, তিন ঘণ্টায় ন্যায়বিচার! যা আপনি আর আমি আজীবনেও নাও পেতে পারি!

Latest article