কর্পূর: বিশ সাল বাদ খুলছে কেস ফাইল

১৯৯৭-তে কর্পূরের মতো উধাও হয়ে গিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি কন্ট্রোলার মনীষা মুখোপাধ্যায়। মনীষার অন্তর্ধান নিয়ে ছবি করছেন পরিচালক অরিন্দম শীল। নাম ‘কর্পূর’। সম্প্রতি শহরের এক পাঁচতারা হোটেলের তারকাখচিত সন্ধেয় ‘কর্পূর’-এর লুক ও লোগো প্রকাশিত হল। লিখছেন জয়িতা মৌলিক

Must read

সোনার কেল্লায় দুষ্টুলোক ভ্যানিশ হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি কন্ট্রোলার মনীষা মুখোপাধ্যায়। আজও কোনও খবর মেলেনি তাঁর। প্রৌঢ়া মা তৎকালীন শাসকদলের নেতা থেকে পুলিশ— সবার দরজায় ঘুরেছেন। দু-মলাটে সেই ঘটনাকে কাহিনির আঙ্গিকে বেঁধেছেন দীপান্বিতা রায়। তাঁর ‘অন্তর্ধানের নেপথ্যে’ উপন্যাসকে ভিত্তি করেই ছবি করছেন পরিচালক অরিন্দম শীল। নাম ‘কর্পূর’ (Korpoor)। কর্পূরের মতোই ১৯৯৭-এ উধাও হন মনীষা। বিশ সাল বাদ কি ফিরবেন মনীষা ওরফে পর্দার মৌসুমি? সেটাই রহস্য। আর চ্যালেঞ্জও। কারণ ১৯৯৭ থেকে ২০১৯-এ রাজনীতি থেকে মহানগর— সবেরই তো পটবদল হয়েছে। কীভাবে ধরা দেবেন চরিত্ররা?
সম্প্রতি শহরের এক পাঁচতারা হোটেলের তারকাখচিত সন্ধেয় ‘কর্পূর’-এর লুক ও লোগো প্রকাশ হল। আর তাতে পরিচালক অরিন্দমের বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ, এই ছবির সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। যদি তা মেলে তা একেবারেই অনিচ্ছাকৃত।
বাম আমলের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দুর্নীতির ভূরি ভূরি অভিযোগ ওঠে। সেই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি কন্ট্রোলারের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্ক ছিল শীর্ষ বাম নেতৃত্বের। তিনি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর সই-করা ফাঁকা মার্কশিট। বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ নথি। মনীষাকে নাকি খুন করার নির্দেশ ছিল! সত্যি কি তিনি খুন হয়েছিলেন? নাকি এখনও জীবিত? কারা ষড়যন্ত্র করেছিল তাঁকে মারার? তিনি কি ফিরবেন কোনওদিন! কর্পূর ঘিরে এই প্রশ্নগুলিই এখন দর্শকদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাই শ্যুটিং শুরুর আগেই তুমুল চর্চা ছবি ঘিরে।
মনীষাকে খুঁজতে লালবাজারের গোয়েন্দা দফতরকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। সেই গোয়েন্দা দফতরের গোয়েন্দা রাখহরি গোস্বামী। সেই চরিত্রে রয়েছেন ব্রাত্য বসু।
পরিচালকের কথায়, আদ্যন্ত পলিটিক্যাল থ্রিলার ‘কর্পূর’ (Korpoor)। সেই থ্রিলারে রাজনীতির প্রেক্ষাপট থাকে তবে সেটা বাস্তব নয়; সেটা কাহিনি। ছবিতে দুই রাজনৈতিক নেতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ও অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায়। কুণালের লুক নিয়ে ইতিমধ্যেই তোলপাড়। তাঁর মধ্যে তৎকালীন রাজনৈতিক নেতার ছাপ স্পষ্ট বলে দাবি করেছেন অনেকেই। কুণাল জানালেন, তাঁর দেখা কোনও রাজনৈতিক নেতার ছাপ এই চরিত্রে আছে কি না সে-বিষয়ে তিনি মন্তব্য করবেন না। তবে তিনি কুণাল ঘোষকেই নাকি চরিত্রের মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন! সাহেবের চরিত্রের লুকটি পরিচালকের ভাষায় তার মধ্যে শশী থারুরের ছাপ স্পষ্ট।
ছবিতে সবচেয়ে বড় বিষয় হল, দুটো সময়কাল—১৯৯৭ আর ২০১৯। অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। কম্পিউটার, ইন্টারনেট—এসবের প্রভাবে বদলেছে তদন্ত প্রক্রিয়া। মনীষা-অন্তর্ধানের খবর প্রকাশিত হয়েছিল সেই সময়ের বাংলা দৈনিকগুলিতে। এখন দৈনিকের পাশাপাশি এসে গিয়েছে নিউজ চ্যানেল এবং নিউজ পোর্টাল। তাই ‘কর্পূর’-এও রয়েছে এক নিউজ পোর্টালের কথা। যেখানকার এডিটর হিসেবে দেখা যাবে অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অনন্যা জানালেন, সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে তিনি তাঁর কাছে আসা সাংবাদিকদের থেকেই শিখছেন। আর তাঁর সঙ্গে রয়েছেন তরুণ সাংবাদিকের চরিত্রে অর্পণ ঘোষাল। আর ইনটার্নের চরিত্রে পুলোমা ভট্টাচার্য।

