গত কয়েকদিনের খবর। আমাদের সবার চোখে হয়ত পড়েছে, কিন্তু গুরুত্ব বুঝে গভীরে অন্বেষণ হয়ত সম্ভব হয়নি।
প্রথম খবরটি পশ্চিমবঙ্গের অগ্রগতি ও সাফল্যের সুসমাচার। সাধারণ মানুষের খাদ্যের মাধ্যমে পুষ্টি গ্রহণের নিরিখে অনেক ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার চালিত রাজ্যের তুলনায় এগিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গ। জাতীয় পর্যায়ে পুষ্টি সংক্রান্ত নমুনা সমীক্ষার প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে এই তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অর্গানাইজেশান (এনএসএসও) ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দুটি পর্যায়ে দেশ জুড়ে এই সমীক্ষা চালিয়েছিল। তার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ ও শহর এলাকায় মাথাপিছু দৈনিক পুষ্টি গ্রহণের মাত্রা ছিল যথাক্রমে ২৩৬২ ও ২২৮৪ কিলো ক্যালোরি। উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে এটা যথাক্রমে ২১১৮ ও ২০৮৪। মধ্যপ্রদেশে তা ২১৪১ ও ২১০৭। মহারাষ্ট্রে এটা ২১১৯ ও ২১৭৯। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ ও শহুরে এলাকায় মাথপিছু দৈনিক পুষ্টি গ্রহণ ছিল যথাক্রমে ২২৭৮ ও ২১৯৯।
আরও পড়ুন-তৃণমূলের পথেই প্রতিবাদ বিরোধীদের
গত বছরেও বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশ-সহ ওই ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলি পুষ্টি গ্রহণের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের থেকে পিছিয়ে ছিল। খাদ্যের মাধ্যমে পুষ্টি পাওয়ার বিষয়টি মানুষের আর্থিক অবস্থার উপর অনেকটাই নির্ভর করে। তাই এই পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গে মানুষের তুলনামূলকভাবে উন্নত আর্থিক অবস্থার ইঙ্গিত করছে বলে মনে করা হচ্ছে। সর্বভারতীয় গড় পুষ্টি গ্রহণের মাত্রার থেকে পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে আছে। তবে বিভিন্ন রাজ্যের তালিকা থেকে এই ক্ষেত্রে সবথেকে এগিয়ে আছে হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ছোট রাজ্য সিকিম। ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে সিকিমে গ্রামীণ ও শহুরে এলাকায় মাথাপিছু দৈনিক পুষ্টি গ্রহণ ছিল যথাক্রমে ২৫৪৩ ও ২৯১৮ কিলো ক্যালোরি। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে তা আরও বেড়ে ৩ হাজার কিলো ক্যালোরি অতিক্রম করেছে। সিকিম ছাড়া কোনও রাজ্য ৩ হাজার কিলো ক্যালোরি ছুঁতে পারেনি। খাদ্যে মাথাপিছু প্রোটিন গ্রহণের নিরিখে বিজেপি-শাসিত বড় রাজ্যগুলির থেকে এগিয়ে আছে বাংলা। এ-রাজ্যে ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে মাথাপিছু দৈনিক প্রোটিন গ্রহণ গ্রামীণ ও শহুরে এলাকায় ছিল যথাক্রমে ৬৫.১ ও ৬৭.১ গ্রাম। জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত ও মহারাষ্ট্র এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের থেকে পিছিয়ে ছিল।
দ্বিতীয়টি ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি জাগুয়ার বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনা। জাগুয়ার হল একটি দ্বি-ইঞ্জিনযুক্ত যুদ্ধবিমান। ভারতীয় বায়ুসেনা অনেক দিন ধরেই এই বিমান ব্যবহার করছে। প্রয়োজন অনুসারে জাগুয়ার বিমানের সংস্কারও করা হয়। এখন ভারতীয় সেনার ভাণ্ডারে প্রায় ১২০টি জাগুয়ার যুদ্ধবিমান রয়েছে।
