মা

ভয়ের জাঁকজমক নিয়ে মুক্তি পেয়েছে পরিচালক বিশাল ফুরিয়ার মাইথোলজিক্যাল হরর ছবি ‘মা’। অজয় দেবগণের শয়তান বিশ্বের দ্বিতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘মা’-এর মুখ্যভূমিকায় রয়েছেন কাজল। পিতৃশক্তির পর এবার মাতৃশক্তির জয়জয়কার। লিখলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

লড়াকু বাবার চেয়ে লড়াকু মা (Maa) সবসময়ই একধাপ এগিয়ে থাকে। মায়েরা আগেই সমাজের এবং মানুষের সিমপ্যাথি কুড়িয়ে নেয়। যে কোনও পরিস্থিতিতে সন্তানের সুরক্ষায় সে মরিয়া হয়। যে কোনও ভয়কে জয় করে কখনও কালী, কখন দুর্গা হয়ে ওঠে। দশভুজার আশীর্বাদপুষ্ট এই দেশ মাতৃশক্তির ছত্রছায়ায় লালিত। এখানে মায়েরাই সন্তানের জন্য শেষকথা বলেন। পরিচালক বিশাল ফুরিয়ার ছবি ‘মা’ দেখলে সেটাই মনে হবে। অতিপ্রাকৃত, অশুভ,অশরীরী, দৈত্য-দানব, ভূত পেত্নি, রাক্ষসের সঙ্গে সম্মুখ সমরে অকুতোভয় মা। মাঝে অসহায় সন্তান। এমন দড়ি-টানাটানির খেলায় কে জিতবে, কে হারবে কে বলতে পারে। ‘মা’-এর প্লট অনেকটাই এরকম। ভয়ঙ্কর রাক্ষসের খপ্পরে চন্দরপুর গ্রামের কিশোরীকুল। প্রথম ঋতুমতী কুমারী মেয়েরা হঠাৎ হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় সেখানে। কোথায় যায় তারা? এই গ্রামের একটা পুরনো ইতিহাস আছে। কানাঘুষোয় অনেক কথা আছে। আছে ভয়।

হরর ঘরানার ছবি এখন বলিউডের টিআরপি। ভূতের ছবির দর্শকপ্রিয়তা আজকের নয়। মহেশ ভাট আর মুকেশ ভাট জুটির ফিল্ম ‘রাজ’ বলিউডি হরর ছবিতে নতুন এক ফর্মুলা নিয়ে এসেছিল দর্শকদের সামনে। ‘রাজ’ সুপারহিট ছবি হয়েছিল সেই সময়ে। এরপর থেকেই দর্শকদের ভৌতিক ছবি দেখার আগ্রহ যেমন বেড়েছে তেমনই বেড়েছে পরিচালক, প্রযোজকদের ভূতুড়ে ছবি তৈরির উৎসাহ। কারণ ভূতেরা বলিউডকে দিয়েছে ভাল ব্যবসা। বিপাশা বসুর ‘রাজ’ থেকে শুরু করে বিদ্যা বালানের ‘ভুলভুলাইয়া’, ‘স্ত্রী’ , ‘ভুলভুলাইয়া ২’ , ‘স্ত্রী ২’, ‘শয়তান’ প্রত্যেকটা অতিপ্রাকৃত ছবিই বহু চর্চিত এবং প্রশংসিত। ভূতের ছবি খুব এনজয় করে আট থেকে আশি। বলিউডের যে হরর ফিল্মটি বক্স অফিসে সবচেয়ে ভাল ফল করেছিল তা হল ‘ভুলভুলাইয়া ২’। প্রায় ২৬৭ কোটি টাকা ঘরে তুলেছিল এই ছবি। অন্যদিকে অজয় দেবগণের ‘শয়তান’ আয় করেছিল ২১১ কোটি। ‘ভুলাইভুলাইয়া ২’ বা ‘স্ত্রী’ হরর কমেডি হলেও ‘শয়তান’ কিন্তু তা ছিল না। ‘রাজ’-এর পর অজয় দেবগণের ‘শয়তান’-এ আবার এক নতুন ধারার দেখা মিলল। ‘শয়তান’ দেখার পর অনেকদিন রেশ রয়ে গেছে দর্শকদের মনে। সেই রেশ কাটতে না কাটতে হাজির ‘শয়তান’ বিশ্বের দ্বিতীয় ছবি ‘মা’। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন কাজল। কাজলের প্রথম ভৌতিক ছবি এটা। মুক্তির পর থেকেই ছক্কা হাঁকাচ্ছে ‘মা’ (Maa)। তিন সপ্তাহেই ছবির আয় পেরিয়েছে ৩৫ কোটির ঘর।

