এ-রাজ্যে মা-বোনেরা নিরাপএ-রাজ্যে মা-বোনেরা নিরাপদেই আছেদেই আছে

এটা পশ্চিমবঙ্গ, ডবল ইঞ্জিন শাসিত জঙ্গলরাজ এখানে চলে না। তাই দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে হাতিয়ার করে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করবেন না। কসবায় যা হয়েছে, সেটা জঘন্যতম অপরাধ। আমরা সবাই দোষীদের চরম শাস্তি চাই। একই সঙ্গে চাই না, এ-নিয়ে রামরেডদের শকুনের মতো উল্লাস। লিখছেন অঞ্জিষ্ণু চক্রবর্তী

Must read

কসবার ল’কলেজে যে মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে, আমাদের দল তৃণমূল কংগ্রেস সেই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে এবং ধিক্কার জানাচ্ছে। এই ঘটনায় আমরা প্রত্যেকে মর্মাহত। ইতিমধ্যেই অভিযোগ দায়ের করার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ প্রশাসন তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। এমনকী কলেজের নিরাপত্তারক্ষীও গ্রেফতার হয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে চারজন প্রতিনিধির একটি সিট গঠন করা হয়েছে এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য। এবং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যাপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার যে কথা বলেছেন যে, এই ধরনের অপরাধের সাথে যারা যুক্ত, এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ যারা ঘটায় তাদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির শুধু নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন।
যে বা যারা এই নিন্দনীয় ঘটনা ঘটায়, সেই ব্যক্তি যে জাতি যে ধর্ম যে দলেরই হোক না কেন, মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়ের সরকার তার ওপর কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর। তার কারণ তৃণমূল কংগ্রেস এবং বাংলার সরকার কোনও অপরাধ ও অপরাধীকে রেয়াত করে না। আমরা দেখেছি আরজি কর-কাণ্ডের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অপরাধীর ফাঁসির দাবি করেছিলেন। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সমাজ থেকে এই ধরনের মানসিক ব্যধিকে যাতে সমূলে উৎপাটিত করা যায় তার জন্য তিনি বিধানসভায় “অপরাজিতা ধর্ষণ বিরোধী বিল” পাশ করেন। যে বিল দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তির মাধ্যমে অপরাধ দমন করতে অপরিহার্য। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, কেন্দ্রীয় সরকার পরিকল্পিতভাবে এই বিল যাতে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পাশ না হয়, যাতে এই বিল আইনে পরিণত না হয় সেই চক্রান্ত করে চলেছে। বিজেপি চায় না অপরাজিতা আইন আনতে তার কারণ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ ও খুনের মতো জঘন্য অপরাধ ঘটে চলেছে আর তার মধ্যে বিজেপির সদস্য, নেতা, এমএলএ, এমপিরা জড়িত থাকছে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা, বারবার স্তম্ভিত করেছে সারা দেশকে। হাতরাস থেকে উন্নাও, নারী হয়েছে লালসার স্বীকার। গণধর্ষণ, খুন, ডাবল ইঞ্জিন সরকারের রাজত্বে নিত্যদিনলিপি। বিজেপির গুজরাতে ২০২২ সালে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের দিনে, বিলকিস বানো মামলায় জেলবন্দি ১১ জন আসামিকে মুক্তি দিয়েছিল বিজেপি সরকার। তবে এখানেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। ওই ১১ জন ধর্ষক-খুনিকে মালা পরিয়ে বীরের সম্মান জানিয়েছিল বিজেপি কর্মীরা।

