প্রকৃতিরূপীকাম্ সুভদ্রাং

যিনি সর্বতোভাবে মঙ্গলময়ী তিনি সুভদ্রা। জগন্নাথ অব্যক্ত পুরুষ, তাঁর ব্যক্ত অবস্থায় প্রকাশিত শক্তি হলেন সুভদ্রা। আবার তিনিই মা যোগমায়া। তাঁর নানা রূপ, নানান ব্যাখ্যা। সেই দেবী সুভদ্রার কাহিনি-কথায় তনুশ্রী কাঞ্জিলাল মাশ্চারক

Must read

সুভদ্রাং স্বর্ণ পদ্মাভাং পদ্মপত্রায়তেক্ষণাম্
বিচিত্রবস্তুসংচ্ছন্নাং হারকেরুর শোভিতাম্
পীনোন্নতকুচাং রম্যামাদ্যাং প্রকৃতিরূপীকাম্
ভুক্তিমুক্তিপ্রদাত্রীঞ্চ ধ্যায়োত্তামম্বিকাং পরাম্।।

জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা হলেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান দেবতা। সুভদ্রা নামটা শুনলেই আমাদের মনে হয় বলভদ্র ও জগন্নাথদেবের সঙ্গে পূজিতা দারুময়ী দেবীকে। যিনি সর্বতোভাবে মঙ্গলময়ী তিনি সুভদ্রা। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন বেদিতে সুভদ্রা বলরাম জগন্নাথ আর সুদর্শন এই চারটি মৈত্রী রূপ ও তার অর্থ নানাভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
পুরাণে এঁরা যথাক্রমে বিরাট সুত্রাত্ম্য, অন্তর্যামী ও শুদ্ধতার প্রতীক।
স্কন্দপুরাণ ও পঞ্চসখা যুগের দার্শনিকদের ব্যাখ্যায় মূর্তি চতুষ্টায় চারটি বেদময়। জগন্নাথ সামবেদ, বলরাম ঋকবেদ, সুভদ্রা যজুর্বেদ আর সুদর্শন অথর্ব বেদ।
সুভদ্রার গাত্রবর্ণ হলুদ। তিনি প্রকৃতি শক্তি ও ঐশ্বর্যের প্রতীক।
বলরাম শুভ্রবর্ণ। তিনি শুদ্ধ আত্মা পুরুষ। শ্রীজগন্নাথের কৃষ্ণবর্ণে প্রকাশ পায় মহাবিশ্বের লৌকিক রূপ। তিনি গভীর রহস্যের আধার। তাই তাঁর গাত্রবর্ণ কৃষ্ণ। তাঁর চোখ দুটি চন্দ্র-সূর্য। চোখে কোনও পাতা নেই। তিনি নিদ্রাকে দূরে সরিয়ে সদা দেখছেন জগৎ সংসার। সমান্তরালভাবে প্রসারিত বাহু। জগৎ সংসারের সবকিছুই তাঁর অনন্ত আলিঙ্গনে আবদ্ধ।
মূর্তি সম্পর্কে শাস্ত্রকাররা বলেন, শ্রী জগন্নাথ অব্যক্ত পুরুষ। তাঁর ব্যক্ত অবস্থায় প্রকাশিত শক্তি হলেন সুভদ্রা। সূক্ষ্ম জগৎরূপে প্রকাশিত বলরাম। আর সূক্ষ্ম জগতের অদৃশ্য শক্তি শ্রীজগন্নাথ। সূক্ষ্ম আর স্থূল জগতের সংযোগকারিণী সুভদ্রা।
সুভদ্রা ভগবান জগন্নাথের বোন এবং তিনি তাঁদের সঙ্গে রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী এবং তাঁর পুজো করা হয়। সুভদ্রা নামটি শুনলেই আমাদের মনে আসে কৃষ্ণের বোনের কথা।

