আসছেন, আসুন কিন্তু উত্তরগুলো দিয়ে যাবেন

ডেইলি প্যাসেঞ্জারি শুরু হয়ে গেল। ভোটের আগে ফি-বারের মতো দিল্লি-বাংলা নিত্য-যাতায়াত। বিমানযোগে। সেই শুভ লগ্নে কতিপয় জিজ্ঞাসা ‘ছাপান্ন ইঞ্চি’ ছাতির পুরুষকে। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থে এই সপ্রশ্ন দাবি তুলেছেন দেবাশিস পাঠক

Must read

মোদিবাবু (Narendra Modi) বঙ্গে অবতরণ করবেন আজ।
দিল্লি-বাংলা ডেলি প্যাসেঞ্জারি এ-যাত্রায় শুরু হয়ে গেল।
বাংলা কারোকে ফেরায় না। বাংলা অতিথি বৎসল। বাঙালি কারোকে অনর্থক আঘাত করে না। অসৌজন্য বাংলার স্বভাব-চিহ্ন নয়।
কিন্তু এরকম ডেলি প্যাসেঞ্জারি এর আগে একাধিক বার নিষ্ফলা প্রমাণিত হয়েছে।
আকাশে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান বলছে, এবারও তেমনটাই হতে চলেছে। অবশ্যম্ভাবী আগামী। অনিবার্য ফলাফল।
সেটা অন্য কথা। ভিন্ন প্রসঙ্গ।
এখন যেটা জানতে চাইছি, সেটা বাঙালির বাঁচা-মরার প্রশ্ন।
এখন যা জানতে চাইছি, সেটা সরাসরি বাঙালির অস্মিতা রক্ষার প্রশ্ন।
এখন যা যা জিজ্ঞেস করছি, সেসব বাংলা ও বাঙালির আজকের প্রশ্ন, আগামীর জন্য।
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বহর ক্রমেই বাড়ছে বাংলায়। ইতিমধ্যে বকেয়া ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা চেয়ে বারবার দরবার করলেও, ‘বিরোধী’ বাংলাকে ‘ল্যাজে খেলাচ্ছে’ দিল্লি। উল্টে একের পর এক অজুহাত খাড়া করে বন্ধ করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় অনুদান।
এগুলো নতুন কোনও কথা নয়। রাজভবনবাসী আপনার দালাল এটা আপনাকে জানাননি। আপনার মন্ত্রিসভার হাফপ্যান্ট মন্ত্রীকে বাংলার সাধারণ মানুষ সরাসরি এসব জিজ্ঞেস করেছিল, জানতে চেয়েছিল। উত্তর পায়নি, উল্টে অপমানিত হয়েছে।
তাই আপনাকেই জিজ্ঞেস করছি, কেন এত দিন ধরে বাংলার গরিবগুর্বো মানুষগুলোর ন্যায্য বকেয়া আটকে রেখেছেন? বাংলাকে ভাতে মারবেন বলে?
আমাদের মুর্শিদাবাদ জেলার বহু শ্রমিক দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করেন। এখানকার বহু নির্মাণ শ্রমিকের হাতের কাজ শিল্পীদের মতো। ভারতবর্ষের এমন অনেক স্মৃতিসৌধ আছে যা আমাদের এখানকার শিল্পীদের নিপুণ হাতের দক্ষতায় তৈরি হয়েছে। অথচ আমাদের শিল্পীরা আজ বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশি তকমা পাচ্ছে। নির্মম অত্যাচার করা হচ্ছে। কেন মোদিজি, কেন?

আরও পড়ুন-বাংলাভাষীদের হেনস্থা-ডিপোর্ট মানব না, হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর

ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলা কি অপরাধ? যদি তা না হয়, তবে গুরুগ্রামে বাংলা বলার ‘অপরাধে’ কেন হেনস্থার মুখে বাঙালি? কোচবিহার-১ ব্লকের জিরানপুরের বড়বালাসি গ্রামের বাসিন্দা সিরোজ আলম মিয়াঁ। বছর ৩৮-এর সিরোজ পেটের টানে গিয়েছিলেন গুরুগ্রাম। হোটেলে রান্নার কাজের পাশাপাশি একটি জিমেও কাজ করেন তিনি। রবিবার বিকেলে কাজ সেরে ঘরে ফেরার পথে গুরুগ্রামের সেক্টর-৫৫ এলাকা থেকে হরিয়ানা পুলিস তাঁকে বাংলাদেশি সন্দেহে নিয়ে যায়। পরিবারের অভিযোগ, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলাতেই হেনস্থার শিকার হয়েছেন সিরোজ। তাঁর পরিচয়পত্র যাচাই করে, মুচলেকা লিখিয়ে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেয় পুলিশ। কেন মোদিজি, কেন?
ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে সম্প্রতি বাঙালিদের নিশানায় বিঁধে ফেলার বিস্ময়কর কর্মসূচি চলছে। বাংলায় কথা বললেই সেই ব্যক্তিকে বাংলাদেশি বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে এবং সঙ্গে চলছে চরম হেনস্থা। কোথাও আটক, কখনও গ্রেফতার, কখনও পুশব্যাক। বাড়ির জল-বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ার মতো অভিযোগও সামনে এসেছে। কেন মোদিজি, কেন?
নীতি আয়োগের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গের বার্ষিক বেকারত্বের হার ছিল মাত্র ২.২ শতাংশ। এই অনুপাত দেশের গড় বেকারত্ব ৩.২ শতাংশের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম। সেই রাগেই কি?
বাংলায় সাক্ষরতার হার ২০১১ সালের তথ্য অনুসারে ৭৬.৩ শতাংশ। সেখানে দেশের সাক্ষরতার হার ৭৩ শতাংশ। দশম ও দ্বাদশ শ্রেণিতে জাতীয় গড়ের তুলনায় রাজ্যে পাশের হার বেশি। পাশাপাশি স্কুলছুটের হারও কম। আপনাদের বঞ্চনা সত্ত্বেও। সেই জন্যই কি এত রাগ আপনাদের? বলুন মোদিজি, জবাব দিন।
২০২০ সালের তথ্য অনুসারে রাজ্যের বাসিন্দাদের আয়ুষ্কাল ৭২.৩ বছর, যা জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশি। প্রতি হাজার পুরুষে ৯৭৩ শিশুকন্যা জন্মায় বাংলায়। এক্ষেত্রে দেশের কন্যাসন্তান জন্মানোর সংখ্যা ৮৮৯। শিশুমৃত্যুর হার ২০২০ সালের হিসেবে প্রতি হাজারে ১৯। সেজন্যই কি এত রাগ মোদিজি, আপনাদের?
নীতি আয়োগ আনুষ্ঠানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক সূচকগুলিতে, বিশেষ করে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, পশ্চিমবঙ্গের দৃঢ় পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। কেন্দ্রে বসে আপনাদের এত বঞ্চনা, রাজ্যের মাটিতে আপনাদের এত বাঁদরামি, গুচ্ছ-গুচ্ছ অপপ্রচার, বস্তা-বস্তা মিথ্যে, কোনও কিছুই কাজে এল না। তাই বুঝি এত গায়ের জ্বালা আপনাদের, মোদিজি (Narendra Modi)?
আর অসমে আপনাদের দালাল হেমন্ত বিশ্বশর্মা! তিনি তো ‘বঙ্গাল খেদা’ কর্মসূচির পুনরুত্থানবাদী। তাঁর তো একটাই টার্গেট, উপড়ে ফেলো বাঙালিকে। মৌলিক অধিকার অসমবাসী বাঙালির জন্য নয়। পশ্চিমবঙ্গ ১১টি ভাষাকে রাজ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে। অসম বাংলা ভাষাকে দেয়নি। কেন? কেন এই নিরাপত্তাহীনতা? মেধায় বাঙালি এগিয়ে বলে? রাজনীতিতে বাঙালির কাছে বিভেদের ফর্মুলা খাটে না বলে? সেই কারণে একটা রাজ্যকে ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্র কষতে হবে? ধুলোয় মিশিয়ে দিতে হবে জাত্যভিমান? পদে পদে বোঝানো হবে যে, এই দেশে আমরা থার্ড গ্রেডেড নাগরিক? নাকি নাগরিকই নই? এই অধিকার একটা সাম্প্রদায়িক দলকে কে দিয়েছে?
বাপের বাড়ি বাংলায় বলে আরতিকে বরপেটায় স্বামীর ঘর ছেড়ে আসতে হল কেন? পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে না জানিয়ে দিল্লি বা মহারাষ্ট্র পুলিস কেন রাতবিরেতে বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে কোনও বাঙালিকে পার করে দিচ্ছে? সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে দিন কয়েক আগেই শুনিয়ে দিয়েছে, নাগরিকত্ব স্থির করাটা আপনাদের কাজ নয়। ওটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেখবে। কিন্তু অমিত শাহের মন্ত্রক সেটা পারছে না কেন?
মোদিজি (Narendra Modi), আপনার ইতিহাস-জ্ঞান নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। তাই মনে করিয়ে দিচ্ছি, এই দেশের স্বাধীনতায় বাঙালির যা অবদান, তার একচুলও এই ডবল ইঞ্জিন শাসিত কোনও রাজ্যের নেই। দেশ কাকে বলে আদৌ বোঝে না এই রাজ্যগুলো। সেটা আমরা জানি। আপনাদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ নামে কোনও রাজ্য ভারতের মানচিত্রে নেই। আছে শুধু সীমান্তের ওপারের একটা দেশ—বাংলাদেশ।
বাংলায় যারা কথা বলে, তারাই বাংলাদেশি। কাঁটাতার পেরিয়ে তারা এদেশে ঢুকেছে। ভোটার কার্ড, আধার নম্বর জোগাড় করেছে। তারপর সেই ভুয়ো পরিচয়পত্র হাতে নিয়ে সারা ভারতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই তো!
তবে তৈরি হন, আবারও বাংলা বিজেপিকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করবে। যেমন এর আগে বেশ কয়েকবার করেছে।
সুতরাং, যাওয়ার আগে উত্তরগুলো দিয়ে যাবেন, প্লিজ।

Latest article