বাংলা বিরোধী বিজেপিকে ছুঁড়ে ফেলুন

আবর্জনা স্তূপে জায়গা করে দিই, আসুন, ভারতীয় জঞ্জাল পার্টি বিজেপিকে। ওদের অসভ্যতা মাত্রা ছাড়িয়েছে। চরম বাঙালি বিদ্বেষী এই দলটিকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বর্জন করুন। আমার-আপনার স্বার্থে বিজেপি বয়কট হোক আমাদের অঙ্গীকার। লিখছেন অনির্বাণ সাহা

Must read

অসভ্যতা যে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
রোজই নতুন নতুন মাইল ফলক ছুঁয়ে চলেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি নিগ্রহ।
দিকে দিকে নাগিনীরা ফেলিছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস
শান্তির বঙ্গ বাণী শোনাচ্ছে ব্যর্থ পরিহাস।

আরও পড়ুন-অবশেষে চাপে পড়ে গুরুগাঁওয়ে আটক ৩০ জন শ্রমিককে মুক্তি

‘আপনি লুঙ্গি পরেন। তার মানে আপনি বাংলাদেশি।’ কিংবা ‘আপনার বাংলা উচ্চারণ কেমন যেন অন্যরকম। আপনি বেআইনিভাবে ঢুকেছেন কি?’ অথবা ‘ভোটার কার্ড দেখাচ্ছেন বটে। কিন্তু আদৌ ভোটাধিকার আছে তো? ভোট দিতে গ্রামে যান? গ্রাম প্রধানের নম্বর বলুন।’ অভিযোগ, তথ্য যাচাইয়ের নামে এই ধরনের প্রশ্নবাণে বেঙ্গলি মার্কেটের বাসিন্দাদের জর্জরিত করে ফেলছেন পুলিশকর্মীরা। দিনে অন্তত দু’বার তথ্য যাচাইয়ে আসছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় গিয়ে হেনস্তা বা মারধর তো আছেই। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘হোল্ডিং সেন্টার’। মূলত বাংলাভাষীদের আটকে রাখার জন্যই যা তৈরি হয়েছে। তথ্য যাচাইয়ের নামে দিনের পর দিন সেখানে আটকে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ। আতঙ্কিত বাঙালি তাই হরিয়ানা থেকে পালিয়ে বাঁচার উপায় খুঁজতে মরিয়া আজ।
বিজেপি-শাসিত হরিয়ানায় আর একটা রাতও কাটাতে ভরসা পাচ্ছেন না গুরগাঁও সেক্টর-৪৯-এর এই বেঙ্গলি মার্কেটের বাসিন্দারা। তাঁদের ‘অপরাধ’, প্রত্যেকেই বাংলাভাষী। বিজেপি সরকারের পুলিশ-প্রশাসনের তাই সন্দেহ, তাঁরা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী! হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে।
কারও বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরে, কারও বাড়ি নদিয়ায়, কেউ থাকেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদে। সাধারণত প্রান্তিক স্তরের এই বাঙালি পুরুষরা সাফাই কর্মের সঙ্গে যুক্ত। কেউ কেউ সংলগ্ন বিলাসবহুল অভিজাত আবাসনে গাড়ি ধোয়ামোছা করেন। মহিলাদের অধিকাংশই গৃহপরিচারিকা। মোটের উপর নিস্তরঙ্গ জীবনে আচমকাই ঝড় তুলেছে বিজেপি সরকারের পুলিশ-প্রশাসনের হেনস্তা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই আতঙ্ক হিন্দু এবং মুসলমান নির্বিশেষে ছড়িয়েছে গুরগাঁওয়ে।
এখানেই শেষ নয়। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাকে অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের নোটিশ ধরানো চলছে। বাংলায় ঢুকে বাঙালিকে দেশ ছাড়া করার পরিকল্পনা। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক।

আরও পড়ুন-নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২০টি গাড়িকে ধাক্কা কন্টেনারের, মৃত ১, আহত ১৮