আরও পড়ুন-বিপত্তারিণী কথা

গোকুলে নন্দ মহারাজের ঘরে কৃষ্ণের সঙ্গে একই দিনে জন্মগ্রহণকারী কৃষ্ণের বোন আছেন দ্বারকায়।
মথুরায় রোহিণীর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী কৃষ্ণের বোন। পুরীর মন্দিরের বেদিতে কৃষ্ণ ও বলরামের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন কৃষ্ণের বোন।
শ্রীমৎভগবত, হরিবংশ এবং মহাভারত হল তিনটি মূল শাস্ত্র। যেখানে কৃষ্ণের বোনের কথা উল্লেখ রয়েছে।
ভগবান অপি বিশ্বাত্মা
বিদিত্বা কামযাম ভয়ম
যদুনাম নিজ নাথানম
যোগময়ম্ সমাদিসত্
কংসের আক্রমণ থেকে ভীত যদুদের রক্ষা করার জন্য, সকলের পরমাত্মা, যোগমায়াকে আদেশ দিয়েছিলেন— ‘হে আমার শুভশক্তি যিনি সমগ্র জগতের জন্য পূজনীয়, যার স্বভাব সকল জীবনকে সৌভাগ্য দান করা, আপনি ব্রজে যান, যেখানে অনেক গোপালক এবং তাঁদের স্ত্রীরা বাস করেন। সেই সুন্দর ভূমিতে, বাসুদেবের শ্রীরোহিণী নন্দ মহারাজের গৃহে বাস করছেন। দয়া করে সেখানে যান।’
পুরাণ-বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন যে, সুভদ্রা আসলে সেই যোগমায়া। তাঁর জন্মের রাতেই বাবা-মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে এনে তুলে দেওয়া হয়েছিল কংসের হাতে। ঝড়-বৃষ্টির রাতে কৃষ্ণকে রক্ষা করতে নিজেকে ঘাতকের হাতে তুলে দিয়ে ছিলেন, সেই যোগমায়া আসলে সুভদ্রা বলে মত পুরাণ বিশেষজ্ঞদের।
শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে একই সময়ে নন্দ ও যশোদার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন যোগমায়া। যিনি স্বয়ং দেবী পার্বতী। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির সেই রাতে বাসুদেব কংসের কারাগার থেকে সরিয়ে ফেলতে গোকুলে যান। সেখানে অচেতন যশোদার কাছ থেকে যোগমায়াকে সরিয়ে সেখানে কৃষ্ণকে রেখে আসেন তিনি। যোগমায়াকে নিয়ে কংসের কারাগারে ফিরে এসে দেবকীর পাশে শুইয়ে দেন।
কংস এসে যোগমায়াকে নিধন করতে উদ্যত হলে তার হাত ছাড়িয়ে আকাশে মিলিয়ে যান তিনি। যাওয়ার আগে কংসকে এই বলে সতর্ক করে দিয়ে যান, ‘তোমারে বধিবে যে গোকূলে বাড়িছে সে।’
এটা স্পষ্ট যে যশোদার গর্ভে জন্ম নেওয়া কন্যাটি আসলে যোগমায়া ছিলেন। কিন্তু বাসুদেব যে কন্যাসন্তানকে কংসের কারাগারে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি ছিলেন মহামায়া, কৃষ্ণের বাহ্যিক শক্তি।
হরিবংশ এইভাবে বলেন, রোহিণীতে বাসুদেবের জ্যেষ্ঠ পুত্র বলরাম জন্মগ্রহণ করেন, এবং তাদের অন্যান্য পুত্ররা হলেন শরণ, সঠ, দুর্দম, দমন, স্বভ্র, পিণ্ডরক এবং উষীনার। তাঁদের চিত্রা নামে একটি কন্যাও ছিল। যিনি সুভদ্রা নামে পরিচিত।

