রাজধানীর নাকের ডগায় ভুয়ো দূতাবাস কীভাবে চলে রমরমিয়ে?

Must read

প্রতিবেদন: দেশে নানাবিধ ভুয়ো ব্যবসার তালিকায় এবার নতুন সংযোজন ‘দূতাবাস’ (Fake Embassy)। একটা আস্ত ভুয়ো দূতাবাস রমরমিয়ে চলছে রাজধানী দিল্লির নাকের ডগায়। দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদে এই ভুয়ো দূতাবাসের হদিশ মিলেছে।
ঘটনাস্থলে রয়েছে একটি বিলাসবহুল দোতলা ভবন, যার বাইরে কূটনৈতিক নম্বরপ্লেট যুক্ত চারটি গাড়ি এবং একটি নাম ফলক। সেখানে লেখা ‘গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়েস্টার্কটিকা’ এবং ‘এইচ ই এইচ ভি জৈন অনারারি কনসাল’। এই ভুয়ো দূতাবাসটি জাতীয় রাজধানীর অদূরে প্রতারণার এক নিখুঁত উদাহরণ হয়ে এতদিন চলছিল কীভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শেষমেশ উত্তরপ্রদেশ স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ) এই ভুয়ো দূতাবাসটি (Fake Embassy) চিহ্নিত করে করে এর মূল চক্রী হর্ষবর্ধন জৈনকে গ্রেফতার করেছে। কূটনৈতিক ছদ্মবেশ এবং প্রতারণার কৌশল নিয়ে এই ব্যক্তি অবৈধ কার্যকলাপ চালানোর জন্য গাজিয়াবাদে একটি ভাড়া বাড়িতে আস্ত কনস্যুলেট চালাচ্ছিলেন। বাড়িটিতে ভারত এবং ওয়েস্টার্কটিকার পতাকা ছিল, যা অ্যান্টার্কটিকার একটি মাইক্রোনেশন এবং যে অঞ্চলটি বিশ্বের কোনও সার্বভৌম রাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃত নয়। অবৈধ কার্যকলাপ চালাতে বিলাসবহুল সম্পত্তির বাইরে একটি অডি এবং একটি মার্সিডিজ-সহ একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি রাখা ছিল, যেগুলিতে কূটনৈতিক নম্বর প্লেট লাগানো। আরও আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল ধৃত জৈন নিজের অফিসে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির সাথে তার বিকৃত ছবিও টাঙিয়ে রাখেন। তদন্তকারীদের মতে, জৈন এই ছদ্মবেশ ব্যবহার করে প্রতারণার নেটওয়ার্ক তৈরি করতেন এবং তারপর বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে ফাঁদে ফেলতেন। তদন্তে জানা গিয়েছে, এই ভুয়ো দূতাবাসটি ২০১৭ সাল থেকে চলছিল। অর্থাৎ মোদি জমানায় রাজ্যে রাজ্যে নানা ধরনের প্রতারণা চক্র চললেও নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা সবক্ষেত্রেই প্রকট। ভুয়ো ‘দূতাবাস’-এর বাইরে দাতব্য অনুষ্ঠান আয়োজন করা হত যাতে প্রতারণার জাল বজায় থাকে। এই প্রতারণার মাধ্যমে জৈন বিদেশে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি বড় চাকরি কেলেঙ্কারি চালাচ্ছিলেন। এছাড়াও তিনি হাওয়ালার মাধ্যমে অর্থপাচার এবং কূটনৈতিক নথি জাল করার অভিযোগে অভিযুক্ত। উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্রের মধ্যে এসটিএফ কর্মকর্তারা কূটনৈতিক নম্বর প্লেটযুক্ত গাড়ি, ১২টি মাইক্রোনেশনের ‘কূটনৈতিক পাসপোর্ট’, বিদেশ মন্ত্রকের স্ট্যাম্পযুক্ত নথি, ৩৪টি দেশের স্ট্যাম্প, নগদ ৪৪ লক্ষ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, ১৮টি কূটনৈতিক নম্বর প্লেট এবং একটি বিলাসবহুল ঘড়ি সংগ্রহ উদ্ধার করেছেন।  প্রসঙ্গত যে দেশের নাম করে এই প্রতারণা, সেই ওয়েস্টার্কটিকা একটি অস্বীকৃত মাইক্রোনেশন। এই ওয়েস্টার্কটিকা ২০০১ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা ট্র্যাভিস ম্যাকহেনরি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি মাইক্রোনেশন, যা কোনও দেশ দ্বারা স্বীকৃত নয়। অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত ওয়েস্টার্কটিকার আয়তন ৬,২০,০০০ বর্গ মাইল। ম্যাকহেনরি অ্যান্টার্কটিক চুক্তি ব্যবস্থার একটি ফাঁক ব্যবহার করে নিজেকে শাসক নিযুক্ত করেন। ওয়েস্টার্কটিকা দাবি করে যে এই দেশে ২,৩৫৬ জন নাগরিক রয়েছে, তবে তাদের কেউই সেখানে বাস করে না। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক, গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়েস্টার্কটিকা একটি অলাভজনক সংস্থা হিসাবে কাজ করে যা জলবায়ু পরিবর্তন এবং অ্যান্টার্কটিকা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়। এর নিজস্ব পতাকা, মুদ্রা এবং শিরোনামও রয়েছে যা কোনও সরকার স্বীকৃতি দেয় না। ইউপি এসটিএফ ভুয়া দূতাবাসটি ফাঁস করার কয়েক দিন আগে ওয়েস্টার্কটিকার অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল তার ‘নয়াদিল্লিতে কনস্যুলেট-জেনারেল’-এর ছবি শেয়ার করেছিল। ক্যাপশনে লেখা ছিল, ব্যারন এইচ ভি জৈন দ্বারা পরিচালিত, নয়াদিল্লিতে ওয়েস্টার্কটিকার কনস্যুলেট-জেনারেল ২০১৭ সাল থেকে কার্যকর রয়েছে।

আরও পড়ুন: মেলবোর্নে স্বামীনারায়ণ মন্দিরে হামলা, দেওয়ালে বর্ণবিদ্বেষমূলক গ্রাফিতি

Latest article