নির্যাতনকারীর জ্বালাও চিতা, আইন হোক বিল অপরাজিতা

বাম আমলে সত্যযুগ বিরাজ করত বঙ্গে। রামরাজ্যগুলিতে নারী নির্যাতনের ঘটনা তো ঘটেই না। ঘটনা ঘটতেই পারে, কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া? কী পদক্ষেপ হত/হচ্ছে/হয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে? আজ বাজার গরম করতে চাইছে যারা, তারা যদি ধর্ষক বা নির্যাতকদের সত্যিই কঠোরতর শাস্তি চায়, তবে তারা বিধানসভায় পাশ হওয়া অপরাজিতা বিল যাতে আইনে পরিণত হয়, সেজন্য সক্রিয় হোক। লিখছেন পার্থসারথি গুহ

Must read

দক্ষিণ কলকাতার ল কলেজের ধর্ষণকাণ্ডের পর আরও একবার অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে গঠিত ধর্ষণ-বিরোধী নারীদের রক্ষাকবচ অপরাজিতা আইন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্য বিধানসভায় ধর্ষণ-বিরোধী অপরাজিতা বিল পাশ হয়ে গেলেও কেন্দ্রের ‘অতি সক্রিয়’ বিজেপি সরকার তা হিমঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। ঐতিহাসিক এই উদ্যোগের কোনও মূল্য দেয়নি গেরুয়া ব্রিগেড। তৃণমূল সাংসদেরা মাননীয়া রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে দরবার করেছেন। তাও ফিরতে হয়েছে ‘ব্যর্থ নমস্কারে’। অথচ এই অপরাজিতা বিলের পরতে পরতে রয়েছে এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম প্রধান মারণব্যাধি ধর্ষণের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি, দ্রুত তদন্ত এবং চটজলদি বিচারের কথা। ধর্ষণ আটকানোর এত বড় উদ্যোগ নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার অথচ দিল্লি তা নিয়ে চোখ-কান বুজে ‘মূক-বধির অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র’ সেজেছে।

আরও পড়ুন-গিলকে ৩ বছর সময় দিন, পাশে শাস্ত্রী

তাহলে কি ধরে নিতে হবে ধর্ষণ নিয়ে বিজেপি সরকার চায় না কোনও কঠোর আইন বলবৎ হোক? চাইবেই বা কোন মুখে? বিজেপি খোদ এই ধর্ষণ নামক মহামারীতে আক্রান্ত। কোভিডের চেয়েও ভয়ানক ভাইরাস বিজেপির রক্ত-মজ্জায় মিশে গিয়েছে। মুখের কথা নয়। একের পর এক পরিসংখ্যান তাই বলছে। কুস্তিতে দেশের সোনার মেয়েদের ওপর শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ হল বিজেপির হিরের টুকরো।
বিলকিস বানোর ধর্ষকদের বীরের সম্মান দিয়ে মালা পরায় গৈরিক গুন্ডারা।
ধর্ষিতার পুরো পরিবারকে মেরে ফেলার অভিযোগ যার বিরুদ্ধে সেই কুলাঙ্গার কুলদীপ সিং সেঙ্গার বিজেপির শো-কেসের সাজানো সম্পদ। কর্নাটকের বিজেপি বিধায়কের ধর্ষণকে আড়াল করতেও বেজায় তৎপর বিজেপি। বিজেপির মদতে পুষ্ট আশারাম বাপু, রামরহিম বাবাদের যৌন ব্যভিচারের ঝান্ডা উঁচিয়ে ধরা এ-রাজ্যের কার্তিক মহারাজ পদ্মবনের পদাবলি রচনা করেন। যথারীতি যার ছত্রে ছত্রে ধর্ষণ আর কামলীলার উপাখ্যান। এ যেন নব্য রজনীশ। রতিক্রিয়া সারতে এরা হাইওয়েকেও বাদ দেয় না। এরকম হাজারো অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে। যেন কামদেবের নব্য অবতার। তারা কী করে অপরাজিতা বিল-য়ের মতো নারী সুরক্ষা আইন পাশ হতে দেয়?
আরেকটা দল হল সিপিএম। এ-রাজ্যে বানতলায় অনিতা দেওয়ান, সিঙ্গুরে তাপসী মালিক থেকে কোচবিহারের নার্স বর্ণালি দত্তের ওপর পাশবিক অত্যাচারের কান্ডারি। এতদিন ক্ষমতার বাইরে থেকেও যাদের ‘স্বভাব যায় না মলে।’ সুশান্ত ঘোষ, তন্ময় ভট্টাচার্য, ‘উচ্চবংশ’ বংশগোপাল চৌধুরী থেকে টিভি চ্যানেলে মারিতং জগতং দেখানো কৌস্তুভ চট্টোপাধ্যায়— সবাই সেই যৌনতাড়না ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত। এককাঠি ওপরে উঠে ভার্চুয়াল সেক্সেও কম যায় না কমরেডরা। বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের মতো একে অপরকে আঁকড়ে ধরেছে রাজ্যের দুই বিরোধী দল বিজেপি এবং সিপিএম। শেষোক্ত দলটি অবশ্য নামেই। ভাঁড়ার তাদের শূন্য।