আরও পড়ুন: বাংলায় কথা বলা যদি হয় অন্যায় তবে তোমরা বাংলা থেকে হও বিদায়

ছবির মূল কেন্দ্রবিন্দু ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। দীপান্বিতার গল্প পড়েই মৌসুমির চরিত্রটি ভাল লেগে যায় তাঁর। অরিন্দমের প্রস্তাবে তাই রাজি হয়ে যান। মনীষার চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে তাঁর কাছে রেফারেন্স কী ছিল? ঋতুপর্ণা জানালেন, দীপান্বিতার বইটি তাঁর কাছে বড় রেফারেন্স। এছাড়া পরিচালক তাঁকে স্ক্রিপ্ট বুঝিয়েছেন। নিজের অভিনীত চরিত্র নিয়ে বরাবরই কনফিডেন্ট ঋতুপর্ণা।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ছবির প্রেক্ষাপট। মহানগর ১৯৯৭-এর থেকে ২০১৯-এ পাল্টে গিয়েছে। অরিন্দম জানালেন, এই কারণেই দীর্ঘদিন প্রি-প্রোডাকশনের কাজ চলেছে। গলি, তস্য গলি খুঁজে বেড়িয়েছে টিম কর্পূর। ৫৭টি লোকেশনে হবে শ্যুটিং। ৩৪টি চরিত্র রয়েছে কর্পূরে (Korpoor)। তার মধ্যে ১৯টি চরিত্রের দুটো করে লুক। একটি লুক ১৯৯৭-এর। আরেকটি ২০১৯-এর। চেহারায় ফ্যাশনে, স্টাইলে বদল, হয়তো রাজনীতির রঙেও বদল! এইসব মাথায় রেখেই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের লুক সেট করা হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বয়স। এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে মেকআপের। ছবিতে এআই-এর ব্যবহারও হচ্ছে। ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রথীজিৎ ভট্টাচার্য। প্রযোজনা ‘ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন’ আর ‘কাহাক স্টুডিয়োজ’-এর।
২০১৯-এ কি ফিরে এলেন মনীষা ওরফে পর্দার মৌসুমি? কীভাবে ফিরে এলেন? তাই নিয়ে কৌতূহল এখন তুঙ্গে। শ্যুটিং শুরুর আগেই কোনও বাংলা ছবি নিয়ে এতটা চর্চা শেষ কবে দেখা গিয়েছিল মনে করতে পারছে না টলিউড।

Latest article