আরও পড়ুন-১০৯ প্রসূতি উদ্ধার, ৬৪ জনের নিরাপদ ডেলিভারি করিয়ে হিরো স্বাস্থ্য দফতর

মহাভারতে বলা হয়েছে— হে পার্থ এ আমার বোন, এবং শরণার একই মাতার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছেন (এটির শরণার মা রোহিণীকে বোঝায়) তুমি ধন্য হও। সে আমার পিতার প্রিয় কন্যা।
হরিবংশ কৃষ্ণের বোনকে সুভদ্রা বলে উল্লেখ করেছেন। এবং মহাভারতে কৃষ্ণের বোনকে রোহিণীর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই দুটি উল্লেখই মথুরায় বাসুদেব ও রোহিণীর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী কৃষ্ণের বোনের কথা, যাঁরা পরে দ্বারকায় অর্জুনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। যশোদার গর্ভে জন্মগ্রহণকারী এবং পরে কংসের অন্ধকূপে নিয়ে যাওয়া কৃষ্ণের যমজ সন্তানের কথা নয়।
পূর্ববর্তী আচার্যদের কাছ থেকে আমরা সুভদ্রা সম্পর্কে জেনেছি।
কিছু সময় বলা হয়েছে যে, তিনি সর্ব মঙ্গলময় যোগমায়া। কিছু সময় বলা হয়েছে তিনি মহামায়া এবং কিছু সময় বলা হয়েছে যে তিনি ভক্তিস্বরূপা দেবী।
১৮৭২ সালের শ্রীভক্তিবিনোদ ঠাকুর ওড়িশার কটকের একটি সংবাদপত্রের জন্য জগন্নাথ, সুভদ্রা এবং বলদেব দেবতাদের জগন্নাথ পুরীর মন্দিরে প্রকাশিত হওয়ার বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিখে দিলেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে—
মন্দিরের মাঝখানে একটু উঁচু আসন রয়েছে, যার উপর চারটি ভিন্ন রূপ, যথা জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং সুদর্শন। বেদান্ত অনুসারে, ঈশ্বর এক এবং দ্বিতীয় ছাড়া, কিন্তু তাঁর অসীম শক্তি এবং গুণাবলি রয়েছে যা মানুষ সম্পূর্ণরূপে জানে না। মানুষ ঈশ্বরের মধ্যে কেবল তিনটি শক্তি উপলব্ধি করে। কারণ অন্যান্য শক্তিগুলি বোঝার জন্য তাঁর অন্য কোনও অনুরূপ দিক নেই। শক্তিগুলির একটি থেকে পদার্থ তার সমস্ত বিভিন্ন রোগ এবং বৈশিষ্ট্য উৎপন্ন হয় এবং এই শক্তিকে ঈশ্বরের মায়াশক্তি বলা হয়।
দ্বিতীয় শক্তি থেকে সমস্ত আধ্যাত্মিক সৃষ্টি, তার সমস্ত সম্পর্ক এবং পর্যায় উৎপন্ন হয়। এই শক্তিকে ঈশ্বরের জীবশক্তি বলা হয়। মানুষের দ্বারা উপলব্ধ তৃতীয় শক্তি হল ইচ্ছাশক্তি।
যাকে বলা হয় চিৎশক্তি। সৃষ্টিতে ঈশ্বরের বিচরণই অসীম শক্তি দ্বারা বোঝানো হয়।
জগন্নাথ হলেন ঈশ্বরের প্রতীক। চোখ এবং হাত ছাড়া আর কোনও রূপ নেই। এর অর্থ হল ঈশ্বর দেখেন জানেন এবং সৃষ্টি করেন। বলরাম হলেন ঈশ্বরের জীব ও শক্তি সুভদ্রা হলেন মায়াশক্তি এবং সুদর্শন হলেন ইচ্ছাশক্তি। জগতে এই মায়াকে সুভদ্রা বলা হয়। সুভদ্রা হলেন যোগমায়া। আধ্যাত্মিক শক্তিকে যোগমায়া বলা হয় এবং তাঁর ষোলোটি ভিন্ন ভিন্ন বিস্তার। এই ষোলোটি বিস্তারের মধ্যে সুভদ্রা হলেন একজন।
সুভদ্রাদেবীকে সাধারণভাবে ভক্তির প্রতিনিধি বলা হয়, বলরাম, জগনাথ, সুভদ্রা— গুরুভক্তি এবং কৃষ্ণ চূড়ান্ত সমাপ্তি ভক্তিপ্রক্রিয়া এবং বলদেবকে সাহায্য করার জন্য গুরু। সুভদ্রা ভক্তিস্বরূপ শক্তি অন্য স্বরূপ নয়।
হরিবংশে বলা আছে, এইভাবে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে মানুষ তোমাকে বিভিন্ন নাম দেবে। দুর্গা, ভদ্রকালী, বিজয়া, বৈষ্ণবী, কুমুদা, কান্ডিকা, কৃষ্ণ মাধবী, কন্যাক, মায়া, নারায়ণী, ঈশানী, সারদা ও অম্বিকা।
হে সর্বমঙ্গলময় যোগমায়া, আমি তখন আমার পূর্ণ ৬টি ঐশ্বর্য নিয়ে দেবকীর পুত্ররূপে আবির্ভূত হব। এবং তুমি মহারাজ নন্দের রানিমাতা যশোদার কন্যারূপে আবির্ভূত হবে।
প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে রথযাত্রা হয়। স্কন্দপুরাণ, নারদপুরাণ, পদ্মপুরাণ ও ব্রহ্মপুরাণে রথযাত্রার উল্লেখ রয়েছে।
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী সুভদ্রা দ্বারকা-দর্শনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে কৃষ্ণ ও বলরাম পৃথক পৃথক রথে বসে নগরভ্রমণে বের হয় বলে মনে করা হয়। এরপর থেকেই প্রতিবছর রথযাত্রা আয়োজিত হয়।
রথ হল একটি প্রাচীন বাহন যা বিশেষ ধাতু এবং উপাদান দিয়ে তৈরি যা আজকের তুলনায় অনেক বৈজ্ঞানিকভাবে উন্নত ছিল।