আরও পড়ুন-বাংলায় কথা বললেই রোহিঙ্গা! ওরা বাংলাই জানে না, বিজেপির মিথ্যাচার ফাঁস মুখ্যমন্ত্রীর

অতিপ্রাকৃত, ভূত-পিশাচের সঙ্গে পুরাণের কাল্পনিক কাহিনি এবং থ্রিলের মিশেলে ছবিটি বানিয়েছেন পরিচালক বিশাল ফুরিয়া। ‘শয়তান’ ছিল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে এক বাবার লড়াইয়ের গল্প আর ‘মা’ (Maa) এক মায়ের।
গল্পটা অম্বিকার। প্রেক্ষাপট বাংলার এক গ্রাম চন্দরপুর। যেখানে অম্বিকার শ্বশুরবাড়ি। অম্বিকার স্বামী শুভঙ্কর সেই গ্রামেরই জমিদারের ছেলে। তাদের একটি মেয়ে রয়েছে। চন্দরপুরে তার পারিবারিক হাভেলির বেচাকেনা সংক্রান্ত বিষয় গ্রামের বাড়িতে আসে শুভঙ্কর। সেখানে ঘটনাচক্রে শুভঙ্করের সঙ্গে একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায় ফলে সেই ডিলটা সম্পূর্ণ করতে স্ত্রী অম্বিকা তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসে। তারা সেখানে আসার পর থেকেই নানারকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করে গ্রামে। অম্বিকা জানতে পারে এই গ্রামের মেয়েরা নাকি হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায়? কিন্তু কেন নিখোঁজ হয় কেউ জানে না। এর পিছনে কি কোনও রহস্য লুকিয়ে রয়েছে? তাদের খোঁজ কি মেলে? সমাজের অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের, অতিপ্রাকৃতের বিরুদ্ধে শুরু হয় অম্বিকার লড়াই। এই ছবিতে গল্পের মধ্যেও আরও একটা গল্প রয়েছে। সেটা কী? সবটাই বেশ রহস্যজনক। ছবিটা দেখতে বসলে তবেই দুয়ে-দুয়ে চার করা যাবে।

এই ছবির বেশিরভাগ কৃতিত্বই অম্বিকা অর্থাৎ কাজলের। তিনি তাঁর চরিত্রটিকে যতটা সম্ভব বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন। অন্য চরিত্ররা তাঁকে ঘিরেই আশপাশে ঘুরে বেড়িয়েছে। একটা গোটা ছবি জুড়ে নারীশক্তির জয়জয়কার। যুগের ভাবনা-চিন্তার সদর্থক পরিবর্তন এইভাবেই ধরা পড়ে সেলুলয়েডে। পুরুষতন্ত্রের দাপট নতিস্বীকার করেছে নারীতন্ত্রের কাছে। কাজল ছাড়া এই ছবিতে রয়েছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, রণিত রায়, রূপকথা চক্রবর্তী, খেরিন শর্মা, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, যতীন গুলাটি, সূর্যশিখা দাস প্রমুখ। প্রত্যেকেই নিজের চরিত্রে যথাযথ। এই ছবির আসল কেরামতি এর ভিজ্যুয়াল এফেক্ট, ভিএফএক্সের খেলায়। যা খুব উপভোগ্য। ছবির শেষে কলাকুশলীদের নামের পাশে তাঁদের মায়েদের নাম দেখানো হয়েছে এটা খুব অভিনব মন ছুঁয়ে যায়। ‘মা’-এর কাহিনি এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন সাইওয়ান কোয়াদ্রাস, সংলাপ অজিত, জগতাপ, আমিল কিয়ান খান, চৈতন্য, মোহন। সিনেমাটোগ্রাফির কথা বলতেই হয়। পুষ্কর সিংয়ের ক্যামেরার কাজ অসাধারণ। ছবির সুরকার রকি খান্না, শিব মালহোত্রা, হর্ষ উপাধ্যায় প্রমুখ।

Latest article