আরও পড়ুন-আজ লিগে ডায়মন্ড হারবার

পদ্মশ্রী প্রাপ্ত বিজেপির ধর্মীয় বিভাজনের মুখ কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে যখন চাকরি দেওয়ার নাম করে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে, বিজেপির নেতারা মূক-বধির হয়ে যান। বিজেপির বদান্যতায় চলা গোদি মিডিয়াগুলির ক্যামেরায় তা ধরা পড়ে না।
আশ্রমের ঘেরাটোপের মধ্যেই শিষ্যাকে ধর্ষণে অভিযুক্ত আসারাম বাপু যখন বিজেপির সর্বভারতীয় নেতাদের সঙ্গে একই ফটোফ্রেমে ধরা দেন, তখন কি ধরে নিলে ভুল হবে যে, এই আসারাম বাপুদের পৃষ্ঠপোষক বিজেপি!
২০২৩ সালে উত্তরপ্রদেশের আইআইটি-বিএইচইউ-তে ২২ বছর বয়সি এক ছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত আসামিকে যখন নরেন্দ্র মোদি, জেপি নাড্ডার মতো সর্বভারতীয় বিজেপির নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা যায়, তখন বিজেপি নেতাদের নৈতিক অধিকার থাকে না এই বাংলার নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার।
কসবা ল’ কলেজে অনৈতিক ঘটনায় অভিযুক্তের চরম শাস্তি তৃণমূল কংগ্রেস চায়। দল সাংবাদিক সম্মেলন করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তা ঘোষণা করেছে। পুলিশ প্রশাসন অভিযোগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার করেছে অভিযুক্তদের। কিন্তু সিপিএম, রাজ্য সরকার বা তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে বিষোদগার করছে, তারই বা নৈতিক অধিকার কতটা! বাম সরকারের আমলে একের পর এক ঘটে যাওয়া নারী নির্যাতনের ঘটনা কি ভুলে গিয়েছে বাংলার মানুষ? ১৯৯০ সালে বানতলা রোডে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী ও ইউনিসেফের এক মহিলা স্বাস্থ্য আধিকারিককে ধর্ষণ করে সিপিএম-এর দুষ্কৃতীরা। তাদের রক্ষা করতে গিয়ে খুন হন গাড়ির চালক। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী স্মার্টলি বলেছিলেন, “এরকম ঘটনা তো কতই ঘটে।” তোলপাড় হয়েছিল সারা দেশ। এখন সিপিএম হাত-মুখ ধুয়ে নিয়েছে।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

২০০৩ সালে ধানতলায় বাস থেকে নামিয়ে বরযাত্রীদের গণধর্ষণ করে সিপিএম-এর ক্যাডাররা। পুলিশমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বদান্যতায় অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পায়। সিপিএম এখন ধোয়া তুলসীপতা!
একটি মেয়ে ভূমিষ্ঠ হবার সময় থেকেই আমাদের সরকার তার পাশে থাকে। একজন মা সন্তানসম্ভবা হবার পর থেকেই আশা- দিদিরা তাঁর সঙ্গে ব্লক হাসপাতালের যোগসূত্র স্থাপন করেন এবং তাঁর দেখভাল শুরু হয়, যাতে মা সুস্থ থাকে ও একটি সুস্থ সবল সন্তানের জন্ম দিতে পারেন। একটি মেয়ের সমগ্র জীবনে নানা প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁকে সহযোগিতা করে আমাদের সরকার। শিক্ষা গ্রহণের জন্য, শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী, সবুজসাথীর সাইকেল, স্মার্ট ফোন-সহ নানা প্রকল্প। সাবালিকা অবস্থায় বিয়ে করলে রূপশ্রী প্রকল্পের ২৫০০০ টাকা। পাশাপাশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও তাঁকে শক্তিশালী করে তুলেছে আমাদের সরকার। যাতে মহিলারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলায় ২ কোটি ২১ লক্ষ মহিলার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন বাংলার মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত ও পুরসভায় জনপ্রতিনিধিত্বে পঞ্চাশ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম করা হয়েছে।
এই রাজ্যে আজ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির তুলনায় এই বাংলায় নারীরা নিরাপদে আছেন। মহিলাদের জন্য ভারতে সেফেস্ট সিটি কলকাতা। এ তথ্য এনসিআরবির।
তবুও একটি নারী নির্যাতনও আমরা চাই না। সামাজিক এই ব্যাধী নির্বাসনের লাগাতার প্রয়াস করে চলেছে এই সরকার। তাই কোনও অঘটন ঘটলেই পুলিশ প্রশাসন তৎপরতার সঙ্গে অ্যাকশন নেয়। অপরদিকে সিপিএম, বিজেপি প্রতিবাদের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, কুৎসা, অপপ্রচার চালাচ্ছে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে সামনে রেখে, এটা বাংলার মানুষ বোঝে।

Latest article