আরও পড়ুন-মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের ১৯ গাড়িতে তেলের বদলে জল

প্রতিটি দেবতারই একটি রথ ছিল। যা স্থল, বায়ু এবং জলেও ভ্রমণ করতে পারত। এই জাদুকরী রথ আমাদের কী বার্তা দেয়? রথের চাকাগুলিকে জীবনের চাকা বলা হয়। বড়দণ্ড রাস্তাটি হল নির্বাণের পথ যা জীবনের তপস্যা থেকে মুক্তির পথ, আর রথ হল সেই রাস্তা যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি।
রথযাত্রা তাঁর ভক্তদের প্রতি ভগবানের ভালবাসাকে নির্দেশ করে। এই দিন ভগবান জগন্নাথ তাঁর দুই ভাই-বোন বলরাম এবং সুভদ্রাকে নিয়ে রথে চেপে মাসির বাড়ি যান।
তবে ভাইবোন তিনজনেরই কিন্তু আলাদা আলাদা রথ থাকে। সে রথের আবার নানা বিশেষত্ব। জগতের নাথ— তাঁর এবং তাঁর ভাই-বোনেদের রথ বলে কথা! তাদের বিশেষত্ব তো থাকবেই।
প্রতিবছর পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার জন্য তিনটি বিশাল রথ নতুন করে তৈরি করা হয়। একশো জনেরও বেশি ছুতোরমিস্ত্রি তিনটে রথ তৈরির জন্য দু’মাস ধরে কাজ করে থাকেন। দু’হাজার মিটার কাপড় লাগে রথগুলোকে উজ্জ্বল রঙে মোড়ানোর জন্য। আট ইঞ্চি ব্যাসের খুব শক্তিশালী নারকেল ফাইবারের দড়ি ব্যবহার করা হয় রথ টানার জন্য। রথের মূল কাঠামোতে চাকার উপরে আঠারোটি স্তম্ভ এবং ছাদ রয়েছে। প্রতিটি রথে ন’টি পার্শ্বদেবতা, দু’জন দ্বারপাল, একজন সারথি এবং একজন প্রধান দেবতা থাকেন। সবগুলোই কাঠের তৈরি।
তিন ভাই-বোনের রথের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
জগন্নাথের রথ নান্দীঘোষ, গরুধ্বজ বা কপিধ্বজ রথ নামে পরিচিত।
বলভদ্রের রথের নাম তালধ্বজ।
সুভদ্রার রথের নাম পদ্মধ্বজ বা দেবদলন।
তিনটি রথের চাকার সংখ্যাও এক নয়।
যেমন জগন্নাথের রথের চাকার সংখ্যা ষোলো। বলরামের রথের চাকার সংখ্যা চোদ্দো।
সুভদ্রার রথের চাকার সংখ্যা বারো।
শুধু তাই নয়, প্রত্যেকটি রথের আলাদা রংও রয়েছে। বিষ্ণু অবতারের কথা মাথায় রেখে জগন্নাথের রথের রং করা হয় লাল-হলুদ। এই দুই রং আসলে বিষ্ণুর পছন্দের রঙ।
