তিনশো টাকা দিয়ে বাংলাদেশে পুশব্যাক ফিরে এলে গুলি খাবি বিএসএফের হুমকি

বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে এমন নিদারুণ বর্বরতা, কেন? ধিক্কার বিজেপিকে। ধিক্কার অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন বিএসএফকে।

Must read

প্রতিবেদন : বিজেপির কেন এত বাংলা বিদ্বেষ! বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে এমন নিদারুণ বর্বরতা, কেন? ধিক্কার বিজেপিকে। ধিক্কার অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন বিএসএফকে। বৈধ আধার-প্যান কার্ড থাকার পরেও ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে বাংলা শ্রমিকদের সীমান্ত পার করে দিচ্ছে বিএসএফ। শ্রমিকদের হাতে জোর করে বাংলাদেশি ৩০০ টাকা গুঁজে দিয়ে বিএসএফের হুমকি—ফিরলে গুলি করে দেব। বর্বরতার চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে তারা।
মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাঁদের অপরাধ কী ছিল? তাঁরা কথা বলেছিলেন বাংলায়। তাতেই জুটেছিল বাংলাদেশি তকমা। মহারাষ্ট্র পুলিশ তুলে দিয়েছিল বিএসএফের হাতে। তারপরই বিএসএফের যে কীর্তিকলাপ সামনে এল, তা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, অপরাধযোগ্যও বটে।

আরও পড়ুন-৪ সমবায় তৃণমূলের

মহারাষ্ট্রে কাজ করতে যাওয়া বাংলার শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার পর, তাঁরা একে একে মুখ খুলতেই বেরিয়ে আসছে বিএসএফের কীর্তিকলাপ, রোমহর্ষক নানা কাহিনি। মুর্শিদাবাদের মিনারুল শেখ জানিয়েছেন, আমরা বিএসএফের কাছে চিৎকার করে অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু কেউ শোনেনি। তারা আমাদের ৩০০ বাংলাদেশি টাকা দিয়ে সীমান্ত পার হতে বলেছিল। সতর্ক করে দিয়েছিল, আমরা যদি ফিরে যাই তাহলে গুলি করবে।
গত ১১ জুন, মহারাষ্ট্রের পুলিশ ভুল করে মিনারুল এবং আরও ছয়জন অভিবাসী শ্রমিককে আটক করে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। ১৪ জুন শিলিগুড়ির কাছে সীমান্ত পার করে দেওয়া হয়। মুর্শিদাবাদ পুলিশ ঘটনাটি জানতে পেরে নাগরিকত্বের নথি সংগ্রহ করে বিএসএফের কাছে জমা দেয়। বিএসএফ এরপর ১৬ জুন তাঁদের ফেরাতে বাধ্য হয়। ফিরেই তাঁরা সংবাদমাধ্যমের সামনে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা শুনলে ভয়ে কাঁটা দেবে। মুম্বই থেকে তাঁরা কীভাবে বাংলাদেশে পৌঁছলেন? মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার মিনারুল বলেন, আমি মুম্বইয়ের কাছে থানেতে থাকতাম। পরিযায়ী শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি অনলাইনে পোশাকের ব্যবসা করতাম। বাংলাদেশের কিছু ক্রেতাও ছিল আমার। তাদের মোবাইল নম্বরের রেফারেন্স ব্যবহার করে, পুলিশ আমাকে ১১ জুন বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড দেখানো সত্ত্বেও থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে শিলিগুড়ির একটি বিএসএফ
ক্যাম্পে, তারপরে সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। সশস্ত্র সৈন্যরা আমাদের ৩০০ বাংলাদেশি টাকা দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করতে বলে। সেই সঙ্গে হুমকি দিয়ে বলে, পিছনে ফিরেও তাকালেই গুলি করব। আমরা জঙ্গলে হেঁটে রাতের মধ্যে নো-ম্যানস ল্যান্ডে পৌঁছই। সেখানে স্থানীয়রা আমাদের খাবার এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একটি ফোন দেন।

আরও পড়ুন-পুলিশকে মার বিজেপির হাতে আক্রান্ত তরুণী

মুর্শিদাবাদের মেহবুব শেখকেও ১১ জুন থানের মীরা রোডে একটি চায়ের দোকান থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তাঁর কাছেও আধার, প্যান কার্ড ছিল। পুলিশ ফোন ও কাছে থাকা ৯,০০০ টাকা নিয়ে নেয়, মারধর করে। সীমান্তে নিয়ে গিয়ে বিএসএফ শূন্যে গুলি চালিয়ে ভয় দেখিয়ে বলে জঙ্গলে যেতে। নাহলে গুলি করবে।
পূর্ব বর্ধমানের মুস্তাফা কামাল শেখেরও গল্পটিও প্রায় একইরকম। তাঁকে নালাসোপাড়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মুস্তাফা বলেন, আধার কার্ড, প্যান কার্ড দেখালে পুলিশ বলে ওইগুলি জাল। মারধর করে সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার পরে বিএসএফ আমাদের ৩০০ বাংলাদেশি টাকা দিয়ে বলে, গাড়ি নিয়ে বাড়ি যা, ভুল করেও ভারতে ফিরে আসবি না।
মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার শামিম খান এবং নাজিমুদ্দিন মণ্ডলের সঙ্গেও ঘটে অনুরূপ ঘটনা। তাঁরা জানান, বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে। অত্যাচার করা হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফজের মণ্ডল ও তসলিমা মণ্ডলের সঙ্গেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।

Latest article