বার্মিংহাম, ৬ জুলাই : কে বলে ভারত(India vs England) এজবাস্টনে জেতে না। জিতল। তারুণ্যের ঝাঁজে এযাবৎ চলে আসা মিথ সাগরপারে ভূলুণ্ঠিত। করুণ, রাহুলকে বাদ দিলে কত গড় বয়স এই দলের? উল্টোদিকে রুট, স্টোকসের মতো পোড়খাওয়ারা। তাও হল না। ইংল্যান্ড স্রেফ উড়ে গেল আকাশ দীপের হাতে। ৯৯ রানে ৬ উইকেট। ম্যাচে ১০ উইকেট। বুমরা খেললে সুযোগ পেতেন না। কিন্তু সুযোগ পেয়ে সেটা কাজে লাগালেন বঙ্গ পেসার। তাঁর হাত ধরে ৩৩৬ রানে জিতল ভারত। লিডসের বদলা হয়ে গেল কখনও না জেতা মাঠে। সিরিজ এখন ১-১।
কাকে ছেড়ে কার কথা বলা যায়। সবার আগে অবশ্যই শুভমন। রোহিত তাঁর কাঁধে মুকুট রেখে গিয়েছেন। তারপর? দুই টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি, একটি ডাবল সেঞ্চুরি। পাশে যশস্বী। পিছনে বিতর্ক পড়ে আছে। আগের টেস্টে গোটা চারেক ক্যাচ ফেলে স্লিপ ক্যাচিং থেকে ছিটকে গিয়েছেন। কিন্তু হাত থেকে ব্যাট কেউ কেড়ে নিতে পারেনি। ২২ গজে নামলেই শিরোনামে মুম্বই বাঁহাতি। বাকি থাকলেন সিরাজ ও আকাশ দীপ। ওঁরা দেখালেন ভরসা রাখলে পারফর্ম করবেন। পিছন থেকে অভিজ্ঞ রাহুল কিন্তু ভরসা জুগিয়েছেন তরুণদের।
এজবাস্টন টেস্ট শুরু হওয়ার আগে বুমরার না খেলা নিয়ে চর্চা হয়েছিল। প্রাক্তনরা বলছিলেন, তাহলে আর জেতা হল না। আসল লোককেই তো খেলানো হল না। কে উইকেট নেবে। এই জয় সেইসব প্রশ্নের জবাব। সেইসঙ্গে সিরাজ ও আকাশ দেখালেন, তাঁরা দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। প্রথম ইনিংসে সিরাজ আধ ডজন উইকেট নিয়েছিলেন। আকাশের সংগ্রহে ছিল চার উইকেট। দ্বিতীয় দফায় ঠিক উল্টোটা। আকাশ পিছনে ফেলে দিলেন সিরাজকে। ১০ উইকেট নিয়ে কেরিয়ারের সেরা বোলিং তাঁর।
বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিলই। সেই বৃষ্টি এল আর সকালের খেলা অনেক দেরিতে শুরু হল। এমনিতে খেলা শুরু হওয়ার আগে বৃষ্টি থেমেছিল। পিচ কভার সরিয়ে খেলা শুরুর প্রস্তুতি নিতে নিতেই আবার মেঘ বার্মিংহামের আকাশ ঢেকে দেয়। ভারতীয় সময় তিনটে নাগাদ জোর বৃষ্টি। এত বৃষ্টি যে কভার অঞ্চলে জল জমে গিয়েছিল।
হাওয়া অফিস অবশ্য জানিয়েছিল যে পরের দিকে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে। হলও তাই। ভারতীয় সময় পাঁচটা দশে খেলা শুরু হয়। কিন্তু সকালের বৃষ্টিতে ১০ ওভার কমে যায়। সারা দিনে ৯০ ওভারের বদলে শুভমনদের ওভার কমে যায়।
আরও পড়ুন-বিজেপির অসমে হিন্দু-বিতাড়ন, ২১৮টি পরিবারকে উচ্ছেদ একদিনেই
কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার পর আকাশের ঝটকায় ইংল্যান্ড চাপে পড়েছিল। বঙ্গ পেসার প্রথমে পোপকে (২৪) বোল্ড করেন। শর্ট বল বুকের উপর থেকে নামিয়েছিলেন পোপ। কিন্তু পেস বেশি থাকায় সেটা মাটিতে পড়ে উইকেট ভেঙে দেয়। এরপর ব্রুক (২৩) লেগ বিফোর হয়েছেন। আকাশের অফ কাটার দ্রুত ভিতরে এসে ব্রুকের পা পেয়ে যায়। রিভিউ তাঁকে বাঁচাতে পারেনি।
এরপর অবশ্য খেলা ধরে নিয়েছিলেন স্টোকস আর স্মিথ। আগের তিন ইনিংসে রান পাননি ইংল্যান্ড অধিনায়ক। তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিল দল। কিন্তু লাঞ্চের আগের ওভারে ওয়াশিংটনের বলে স্টোকস লেগ বিফোর হয়ে যান ৩৩ রানে। ইংল্যান্ড তখন ১৫৩/৬। জয়ের চেষ্টা দূরে থাক, ইংল্যান্ড যে শেষদিনে ড্রয়ের জন্য খেলবে সেটা আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন তাদের ব্যাটিং কোচ।
পরে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্মিথ। যাঁকে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে নতুন আবিষ্কার বলা হচ্ছে। যিনি ব্যাট হাতে শুধু দলকে নিরাপত্তা দিচ্ছেন না, ঝড়ের গতিতে খেলে বাজবলকেও সাহায্য করছেন। এদিন স্মিথ ৯৯ বলে ৮৮ রান করেছেন। এমন নয় যে তিনি ইংল্যান্ডকে জিতিয়ে দিতেন। তাঁদের সামনে তখনও ভারতের রানের পাহাড়। কিন্তু স্মিথ অন্তত রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে তাতেও শেষরক্ষা হয়নি।