নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলায় দুর্গাপুজো এক অন্যমাত্রায় পৌঁছেছে। পুজো কমিটিগুলিকে সরকারি অনুদান। মহালয়া থেকে শুরু করে কার্নিভ্যাল৷ বেড়েছে পুজোর ব্যাপ্তি। উৎসবে গা ভাসাচ্ছেন মানুষ। কিন্তু বাস্তব বলছে, বাংলার দুর্গাপুজো আজ আর শুধু উৎসবে সীমাবদ্ধ নেই, তার অন্য তাৎপর্য তৈরি হয়েছে। তা হল পুজো-অর্থনীতি। যার সুফল পাচ্ছে রাজ্যের প্রান্তিক মানুষ। এক বিরাট অংশের মানুষের যেমন কর্মসংস্থান হয়েছে, রোজগার বেড়েছে, তেমনি উপকৃত হচ্ছে ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা ধরনের উদ্যোগ ও শিল্প।
আরও পড়ুন-৮ অগাস্ট থেকে স্নাতকোত্তরে ভর্তির আবেদন
সে-কথাই বলছিলেন মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেল শুভাশিস রায়। তাঁর কথায়, দুর্গাপুজোই হল বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজোকে যে ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন, তাতে আমরা অত্যন্ত খুশি। শারদোৎসবের ব্যাপ্তি বেড়েছে, এর সুফল দারুণ ভাবে পাচ্ছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। মনে রাখতে হবে এই ছোট ব্যবসায়ীরাই আমাদের রাজ্যের ব্যাকবোন। আর পুজোকে কেন্দ্র করে দারুণ ভাবে উপকৃত হচ্ছে গোটা এমএসএমই সেক্টর। পুজোর দৌলতে টেক্সটাইল থেকে শুরু করে, হাউজহোল্ড, এফএমসিজি-সহ একাধিক সেক্টর ব্যবসায়িক ভাবে লাভবান হচ্ছে। কার্যত তাঁর সুরেই গলা মেলাচ্ছেন বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্সের অন্যতম কর্তা অশোক বণিক। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, পুজোকে কেন্দ্র করে আজ গোটা রাজ্যের আর্থিক উন্নতি ঘটেছে। আলো থেকে ডেকরেটর, শিল্পী থেকে শ্রমিক, পুজোয় সকলেরই কর্মসংস্থান হচ্ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যবসা। রাজ্যে কোণে কোণে ছড়িয়ে থাকা কর্মী, শিল্পীরা এখন পুজোর দিকেই তাকিয়ে থাকেন। এটাই তাঁদের রোজগারের বড় ভরসা। উৎসবের দিন বেড়ে যাওয়ায় আমরা সবাই খুশি। এটা শুধু আর সর্বধর্ম সামাজিক মিলন নয়, এটা রাজ্যের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর পরামর্শ, রাজ্যের প্রান্তিক এলাকার ছোট বাজেটের পুজো কমিটিগুলিকে যদি আরও বেশি করে অনুদানের আওতায় নিয়ে আসা যায় তা হলে পুজো অর্থনীতির আকার আরও বাড়বে। বিএনসিসিআইও এই লক্ষ্যে রাজ্যের বেশ কিছু ছোট পুজোর পাশে দাঁড়িয়েছে। অন্য সংস্থাগুলিকেও এই কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এই প্রসঙ্গে পুজো অনুদান নিয়ে বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। দলের তরফে রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের একদম সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ, পুজো অর্থনীতির ওপর বিপুল শিল্প, বিপুল সংখ্যক মানুষের রোজগার নির্ভর করে। ব্রিটিশ কাউন্সিল তাঁদের সমীক্ষাতেও দেখিয়েছে, দেশের জিডিপিতে এই পুজো অর্থনীতির একটা বড় ভূমিকা আছে। পুজো অর্থনীতিতে বড় শিল্প, মাঝারি শিল্প, ছোট শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, অসংগঠিত শ্রমিক বিপুলভাবে উপকৃত হন। কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী থেকে ডেকরেটর, আলোক শিল্পী হয়ে ফুলচাষিরাও এর সুফল পাচ্ছেন। এই যে কেন্দ্রীভূত টাকা, চাঁদা, অনুদান, বিজ্ঞাপন থেকে আসছে তা পৌঁছে যাচ্ছে সমাজের প্রান্তিক এলাকায়। সেখানে খরচ হচ্ছে। পুজোয় যে টাকাটা সরকার দেয়, তা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে সরকারের কাছেই ফিরে আসছে, এটা বুঝতে হবে সমালোচকদের। ছোট ব্যবসায়ী থেকে শিল্পী, বিরাট সংখ্যক প্রান্তিক মানুষ পুজোয় রোজগার পাচ্ছেন। ব্যবসা বাড়ছে। উপকৃত হচ্ছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। ফলে অক্সিজেন পাচ্ছে রাজ্যের অর্থনীতি।