গতকাল অর্থাৎ বুধবার রাজস্থানের চুরু জেলার রতনগড় শহরের কাছে ভানুদা গ্রামের একটি মাঠের উপর জাগুয়ার যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ে। এই নিয়ে চলতি বছরেই জাগুয়ার যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ার তৃতীয় ঘটনা ঘটল। গত এপ্রিলে গুজরাতের জামনগর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে সুয়ারদার গ্রামের মাঠে ভেঙে পড়েছিল দুই আসনবিশিষ্ট একটি জাগুয়ার যুদ্ধবিমান। ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল বিমানের পাইলট সিদ্ধার্থ যাদবের। তার আগে হরিয়ানার পঞ্চকুলায় ভেঙে পড়েছিল জাগুয়ার যুদ্ধবিমান।
মোদি সরকার প্রতিরক্ষার বিষয়ে কতটা উদাসীন, এই ঘটনাবলি তারই প্রমাণ।
তৃতীয় ঘটনাটিও বুধবারের। ডবল ইঞ্জিন চালিত গুজরাটের। ফের সেতু ভেঙে পড়েছে সে রাজ্যে। বডোদরায় মহিসাগর নদীর উপর ভেঙে পড়ে গম্ভীরা সেতু। সেই সময়ে সেতুর উপরে থাকা অন্তত চারটি গাড়ি নদীতে পড়ে যায়। কমপক্ষে ১০ জন নিহত। আরও বেশি সংখ্যক লোক আহত। মোরবীকাণ্ডের ৩ বছর পরে গুজরাতে আবার একটি সেতু বিপর্যয়। এ বার ঘটনাস্থল বডোদরা।
এই মৃত্যু জীবনহানির জন্য দায়ী আর কেউ নয়, গুজরাতের প্রশাসন। ভূপেন্দ্র পটেলের সরকার।
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নিজে জানিয়েছেন প্রশাসনের সক্রিয়তার কথা। কিন্তু প্রশাসন তো সক্রিয় হয়েছে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর। তার আগে?
গুজরাতের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বডোদরার কালেক্টরের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উদ্ধারকাজে যাতে কোনও খামতি না-থাকে সেজন্য তৎপর বডোদরা পুরসভার দমকলবাহিনী। ডুবুরি নামিয়ে আহতদের খোঁজ চলছে। কাজ করছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। কিন্তু স্থানীয়দের বক্তব্য, সেতু রক্ষণাবেক্ষণে খামতি ছিল প্রশাসনের। সেতুর দেখভাল ঠিকমতো হলে এই দিন দেখতে হত না।
আরও পড়ুন-তৃণমূল নেত্রীর শ্লীলতাহানি, ধৃত ভিলেজ পুলিশ-সহ চার
মধ্য গুজরাতের সঙ্গে সৌরাষ্ট্রের যোগাযোগের অন্যতম ভরসা গম্ভীরা সেতু। তা ছাড়া, আনন্দ, বডোদরা, ভরুচ, অঙ্কলেশ্বরের স্থানীয় লোকজন দৈনন্দিন চলাচলের জন্য এই সেতু ব্যবহার করতেন। প্রতি দিন প্রচুর গাড়ি চলাচল করত। তার মধ্যে ভারী পণ্যবাহী লরি যেমন থাকত, তেমনই ছিল ছোট-বড় গাড়ি। নিত্যদিন যানজট লেগে থাকত। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া হয়নি। এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘‘গম্ভীরা সেতু দিয়ে যাতাযাত দিন দিন ভয়ের হয়ে উঠছিল। যানজট তো লেগেই থাকত। এখন ওই সেতু ‘সুইসাইড পয়েন্ট’! নিত্যদিন দুর্ঘটনা হয়। সেতুর অবস্থা নড়বড়ে। এ নিয়ে বার বার প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেননি কেউ।’’
ঘটনাটা যদি বাংলায় ঘটত, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্ত, মানুষের সুবিধা অসুবিধার প্রতি উদাসীন একটি সরকার, এই অভিযোগ তুলে রামের দল বামকে পাশে নিয়ে রে রে করে নেমে পড়ত। আর এখন?
পোস্তা সেতু ভাঙল বলে দিদির প্রতি অভিযোগ করো
আর তোমরা যে সব গেরুয়া খোকা ব্রিজ ভেঙে রোজ দু টুকরো কর, তার বেলা!