প্রতিবেদন : মাতৃভাষা বাংলা হলেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, স্পষ্ট জানিয়েছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তাঁর সেই বক্তব্য কতটা অসাংবিধানিক ও অন্যায় তা প্রমাণ করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিপাকে পড়ে এবার নিজের বক্তব্যের সাফাই দিতে আসরে নেমেছেন হিমন্ত। তাঁর পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশ্ন, অসমের নতুন এনআরসি তালিকায় ১২ লক্ষ কেন হিন্দু বাঙালি? বিজেপির বাংলা ও বাঙালিবিদ্বেষে অসমের একটা বড় ভোটব্যাঙ্ক হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বুঝতে সারবত্তাহীন সাফাই গেয়েছেন হিমন্ত। তাঁর সেই সাফাই যে আর একটা জুমলা, তা প্রমাণিত অসমের নতুন এনআরসি তালিকায়। সেখানে যে ১৯ লক্ষ মানুষকে বাদ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালি। কেন ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালি এনআরসি তালিকায়, প্রশ্ন তৃণমূলের। অসমের ডিটেনশন ক্যাম্পে মৃত হিন্দু বাঙালির সংখ্যা নিয়েও তোলা হয়েছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন-গেরুয়া ত্রিপুরায় স্মার্ট মিটারের নামে প্রহসন, এক মাসে বিল বাড়ল ৬১ হাজার টাকা
বাংলা-বিরোধিতা হিমন্তের বরাবরের স্বভাব। সম্প্রতি যেভাবে বিজেপি রাজ্যগুলিতে বাংলা বিরোধিতায় বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার ও পুশব্যাকের রাজনীতি শুরু হয়েছে তার থেকে এককাঠি এগিয়ে অসম। হিমন্ত বিশ্বশর্মা প্রকাশ্যে দাবি করেন, জনগণনার সময় ফর্মে মাতৃভাষার জায়গায় বাংলা লিখলেই বুঝতে হবে তারা বিদেশি। তাঁর মতো স্পষ্ট করে বাঙালিদের বিদেশি বা বাংলাদেশি আর কেউ বলেননি। বিপাকে পড়ে এখন বক্তব্য বিকৃতির সাফাই গাইছেন তিনি। আদ্যন্ত বাংলা-বিরোধী অসমের মুখ্যমন্ত্রী বাংলার হিন্দুদের যেভাবে ফরেনার্স ট্রাইবুনালের চিঠি পাঠিয়েছেন বা এনআরসির চিঠি ধরিয়েছেন, তার কোনও উত্তর দিতে পারেননি হিমন্ত। বাঙালিদের রোষের হাত থেকে বাঁচতে হিমন্তর ব্যর্থ প্রয়াসকে তীব্র কটাক্ষ করে তৃণমূল আইটি সেল ও সোশ্যাল মিডিয়া শাখার সভাপতি দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, হিমন্ত বিশ্বশর্মা দাবি করছেন তিনি বেআইনি বাংলাদেশিদের তাড়ানোর কাজ করছেন। তবে অসমে যে ফাইনাল এনআরসি তালিকা তৈরি হয়েছে তাতে যে ১৯.৬ লক্ষ মানুষ বাদ পড়েছেন তার মধ্যে ১২ লক্ষ বাঙালি হিন্দু কেন? এক্ষেত্রে কী তাঁদের সমস্যা, না ভাষা সমস্যাতেই তাঁরা বাদ? আপনি দাবি করছেন আপনার ক্রুসেড বাঙালিদের বিরুদ্ধে নয়। তবে অসমের ডিটেনশন সেন্টারে যে মৃত্যু হয়েছে তাতে প্রতি ৩০ জনে ৪ জন বাঙালি কেন মারা গিয়েছেন। আপনার ট্র্যাক রেকর্ডই বলছে আপনার কাছে একটি মাপকাঠি রয়েছে, তা হল বাঙালি। এর সঙ্গে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্ক নেই। এখানে শুধুই একটি ভাষা, একটি জাতি ও একটি সংস্কৃতির প্রতি অস্বাভাবিক ঘৃণা রয়েছে আপনার।