প্রতিবেদন : একুশে জুলাইয়ের শহিদতর্পণ ও সমাবেশ হবে ধর্মতলাতেই, দৃপ্ত কণ্ঠে জানিয়ে দিলেন আত্মবিশ্বাসী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে কুৎসাকারীদেরও তীব্র কটাক্ষ করেছেন তিনি। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এসে ব্যাখ্যা করেছেন একুশে জুলাইয়ের প্রেক্ষাপট ও তার রাজনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
সমাবেশ ধর্মতলাতেই : আজীবন একুশে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ এই ধর্মতলাতেই হবে। প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এসে সভামঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর কথায়, ২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠান চিরকাল চলবে। চিরকাল আপনারা আসেন, আসবেন।
একুশে আন্দোলন ও শহিদরা : শহিদ সমাবেশের গুরুত্ব ব্যাখ্যায় বলেন, যে যাই কুৎসা রটাক, আপনারা এসেছেন। সিপিএম আমলে তো কাউকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দিত না। সেই অবস্থায় আমাদের বিরাট আন্দোলন হয়েছিল। সিপিএমের কোনও ক্ষমতা ছিল না সেই আন্দোলন থামানোর। কিন্তু গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের জন্য গুলি চালিয়েছিল। ১৩ জন মারা যান। ১৫০ আহত হন। এই জায়গায় ৩৩ বছর ধরে শহিদতর্পণ করি। কারণ এখানে অনেক প্রাণ লুটিয়ে পড়েছিল, রক্ত ঝরেছিল। এই নিয়েও অনেকের আপত্তি আছে। তারা যখন প্রোগ্রাম করে, পুলিশের অনুমতি নেয় নাকি আমরা তোমাদের মতো প্যারালাল প্রোগ্রাম করি? প্রশ্ন নেত্রীর।
সচিত্র ভোটাধিকার : নেত্রী বলেন, সেসময় টি এন শেষণ একজনকে অবজারভার করে পাঠান। তারপর ভোট দেওয়ার অধিকার মেলে। এসব অনেক কাহিনি ছড়িয়ে আছে। ডবল ইঞ্জিন রাজ্যে তো ভোট দিতে দেয় না। আর সিপিএম শাসিত রাজ্যে কী হয়েছে জানি। আমাদের কর্মীরা লড়াই লড়েছিল সেদিন। তাই এই দিনটা মা-মাটি-মানুষ দিবস, গণতন্ত্রের দিবস হিসেবে পালন করি। এরপরই দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যাঁরা প্রতি বছর অনেক দূর থেকে আসেন, কষ্ট করে থাকেন, তাঁদের আমার আন্তরিক অভিনন্দন। গ্রাম-গঞ্জ থেকে লক্ষাধিক মানুষ এসেছেন। জলপ্লাবিত অনেক এলাকা। এদিনও এক লক্ষ তিরিশ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। আমাদের প্রসাশন মানুষের পাশে আছে। তারপরও প্রাণের টানে শহিদ স্মরণে এসেছেন। সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি, ঝড়-জল হলেও আসবেন, বর্ষা হলেও আসবেন। কাল বৃষ্টি হবেই। আমরাও আসি। সবার কাছে আহ্বান রইল। শান্তিপূর্ণভাবে আসবেন, ফিরবেন।
বিজেপিকে কটাক্ষ : নেত্রী বলেন, আমরা প্রোগ্রাম করে সেই জায়গাটা পরিষ্কার করে দিই। অন্য পার্টি প্রোগ্রাম করে পুকুর- ডোবা বানিয়ে চলে যায়। আমরা দায়বদ্ধ। সোমবার সাধারণ মানুষের একটু সমস্যা হবে। কষ্ট করে অনেকে আসবেন। সকলকে আমার কৃতজ্ঞতা। সকলের সহযোগিতা চাইছি।
প্রশাসনকে নির্দেশ : প্রশাসনের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমাবেশের বাস এলে ৩ কিলোমিটার দূরে দাঁড় করাবেন না। ব্রিগেডে জলে ডুবে গেছে। কাদায় গাড়ি আটকে গেলে সমস্যা হবে। শুকনো জমি দেখে নিতে হবে। এই বর্ষা চারিদিকে হচ্ছে। ফ্লোরিডায় দেখেছেন। ওরা এত উন্নয়ন করেছে তাও প্রকৃতি মায়ের কাছে কেউ পারে? এখানে ডিভিসি এত জল ছেড়েছে। সামলানো যায়! এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে সাতাশ হাজার লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে।
আরও পড়ুন-হাওড়া স্টেশনের অভ্যর্থনা মঞ্চে সমস্ত কাজকর্ম দেখভাল করছেন কৈলাস
রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় মঞ্চের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন তিনি। সেসময় উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, দেবাশিস কুমার, কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বরূপ বিশ্বাস, শ্রেয়া পাণ্ডে, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, নির্মল মাজি, প্রিয়দর্শিনী হাকিম, প্রিয়দর্শিনী ঘোষ বাওয়া, অনন্যা চক্রবর্তী, পার্থপ্রতিম রায়-সহ আরও অনেকে। বিভিন্ন ক্যাম্পে আসা নেতা-কর্মীদের অনেকেই ধর্মতলায় মঞ্চ প্রস্তুতি দেখতে এসেছিলেন। সেখানে নেত্রীকে কাছে পেয়ে শুরু হয় স্লোগান। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।