”জাতীয় সঙ্গীতের ভাষার অপমান” ভাষা আন্দোলনে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে এমকে স্ট্যালিন

নয়াদিল্লির লোদী কলোনি থানার পুলিশ অধিকারিক অমিত দত্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গভবনের অফিসার-ইন-চার্জকে একটি চিঠি পাঠান।

Must read

চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে দাবি দিল্লী পুলিশের। সেই বিতর্কিত চিঠি নিয়ে এবার মুখ খুললেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন (MK Stalin)। এদিন নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে তিনি এই ভাষাগত অবমাননার প্রসঙ্গ তুলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদের সমর্থন জানিয়েছেন। কিছুদিন আগেই দিল্লী পুলিশের একটি সরকারি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে “বাংলাদেশি ভাষা” আখ্যা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ এই সংস্থার বক্তব্যে দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এই নিয়ে প্রথম থেকেই সোচ্চার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এটিকে বিজেপির বাঙালি-বিরোধী রাজনীতিরই ধারাবাহিকতা বলে নিশানা করেছেন বিভিন্ন স্তরে।

আরও পড়ুন-কর্নাটকে এবার ২০টি ময়ূরের দেহ উদ্ধার

নয়াদিল্লির লোদী কলোনি থানার পুলিশ অধিকারিক অমিত দত্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গভবনের অফিসার-ইন-চার্জকে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে দিল্লি পুলিশ বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশিদের ভাষা বলে অভিহিত করেছে। চিঠি হাতে পাওয়ার পরেই ক্ষোভ প্রকাশ করে তৃণমূল কংগ্রেস শিবির। রবিবার এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘দেখুন কীভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে অভিহিত করেছে! বাংলা আমাদের মাতৃভাষা৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দের ভাষা, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় গানের ভাষা। এই ভাষা আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত, কোটিকোটি ভারতবাসীর ভাষা। সেটাই এখন ‘বাংলাদেশি ভাষা’!’

আরও পড়ুন-দিল্লিতে মর্নিংওয়াকের সময় মহিলা সাংসদের গলার চেন ছিনতাই! চিঠি শাহকে

এরপরেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, এই ধরনের বক্তব্য কোনও অনিচ্ছাকৃত ভুল নয়। এটি এমন একটি শাসনব্যবস্থার অন্ধকার মানসিকতা প্রকাশ করে যা ধারাবাহিকভাবে বৈচিত্র্যকে ক্ষুণ্ণ করে। এই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেছেন স্ট্যালিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যালিন লিখেছেন, ‘হিন্দি ছাড়া অন্যান্য ভাষাগুলির উপর যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের ভাষা এবং জনগণের জন্য ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন। উপযুক্ত জবাব না দিয়ে তিনি এই আক্রমণকে এড়িয়ে যাবেন না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে দিল্লি পুলিশ বাংলা ভাষাকে “বাংলাদেশি ভাষা” হিসেবে বর্ণনা করেছে। এটি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত যে ভাষায় লেখা হয়েছিল তারই সরাসরি অপমান। এই ধরনের বক্তব্য অনিচ্ছাকৃত ভুল নয়। এগুলো এমন একটি শাসনব্যবস্থার অন্ধকার মানসিকতা প্রকাশ্যে আনে যা ধারাবাহিকভাবে দেশের বৈচিত্র্যকে ক্ষুন্ন করে এবং পরিচয়কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।”

বাংলা ভাষার অপমানকে কেন্দ্র করে ক্রমশ রাজ্যে রাজ্যে প্রতিরোধ এবং প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এর মাঝে অমিত মালব্যের ট্যুইট আগুনে ঘি ফেলেছে। বিজেপি বিরোধী ভাষা আন্দোলন যে ক্রমশ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু স্ট্যালিন নন, দিল্লি পুলিশের বাংলা বিরোধী চিঠি নিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। তাঁর স্পষ্ট কথা, নয়া দিল্লিতে পুলিশ যা করেছে তা আসলে উত্তর পূর্বের রাজ্য ত্রিপুরা মেঘালয় ও অসমের বরাক ভ্যালির বাঙালিদেরও অসম্মান করেছে। প্রথমে বিজেপি বাঙালিদের বাংলাদেশী বলে ছাপ্পা দিয়েছে, এখন তাদের ভাষা নিয়ে অপমান করছে। বিজেপির লক্ষ্য একটাই, ভারতকে জাতি ধর্ম ও ভাষার ভিত্তিতে ভাগ করে দেওয়া। ব্রিটিশদের পথ ধরে সেই পুরোনো খেলা।

 

Latest article