পুরস্কৃত ত্রিদিবের অফবিট গল্প

শিশু-কিশোর সাহিত্যিক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়। ‘এখনও গায়ে কাঁটা দেয়’ গল্প সংকলনের জন্য পেলেন সাহিত্য অকাদেমির বাল সাহিত্য পুরস্কার। নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বললেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

সাহিত্য অকাদেমির বাল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন। এর আগেও শিশু-কিশোর সাহিত্যের জন্য বেশকিছু পুরস্কার পেয়েছেন। সেগুলো কী কী?
শিশুসাহিত্যের জন্য ২০০৭ সালে পেয়েছি রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। সেই বছর বাংলা থেকে আমি ছাড়াও এই পুরস্কার পেয়েছেন নারায়ণ দেবনাথ, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, নবনীতা দেবসেন, শান্তা শ্রীমানি। মাঝে আরও কিছু পুরস্কার পেয়েছি। ২০২৩ সালে ছোটদের সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার আমাকে প্রদান করেছে বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার। প্রসঙ্গত, আমার বাবা দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও শিশুসাহিত্যের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার ও বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন।

আরও পড়ুন-মোহনবাগানে অভিষেক, ইস্টবেঙ্গলে হামিদ-কেভিন, লাল-হলুদে গোলকিপার কোচ সন্দীপ

পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের গুরুদায়িত্ব। কলকাতা বইমেলার আয়োজন। পত্রভারতী পরিচালনা। কিশোর ভারতী সম্পাদনা। তুমুল ব্যস্ততা। এর মাঝে পড়া-লেখার সময় পান কখন?
আমি সাধারণত রাতের বেলা পড়াশোনা এবং লেখালিখি করি। প্রায় দুটো পর্যন্ত। এখন পুজো সংখ্যার সাংঘাতিক চাপ। সম্পাদকদের তাগাদা রয়েছে। সময়ের মধ্যে লেখা দিতে হবে।

আপনার প্রিয় লেখক কারা? কাদের লেখা পড়ে আপনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন বা লিখতে এসেছেন?
ছোটবেলায় বাবার লেখা পড়তাম। অনুপ্রাণিত হতাম। এছাড়াও অনুপ্রাণিত হয়েছি প্রেমেন্দ্র মিত্র, আশাপূর্ণা দেবী, ক্ষিতিন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য, সত্যজিৎ রায়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা পড়ে।

আপনি মূলত শিশু-কিশোরদের জন্য লেখেন। পাশাপাশি লেখেন বড়দের জন্যও। কোন সময় থেকে বড়দের জন্য লিখতে শুরু করলেন?
আমার সাহিত্যচর্চার হাতেখড়ি সাতের দশকের মাঝামাঝি। ১৯৭৬ সালের জুন মাসে আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকায়। তখন কলেজে পড়ি। ‘নেশা’ নামে একটি গল্প প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর দীর্ঘ বিরতি। ১৯৮০-’৮১ সালে কিছু অনুবাদের গল্প লিখেছি। সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কমিক্স করেছি। লিখেছি প্রচ্ছদকাহিনিও। ১৯৮৪ সালে প্রথম উপন্যাস লিখি, জগুমামা। তারপর থেকে লিখেই চলেছি। বড়দের জন্য আমার লেখালিখি শুরু অনেক পরে। ২০১০-’১১ সাল নাগাদ। আমার বেশ কয়েকটি উপন্যাস রয়েছে। তার মধ্যে ‘আলোর মানুষ’, ‘লৌহপুরুষ’, ‘পিতামহ ভীষ্ম’ পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই লেখাগুলো কোনও সময় পুরস্কৃত হলে ভাল লাগবে।