বলরামের রথের রং লাল-সবুজ। অন্যদিকে সুভদ্রার রথের রং লাল ও কালো।
তিনটি রথে যে ঘোড়া ব্যবহার করা হয় তাদের রয়েছে আলাদা আলাদা নাম।
জগন্নাথের রথের চারটি ঘোড়ার নাম শঙ্খ, বলহাকা, শ্বেতা, হরিদশ্ব।
বজরং-এর চারটি ঘোড়ার নাম তীব্র ঘোড়া, দীর্ঘ শর্মা, স্বর্ণাভ।
সুভদ্রার চারটি ঘোড়ার নাম রুচিকা মোচিকা, জিতা ও অপরাজিত।
কেবল আলাদা আলাদা নামই নয়, ঘোড়ার নামেও রয়েছে তারতম্য। জগন্নাথের রথের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সাদা রঙের ঘোড়া। বলরামের রথের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় কালো রঙের ঘোড়া। সুভদ্রার ঘোড়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় লাল রঙের ঘোড়া। সুভদ্রার রথের উচ্চতা ৪৩ ফুট এবং এতে বারোটি চাকা রয়েছে। রথের রক্ষক দেবতা হলেন জয়দুর্গা এবং সারথি হলেন অর্জুন।
রথের পতাকাটি নাদম্বিকা নামে পরিচিত।
রথ টানার জন্য যে দড়িটি ব্যবহার করা হয় তাকে স্বর্ণচূড় বলে।
সুভদ্রার পাশাপাশি রথে চণ্ডী, চামুণ্ডা, উগ্রতর, বানদুর্গা, শুলিদুর্গা, বারাহী, শ্যামাকালী, মঙ্গলা এবং বিমলার মূর্তিও রয়েছে।

আরও পড়ুন- ৫০ বছর আগের হিন্দি সিনেমা ‘শোলে’ নতুন করে মুক্তি পেল

রথের মুখটি ভক্তি সুমেধা নামে পরিচিত এবং অস্ত্রগুলি হলেন পদ্মা এবং কলহর।
শুধু রথযাত্রাই নয়, জগন্নাথ এবং বলভদ্রের জন্য সুভদ্রার রাখি উৎসবও হয় পুরীর মন্দিরে। বলভদ্র ও জগন্নাথের জন্য বসুঙ্গা পাতা দিয়ে রাখি তৈরি হয় শ্রীমন্দিরে। একে বলে ‘রাখি লাগি নীতি।’
ঐতিহ্য অনুসারে পাতারা বিষয়ই সেবাকারীরা পাটারাখি প্রস্তুত করেন যা সুভদ্রা, ভগবান বলভদ্র এবং ভগবান জগন্নাথের সঙ্গে বাঁধেন। এই উপলক্ষে দেবতাদের গুয়ামালা অর্থাৎ সুপারি-বাদামের মালা নিবেদন করা হয়।
রাখির দিনে দেবী সুভদ্রা জগন্নাথ এবং বলভদ্রকে দুটো করে গুয়ামালা এবং দুটো করে ভুজাঙ্গা মালা রাখি বাঁধেন।

Latest article