আরও পড়ুন-তিক্ততা ভুলে নাচ গফ-সাবালেঙ্কার, ফ্রেঞ্চ ওপেন ফাইনাল দেখতে চাইনি : জকো

এককালের প্রবলপ্রতাপশালী সিপিএম আজ জলসাঘর ছবির বিশ্বম্ভর রায়। সাম্রাজ্য, ক্ষমতা সব শেষ। তবুও বাবুগিরি ষোলোআনা। বামের ভোট রামে শিফট করে তারা এখন দানবীর কর্ণ হয়েছেন। যৌন ব্যভিচারে অবশ্য সিপিএমের সুশান্ত ঘোষ কিংবা বংশগোপালদের সঙ্গে বিজেপির ব্রিজভূষণ, কার্তিক মহারাজদের ফটো ফিনিশের লড়াই চলছে। এ-বলে আমায় দেখ তো ও-বলে আমায়।
অতি সম্প্রতি কসবার দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজের ঘটনা নিঃসন্দেহে জঘন্য ঘটনা। অভিযুক্তদের রেয়াত করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তিই ওদের একমাত্র প্রাপ্য।
তবে মাথায় রাখতে হবে আমি বা আপনি জানার অনেক আগে, মিডিয়ায় রাষ্ট্র হওয়ার ঢের আগে কসবা থানার পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের হাতে হাতকড়া পরিয়েছে। পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করেছে। এটাই তার কাজ। কিন্তু যথোপযুক্তভাবে সে-কাজ করলে পুলিশের প্রশংসা তো করতেই হবে। সাধারণ ভাবে সিনেমার আঙ্গিকে একটা কনসেপ্ট আছে যে, পুলিশ সবসময় অপরাধ সংগঠিত হওয়ার অনেক পরে হেলতে-দুলতে আসে। ততক্ষণে প্রমাণ সব লোপাট হয়ে যায়।
কিন্তু এটা যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমল। বাংলার নব্য নবজাগরণের কান্ডারি মুখ্যমন্ত্রীর আমলে দলমতনির্বিশেষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পদক্ষেপ করা হয়। পুলিশ কোনও আলিমুদ্দিনের মুখাপেক্ষী দলদাস হয়ে থাকে না।

আরও পড়ুন-বিজেপির সম্পাদক ওড়িশায় ডাকাতি করতে গিয়ে সোনা-সহ পুলিশের জালে

শাসক দলের নাম ভাঁড়িয়ে যদি কেউ বা কারা জঘন্য অপরাধ সংগঠিত করে তবে তৎক্ষণাৎ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাউ, ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলাম, কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে ছোট্ট বালিকা খুনে প্রধান অভিযুক্তদের গারদে পুরতে বিন্দুমাত্র সময় নেয় না এখনকার পুলিশ। ২০২৪-এর আগস্টে তিলোত্তমা ধর্ষণ ও খুনে মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রাইকে (আদালতের নির্দেশে তদন্ত করা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-ও যাকে মূল অভিযুক্ত বলেছে) মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ বাম জমানার হারানো সুনাম পুনরুদ্ধার করেছে।
একইভাবে কসবা ল কলেজের কুৎসিত কাণ্ডে অভিযুক্ত লম্পটদের ঘাড় ধরে লকআপে ঢুকিয়েছে কলকাতা পুলিশ। অথচ যারা পান থেকে চুন খসলে তৃণমূলের দোষ খুঁজে পাচ্ছেন, বাম আমলের কুকীর্তির সাক্ষী টিভি চ্যানেলের ডিবেট আলোকিত-করা সেইসব প্রাক্তন আমলা, অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস-রা এমন ভাব করছেন যেন বাম জমানা ছিল সত্যযুগ। রশিদ খানের বোমা বিস্ফোরণ থেকে সাঁইবাড়ি, মরিচঝাঁপি, আনন্দমার্গী, বানতলা, তাপসী মালিক, নন্দীগ্রাম, নেতাইয়ের গণহত্যা— তাদের কাছে হয়তো ‘তুচ্ছ ঘটনা’।

Latest article