প্রতিবেদন: ফের শিক্ষায় গেরুয়াকরণের চেনা ছক। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি )-(NCERT) এর অষ্টম শ্রেণির নতুন সমাজবিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তকে বিজেপির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী বদল আনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দিল্লির সুলতানি ও মুঘল আমলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পরিকল্পিতভাবে সেই সময়কে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার সময়কাল হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। এই নতুন বইয়ে বাবরকে জনগণের হত্যাকারী এক নৃশংস ও নির্মম বিজেতা হিসাবে দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি আকবরের শাসনকালকে নিষ্ঠুরতা ও সহনশীলতার মিশ্রণ এবং আওরঙ্গজেবকে মন্দির ও গুরুদ্বার ধ্বংসকারী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। নতুন এই পাঠ্যবই ও ইতিহাসের ব্যাখ্যা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
আরও পড়ুন-জল বাড়ছে নদীতে, সতর্ক ঘাটাল মহকুমা প্রশাসন
এনসিইআরটি জানিয়েছে যে, এই বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করার কারণ ইতিহাসের কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ের উপর একটি নোটে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বইয়ের একটি অধ্যায়ে সতর্কতামূলক মন্তব্যও রয়েছে যে, অতীতের ঘটনার জন্য আজ কাউকে দায়ী করা উচিত নয়। অষ্টম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান বইয়ের প্রথম অংশ — ‘সমাজ অন্বেষণ : ভারত ও তার বাইরে’— চলতি শিক্ষাবর্ষের জন্য এই সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে। এটিই প্রথম নতুন এনসিইআরটি সংস্করণ যা শিক্ষার্থীদের দিল্লির সুলতানি ও মুঘল আমলের সঙ্গে পরিচয় করাবে। তথ্য অনুযায়ী, এর আগে এই সময়কাল সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ানো হত। তবে, এনসিইআরটি জানিয়েছে যে, ভারতীয় ইতিহাসের যে অংশ দিল্লি সুলতানি, মুঘল এবং মারাঠাদের অন্তর্ভুক্ত করবে, তা এখন নতুন সিলেবাসে শুধুমাত্র অষ্টম শ্রেণিতে পড়ানো হবে। নতুন বইয়ের ভারতীয় ইতিহাস সম্পর্কিত অধ্যায়ে দিল্লি সুলতানির উত্থান ও পতন, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, বিজয়নগর সাম্রাজ্য, মুঘল ও তাদের প্রতিরোধ এবং শিখদের উত্থান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অধ্যায়টিতে সুলতানি আমলকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামরিক অভিযানের যুগ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে গ্রাম ও শহর লুণ্ঠিত হয়েছে এবং মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। সুলতানি ও মুঘল আমলের উপর লিখিত অংশগুলিতে মন্দিরগুলিতে আক্রমণ এবং কিছু শাসকের নৃশংসতার উপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। এনসিইআরটি জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০ এবং স্কুল শিক্ষার জন্য জাতীয় পাঠ্যক্রম কাঠামো-২০২৩ অনুযায়ী নতুন স্কুল পাঠ্যপুস্তক তৈরি করছে। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য নতুন বই আগে প্রকাশিত হয়েছে; পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখন প্রকাশ করা হচ্ছে। আর সেই বইতেই ইতিহাসের ব্যাখ্যায় বর্তমান শাসকের মনোভাবের ইঙ্গিত স্পষ্ট।