বিমান সুরক্ষায় আপস? এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ

আমেদাবাদ দুর্ঘটনার পর থেকে এয়ার ইন্ডিয়া নিবিড় তদন্তের অধীনে রয়েছে। এক দশকের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসাবে যা এখনও তদন্তাধীন।

Must read

প্রতিবেদন: বিমান সুরক্ষায় আপস করে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস রেকর্ড জালিয়াতি করেছে বলে অভিযোগ উঠল। আমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার পর এই বিষয়ে নানা তথ্য সামনে আসায় বিমানযাত্রার সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একটি গোপন সরকারি মেমো অনুসারে, ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) মার্চ মাসে এয়ার ইন্ডিয়ার স্বল্পমূল্যের বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিমান চলাচল সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের নির্দেশিত সময়সীমার মধ্যে একটি এয়ারবাস এ৩২০ বিমানের ইঞ্জিন যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করতে ব্যর্থ হওয়া এবং সম্মতির রেকর্ড জাল করার অভিযোগে তিরস্কার করেছে।

আরও পড়ুন-অপারেশন সিঁদুর: আলোচনার আগে রণকৌশল ঠিক করতে বিরোধী-বৈঠক

গত মার্চ মাসে এয়ারলাইন্সকে পাঠানো গোপন সরকারি মেমোতে বলা হয়েছে, ডিজিসিএর নজরদারিতে দেখা গেছে যে একটি এয়ারবাস এ৩২০ বিমানের ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ পরিবর্তন নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন হয়নি। মেমোতে আরও বলা হয়েছে, কাজটি নির্ধারিত সীমার মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে ভুয়ো তথ্য দেখানোর জন্য এএমওএস (এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অপারেটিং সিস্টেম) রেকর্ডগুলি পরিবর্তন বা জাল করা হয়েছে। এএমওএস হল বিমান সংস্থাগুলি দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ এবং এয়ারওয়ার্দিনেস পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার। এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে যে তারা বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে ত্রুটি স্বীকার করেছে এবং ‘প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ’ বাস্তবায়ন করেছে। তারা আরও জানায়, তাদের প্রযুক্তিগত দল মনিটরিং সফটওয়্যারে রেকর্ড স্থানান্তরের কারণে যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন এর নির্ধারিত তারিখ মিস করেছিল এবং সমস্যাটি চিহ্নিত হওয়ার পরপরই তা সমাধান করা হয়েছিল। তবে ডিজিসিএর অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেনি তারা। পাশাপাশি বলেছে, মার্চ মাসের পর তারা প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে গুণমান ব্যবস্থাপককে পদ থেকে অপসারণ এবং ডেপুটি কন্টিনিউয়িং এয়ারওয়ার্দিনেস ম্যানেজারকে বরখাস্ত করা অন্তর্ভুক্ত। এই ত্রুটি প্রথমবার ২০২৪ সালের অক্টোবরে ডিজিসিএর নিরীক্ষার সময় চিহ্নিত হয়। একটি সূত্র জানিয়েছে, সিএফএম ইঞ্জিন যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও প্রশ্নবিদ্ধ বিমানটি মাত্র কয়েকটি ট্রিপ পরিচালনা করেছিল। ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর প্রাক্তন আইন বিশেষজ্ঞ বিভূতি সিং বলেন, এই ধরনের সমস্যা অবিলম্বে সমাধান করা উচিত। এটি একটি গুরুতর ভুল। যখন আপনি সমুদ্রের উপর বা সীমাবদ্ধ আকাশসীমার কাছাকাছি উড়ছেন, তখন ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন-লজ্জাও করে না এদের !

এদিকে কেন্দ্রীয় সরকার এর আগে সংসদে জানিয়েছিল যে গত বছর সুরক্ষা লঙ্ঘনের জন্য বিমান সংস্থাগুলিকে ২৩টি ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয় বা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে তিনটি ঘটনায় এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এবং আটটি ঘটনায় এয়ার ইন্ডিয়া জড়িত ছিল। এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের এয়ারবাসের ইঞ্জিন সমস্যা ১৮ মার্চ দেখা দেয় দুর্ঘটনার কয়েক মাস আগে। তবে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই বছর মূল সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াকেও তিনটি এয়ারবাস বিমানে এসকেপ-স্লাইডের মেয়াদ উত্তীর্ণ চেক নিয়ে নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য সতর্ক করেছে এবং জুনে পাইলটদের ডিউটি টাইমিং-এর গুরুতর লঙ্ঘন সম্পর্কে সতর্ক
করেছে। প্রসঙ্গত, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়ার একটি সহযোগী সংস্থা। আমেদাবাদ দুর্ঘটনার পর থেকে এয়ার ইন্ডিয়া নিবিড় তদন্তের অধীনে রয়েছে। এক দশকের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসাবে যা এখনও তদন্তাধীন।

Latest article