আরও পড়ুন-তিক্ততা ভুলে নাচ গফ-সাবালেঙ্কার, ফ্রেঞ্চ ওপেন ফাইনাল দেখতে চাইনি : জকো

বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্য এই মুহূর্তে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে? শুধুমাত্র শিশু-কিশোর সাহিত্যচর্চা করেন, এমন সাহিত্যিক কি এখন আছেন?
কেউ কেউ হতাশার কথা বলেন। কানে আসে। তাঁদের বক্তব্য, এখন আর ভাল কিছু লেখা হচ্ছে না। আমি কিন্তু তাঁদের সঙ্গে সহমত নই। এই সময়ের শিশু-কিশোর সাহিত্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ। সাহিত্য বিষয়টা নদীর মতো। কখনও ঢেউ বাড়ে, কখনও ঢেউ কমে। কখনও জোয়ার আসে, কখনও ভাটা। মনে রাখতে হবে, এখন আর সেইরকম সাহিত্যিক নেই, যাঁরা শুধুমাত্র শিশু-কিশোর সাহিত্য চর্চা করেন। আমার বাবা জীবনে একটা লাইনও বড়দের জন্য লেখেননি। আজীবন শিশুসাহিত্যের সাধনা করে গেছেন। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায়, সুখলতা রাও, অজেয় রায়, শিশিরকুমার মজুমদার, ধীরেন্দ্রলাল ধর, ক্ষিতিন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য, সত্যজিৎ রায়ও লিখে গেছেন শিশু-কিশোরদের জন্য। তবে এখন আর সেইরকম কাউকে পাওয়া যাবে না। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী শিশু-কিশোরদের জন্য লেখার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন তাঁদের, যাঁরা বড়দের জন্য লিখতেন। এইভাবেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু, সমরেশ মজুমদারের অর্জুন, সুচিত্রা ভট্টাচার্যর মিতিন মাসি জনপ্রিয় হয়েছে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কোনওদিন ভাবেননি ছোটদের জন্য লিখবেন। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর উৎসাহেই তিনি শিশু-কিশোর সাহিত্য রচনা করেন এবং সাফল্য পান। এঁদের লেখাগুলো বাংলা সাহিত্যের ল্যান্ডমার্ক হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্য খুব ভাল জায়গায় দাঁড়িয়ে। ‘কিশোর ভারতী’, ‘শুকতারা’, ‘আনন্দমেলা’, ‘সন্দেশ’-সহ বিভিন্ন পত্রিকার হাত ধরে একঝাঁক নতুন লেখক উঠে এসেছেন। ফলে নিরাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই।

আরও পড়ুন-বিজেপির সম্পাদক ওড়িশায় ডাকাতি করতে গিয়ে সোনা-সহ পুলিশের জালে

‘এখনও গায়ে কাঁটা দেয়’ বইয়ের জন্য এইবছর সাহিত্য অকাদেমির বাল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন। বইটা সম্পর্কে কিছু বলুন। কী ধরনের গল্প আছে? এই পুরস্কার কতটা আনন্দ দিয়েছে?
বইটা ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়েছে। ‘পত্রভারতী’ থেকে। আছে মোট ২০টা গল্প। প্রত্যেকটাই এমন গল্প, পড়া-মাত্র থ্রিল হবে। প্রথম গল্পের নাম ‘এখনও গায়ে কাঁটা দেয়’। অলৌকিক গল্প। এছাড়াও আছে সায়েন্স ফিকশন, সায়েন্স ফ্যান্টাসি, সামাজিক, ভৌতিক, ঐতিহাসিক, ইতিহাস সুরভিত, রূপকথা প্রভৃতি নানা বিষয়ের গল্প। সাধারণ থ্রিলার বলতে যা বোঝায়, গল্পগুলো তেমন নয়। একেবারেই অফবিট। লিখেছি ২০১৪ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে। লিখে মজা পেয়েছি। এই গল্প সংকলন পুরস্কৃত হল, খুব ভাল লাগছে। যে কোনও পুরস্কারই আনন্দের। দেশের সর্বোচ্চ সারস্বত প্রতিষ্ঠানের শিশুসাহিত্য বিভাগে সর্বোচ্চ পুরস্কার অবশ্যই গৌরবের। শ্লাঘার। শিশু-কিশোরদের নিয়ে আমার লেখালিখি সার্থক হল। শেষে পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলব, সঙ্গে থাকুন। আপনারা আছেন বলেই আমরা আছি। যে ভালবাসা আপনাদের কাছে পেয়েছি, আশা করি সেই ভালবাসা ভবিষ্যতেও পাব।

Latest article