স্ট্রোক, হৃদরোগ ও ডায়াবিটিসের মতো গুরুতর অসংক্রামক রোগের ওষুধের খাতে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (national health mission) (এনএইচএম) কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ হয়ে আছে দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে। সেই কারণে রাজ্যে এই সব ওষুধ কেনা নিয়ে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে স্বাস্থ্য দফতর। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, একাধিক ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, বকেয়া মেটানো না হলে এ মাস থেকেই ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় কেন্দ্রের উপর নির্ভরতা কমিয়ে এবার বিশ্বব্যাঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে রাজ্য সরকার। ‘উন্নত স্বাস্থ্য’ নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু হচ্ছে রাজ্যে, যার ৭০ শতাংশ খরচ অর্থাৎ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বহন করবে বিশ্বব্যাঙ্ক। বাকি ৩০ শতাংশ দেবে রাজ্য সরকার।
রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে কেন্দ্র কিছু সামান্য অর্থ দিলেও, একাধিকবার অনুরোধ সত্ত্বেও তারপর আর কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে রাজ্যের হাতে বিকল্প রাস্তা ছিল না বলেই এই পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন- নিজস্ব আয়ের ৫০% জনস্বার্থে ব্যয়, পঞ্চায়েতকে বার্তা রাজ্যের
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, একাধিক জেলার রিজার্ভ স্টোর ও মেডিক্যাল কলেজে বিপুল পরিমাণ বকেয়া রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থাগুলি স্বাস্থ্য দফতরকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, অবিলম্বে বকেয়া না মেটালে তারা স্ট্রোক, হৃদরোগ ও ডায়াবিটিসের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করবে।
উল্লেখ্য, এই সব রোগের ওষুধের খরচ কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ’ বা অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন (national health mission) থেকেই দেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রের অনিয়মিত বরাদ্দ ও দীর্ঘ সময় ধরে অর্থ আটকে রাখার ফলে ২০২৩ থেকে ২০২৫-এর মধ্যে ওষুধ কেনার বিপুল খরচ রাজ্যের ঘাড়ে এসে পড়েছে।
জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর ৬৫ শতাংশই এই অসংক্রামক রোগগুলির জন্য হয়। প্রতি বছর প্রায় ৫৫ লক্ষ মানুষ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণে মারা যান। এসব রোগের চিকিৎসায় সাধারণ মানুষের ব্যয়ও সর্বাধিক। ফলে সরকারি হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হলে এক বিরাট জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।