দুনিয়া ঘুরছেন আর গপ্পো শোনাচ্ছেন! কালো টাকা ফিরল কই?

জুল ভার্ন যদি বেঁচে থাকতেন এবং এই অসামান্য সৃষ্টির যদি নতুন এডিশন হত তবে মোদিজিকে সামনে রেখে তিনি অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইট হান্ড্রেড ডেইজ বা তার চেয়েও বেশি কিছু সংযোজন করতেন। নতুন সংকলন হটকেক হত নিঃসন্দেহে। লিখছেন পার্থসারথি গুহ

Must read

প্রখ্যাত সাহিত্যিক জুল ভার্নের অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটটি ডেইজ তো অনেকেই পড়েছেন। ভাবুন তো মাত্র আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ করার কী অভিনব পরিকল্পনা গল্পের ছলে তুলে ধরেছেন বিশ্ববন্দিত সাহিত্যিক। জানি না জুল ভার্নের অনুপ্রেরণায় কিনা, আমাদের আদরণীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজিও (naredra modi) ক্ষমতায় আসা ইস্তক এমনই বিশ্বভ্রমণের ফন্দি এঁটেছেন। বলাবাহুল্য, আশি দিনে তাঁর দুনিয়া ভ্রমণ সম্ভব হয়নি। জুল ভার্ন যদি বেঁচে থাকতেন এবং এই অসামান্য সৃষ্টির যদি নতুন এডিশন হত তবে মোদিজিকে সামনে রেখে তিনি অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইট হান্ড্রেড ডেইজ বা তার চেয়েও বেশি কিছু সংযোজন করতেন। নতুন সংকলন হট কেক হত নিঃসন্দেহে।
বস্তুত, মোদিজির (naredra modi) বিশ্বভ্রমণ সব রেকর্ড ভেঙে দিতে চলেছে। হয়তো কোনও দিন গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম তুলেও ফেলতে পারেন আমাদের ‘বরিষ্ঠ’ প্রধানমন্ত্রীজি।
সম্প্রতি মোদিজি আটদিনের জন্য ফের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সফরে বেরিয়েছেন। নেটিজেনরা ইতিমধ্যেই এই সফরকে অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটটি ডেইজের টি-২০ সংস্করণ বলে তুলে ধরছেন। তিনি এত জায়গায় যাচ্ছেন, সরকারি সফরে মাথা হয়ে বিভিন্ন দেশে
‘নাম কুড়োচ্ছেন’ কিন্তু আজ পর্যন্ত কোটি কোটি ভারতীয়র রক্তজল করা করের টাকা মারা, ব্যাঙ্কের টাকা তছরুপ করা প্রতারকদের ঘেঁটি ধরে দেশে ফেরাতে পারলেন না? এই তাঁর ৫৬ ইঞ্চি দম?
নাকি ইচ্ছে করেই না পারার ভান করছেন? কারণ, মাঝেমধ্যেই মোদিজির অনুপ্রাণিত মিডিয়া (মোডিয়া বলাই শ্রেয়) খবর করে এই নাকি ধাপ্পাবাজ প্রবঞ্চকদের বীরদর্পে দেশে ফেরানো হচ্ছে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কোনও এক অজ্ঞাতকুলশীল দেশের সঙ্গে নাকি সরকারের কথা ফাইনাল। কখনও শোনা যায় ইউনাইটেড কিংডমে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকা তস্কররা বিমানে উঠল বলে! পরবর্তীতে সবই রূপকথার গল্পে পর্যবসিত হয়। তারপরেই দেখা যায় কিংফিশার এয়ারলাইন্সের কুখ্যাত বিজয় মালিয়া এবং ললিত মোদি লন্ডনের বুকে হেঁড়ে গলায় গান ধরে সামার ফেস্টিভ্যালের মোচ্ছবে ব্যস্ত। ভাবুন তো? এদের নাকি ফেরানোর তোড়জোড় করছে কেন্দ্র! পুরো ব্যাপারটা কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে না? জানতি ভারি ইচ্ছে করে যে প্রধানমন্ত্রীজি (naredra modi) আজ পুতিনবাবুর সঙ্গে কথা বলছেন তো কাল ট্রাম্প সাহেবের মহড়া নিচ্ছেন। পরশু নেতানিয়াহু বা খোমেইনি সাহেবকে যুদ্ধ নয় শান্তির পাঠ পড়াচ্ছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাঁর বার্তালাপ লেগেই থাকে। সেই তিনি একবারও সময় পান না দেশের টাকা লুঠ করা চোর-ডাকাতদের সাম্প্রতিকতম স্ট্যাটাস জানতে? একটা ফোন ঘোরালেই তো হয়। ক্ষমতায় আসার আগে তাঁর গালভরা ঠাকুরমার ঝুলি (ঠাকুরদার