কোচবিহারের মাথাভাঙা-২ নং ব্লকের লতাপোতা গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার এক বাসিন্দাকে নোটিশ পাঠিয়েছে অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। তাঁর নাম নিশিকান্ত দাস। নমঃশূদ্র পরিবারের সদস্য নিশিকান্তবাবুর নোটিশ পাওয়ার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু রাজবংশী পরিবারের লোকজন নয়, নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষকেও হেনস্তা করার জন্য অসম সরকার নোটিশ পাঠাচ্ছে। মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে ভোটে জিততে চাইছে বিজেপি।
উল্লিখিত নিশিকান্ত দাস লতাপোতা গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার কুশিয়ার বাড়ি বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা। এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে তিনি বসবাস করছেন। হঠাৎ করে গতকাল, শুক্রবার তাঁর কাছে অসম সরকারের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের নোটিশ আসে। তাতে বলা হয়েছে যে ভারতীয় নাগরিক কি না তার জন্য প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে। অসমের কামরূপ জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিতে হবে সেই প্রমাণপত্র। কেন? কীজন্য এই হয়রানি? কী কারণে এই বাঁদরামি?
নিশিকান্ত জানেন না। নোটিশ পাওয়ার পরই মাথায় বাজ পড়েছে তাঁর।
বাংলা ভাষায় কথা বললেই এখন বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। এসব করছে বিজেপি-আরএসএস। তারা একটি সম্প্রদায়ের মানুষকে টার্গেট করেছে। বাংলা যাঁদের মাতৃভাষা, তাঁরা সেই ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি হয়ে গেল, এটা অসাংবিধানিক। এটা অন্যায়।
বাংলাদেশের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি-আরএসএস নতুন সংবিধান তৈরির নামে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, এটা তারমধ্যে একটি। সংখ্যালঘু, দলিত বিদ্বেষী মনোভাব দেখাচ্ছে বিজেপি। এই চরম বাঁদরামি রুখতে বিজেপিকে বাংলা ছাড়া করতে হবে।
একুশে ফ্রেব্রুয়ারির মাহাত্ম্য সারা পৃথিবী জানে। আর সারা ভারত জানে, একুশে জুলাই দিনটির রাজনৈতিক তাৎপর্য। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষার মর্যাদা আদায়ের লড়াইয়ে নেমে একদল বঙ্গসন্তান রক্ত, এমনকী প্রাণও দিয়েছিলেন। মাতৃভাষার জন্য বিশ্ব ইতিহাসে এ এক অনন্যসাধারণ নজির। দেরিতে হলেও, ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০০ সাল থেকে তা বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশেষ মর্যাদায়। অন্যদিকে, বাংলায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এক আপসহীন লড়াইয়ে নেমেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বাংলার বুকে ‘লালসন্ত্রাস’ কায়েম হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে গণতন্ত্রের পথেই শাসনযন্ত্র কব্জা করেছিল মার্কসবাদী কমিউনিস্টরা। কিন্তু অচিরেই বেরিয়ে পড়ে তাদের ধারালো দাঁত-নখ। জনগণের ‘শাসনব্যবস্থা’ রূপান্তরিত হয়েছিল হার্মাদ বাহিনীর ‘শোষণতন্ত্রে’। সেই জগদ্দল রাষ্ট্রযন্ত্রকে সমূলে উপড়ে ফেলার জন্য ‘অগ্নিকন্যা’র ভরসা ছিল গণআন্দোলন। রকমারি ভোট জালিয়াতি রুখতে সব ভোটারের জন্য সচিত্র ভোটার কার্ড (এপিক) চালু করার দাবিতে সরব হন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা। এই দাবি আদায়ের জন্য ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই রাইটার্স অভিযানের ডাক দেন তিনি। সেই অভূতপূর্ব স্বতঃস্ফূর্ত জনজোয়ার বস্তুত দোর্দণ্ডপ্রতাপ বসুর প্রশাসনের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল। দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে সেদিন নিরীহ গণতন্ত্রকামী জনতার উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করেছিল পুলিশ। যুবদের তাজা রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল মহানগরের রাজপথ। বলা বাহুল্য, ওই ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হন। সেই থেকেই জননেত্রীর নেতৃত্বে ধর্মতলায় প্রতিটি ২১ জুলাই ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। বাংলার সব প্রান্তের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ নেত্রীর এক ডাকে সেখানে বারবার সমবেত হন। বস্তুত বার্ষিক স্বতঃস্ফূর্ত জনজোয়ারের আর এক নাম মহান একুশে। কাকতালীয় হলেও ১৯৫২ সালে পূর্ববঙ্গে ভাষা আন্দোলনের শহিদ দিবস আর চারদশক বাদে, ১৯৯৩-এ কলকাতায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শহিদ দিবস ২১ তারিখেই! প্রথমটি ফ্রেব্রুয়ারির একুশে আর দ্বিতীয়টি জুলাইয়ের একুশে।

আরও পড়ুন-ধরাশায়ী বিজেপি, খেজুরির দুই সমবায়ে বিপুল জয় তৃণমূলের

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা বিরোধীদের বিসর্জনের ডাক দিয়েছেন। ওইসঙ্গে ‘ভাষা আন্দোলন’ শুরু করারও আহ্বান জানান তিনি। বাংলা বিরোধীদের বিসর্জনের ডাক তিনি আগেও দিয়েছেন এবং রাজ্যবাসী তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছে বিপুলভাবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, স্বাধীন ভারতে নতুন করে ভাষা আন্দোলনের ডাক দিতে হল কেন?
কারণ, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষাগোষ্ঠীর জনগণ সম্পর্কে এই বিদ্বেষী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ মারাত্মক অবমাননাকর! বাংলা এবং বাঙালি সম্পর্কে ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই জিনিস বরদাস্ত করতে পারতেন না। আমরা পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ করছি, মোদি-শাহরা হিমন্তকে কোনওরূপ ভর্ৎসনা করলেন না! তাহলে কি এটাই ধরে নিতে হবে যে, এর পিছনে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের নীরব সমর্থন রয়েছে? সেই সমস্যা অবশ্য গেরুয়া নীতির। কোনও সচেতন বাঙালি এই জিনিস মেনে নেবেন না। এটুকুই শুধু জানিয়ে রাখলাম।

Latest article