ঝুলি বলাই ভাল) শুনে দেশের কোটি কোটি মানুষ কত কি না ভেবে বসেছিল। দিন-আনি-দিন-খাই মানুষও ভেবেছিলেন মোদিবাবুর আচ্ছে দিন এসে গেলে রাশি রাশি কালো টাকা উদ্ধার হবে। প্রত্যেকের ব্যাঙ্কে পনেরো লাখ টাকা ঢুকে যাবে। কুঁজোরও তো চিৎ হতে ইচ্ছে হয়। হতদরিদ্রের মনেও বড় আশা জেগেছিল। এদিকে ক্ষমতায় আসার এগারো বছর অতিক্রান্ত। এই নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই গল্পের গরু গাছে উঠেছে। বলাবাহুল্য, মগডালে উঠে গিয়েছে। আর সরলসিধা দেশবাসী সেই ছেলেভোলানো গল্পে মশগুল হয়ে কত চেষ্টা করছে মিথ্যাচারের সেই উচ্চতাকে ছুঁতে। কিন্তু নাগাল পেলে তো! বিজয় মালিয়া, ললিত মোদি, নীরব মোদি, মেহুল চোকসির মতো ‘গুণধর’ বাটপাড়রা যে কলার উঁচিয়ে বিদেশের মাটিতে ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে তা জলের মতো স্পষ্ট। কখনও লর্ডস বা উইম্বলডনের কোর্টেও দেখা মিলছে এই প্রতারকদের। ঠিক যেমন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থাকলে একসময় শারজার ভিআইপি বক্সে দেখা যেত দাউদ ইব্রাহিমের মতো মাফিয়া কিং পিনকে। সঙ্গে পরিবৃত বলিউডের একগুচ্ছ অভিনেতা-অভিনেত্রী। দেশে থাকাকালীনও সখীদের মাঝে লাম্পট্যের শীর্ষে বিচরণ করতেন মালিয়া। বিদেশের মাটিতেও তাঁর চারপাশে চিয়ার গার্লসরা হাজির। অর্থাৎ, বেশ বহাল তবিয়তেই আছেন। ক্যারিবিয়ান তারকা ক্রিস গেইলকেও দেখা গিয়েছে এই পার্টিতে তাঁর প্রাক্তন মালিকের সঙ্গে মৌজমস্তি করতে।
অন্যদিকে, মামা মেহুল চোকসি এবং তার সুযোগ্য ভাগ্নে নীরব মোদি তো দেশের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক পিএনবির ১২৩৬ কোটি টাকা গায়েব করে দিব্যি ভেগে গিয়েছেন। হর্ষদ মেহতার শেয়ার কেলেঙ্কারির চারগুণ বেশি এই স্ক্যাম ইতিমধ্যে সব কেলেঙ্কারি ছাপিয়ে গিয়েছে।
মেহুল চোকসির সাম্প্রতিক অবস্থান ওয়েস্ট ইন্ডিজের অ্যান্টিগা ও বারবুডা দ্বীপপুঞ্জ ঘুরে ইউরোপের বেলজিয়াম। স্ত্রী সেখানের নাগরিক। ব্যস! চোকসিও জমিয়ে বসেছেন। ভাগ্নে নীরব মোদি বেলজিয়ামে থাকছেন আবার ইউরোপে টইটই করছেন। আর মোদি সরকার কুমিরছানা দেখানোর মতো ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি গাইছে।
একদা চার্লস শোভরাজ ছিল মার্কামারা ক্রিমিনাল। মহিলা ধনকুবেরদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে খুন করে লুঠপাট চালাত। আর আধুনিক ‘শোভরাজ’রা কার্যত রাষ্ট্রের মদতে লুঠতরাজ চালাচ্ছে।
ঠগ শিল্পপতিদের রক্ষাকবচ দেওয়ার কাজেও মোদি সরকার সিদ্ধহস্ত। ক’দিন আগে ভারতীয় সেনা যখন বীরবিক্রমে পাকিস্তানকে শায়েস্তা করছে তখন কোনও অজ্ঞাত কারণে সেই যুদ্ধে লাগাম টানলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখলের ব্লু প্রিন্টে জল ঢেলে এভাবে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া এবং দেশবাসীকে হতাশ করার পিছনেও মোদির আদানি যোগ খুঁজে পাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা তৃতীয় পক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করল কেন তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন। তাহলে কি আমেরিকায় ওয়ারেন্ট জারি হওয়া আদানিকে আড়াল করতে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতিস্বীকার করল কেন্দ্র? মুখে যতই মারিতং জগতং করুক না কেন? এই অস্বস্তি কিছুতেই কাটাতে পারছে না দিল্লি।

আরও পড়ুন-সরকারি ২ স্কুলে কাজ না করেই খরচ কয়েক লাখ!

Latest article