দেশে এমবিবিএসে আসন বাড়লেও ভর্তি হচ্ছেন না পড়ুয়ারা!

একদিকে যদি লক্ষ্য থাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক পৌঁছে দেওয়া, তবে অন্যদিকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে একটি আসনও ফাঁকা না থেকে যায়।

Must read

প্রতিবেদন: ভারতে গত চার বছরে এমবিবিএস আসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও বহু আসন খালি থেকে যাচ্ছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে যেখানে আসনের সংখ্যা ছিল ৮৩,২৭৫, সেখানে ২০২৪-২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১৫,৯০০। অর্থাৎ একলাফে ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি। তবে এই পরিসংখ্যানের পিছনে একটি উদ্বেগজনক চিত্রও স্পষ্ট হচ্ছে। প্রতি বছর হাজার হাজার আসন খালি থাকছে, যা শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং স্বাস্থ্য-শিক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষেই ২,৮৪৯টি স্নাতক চিকিৎসা আসন খালি পড়ে রয়েছে। সংসদে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য রাষ্ট্রমন্ত্রী অনুপ্রিয়া প্যাটেল এই তথ্য জানিয়েছেন। সংসদে কেন্দ্রের পেশ করা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২১-২২ সালে ২,০১২ আসন খালি ছিল, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস স্তরে ৪,১৪৬ আসন পূরণ হয়নি, ২০২৩-২৪-এ খালি ছিল ২,৯৫৯ এবং সর্বশেষ ২০২৪–২৫ সালে ২,৮৪৯ আসন। এই বৃদ্ধি ও শূন্যতার মধ্যে রাজ্যভিত্তিক একটি পার্থক্যও লক্ষ করা গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাত—এই পাঁচ রাজ্যে ২০২০-২১ ও ২০২৪-২৫ সালে সর্বাধিক এমবিবিএস আসন বেড়েছে। উত্তরপ্রদেশে আসনের সংখ্যা ৭,৪২৮ থেকে বেড়ে ১২,৩২৫-এ পৌঁছেছে। তামিলনাড়ুতে তা ৮,০০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২,০০০।

আরও পড়ুন-এবার ১০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর হুমকি

কর্নাটকে ৯,৩৪৫ থেকে বেড়ে ১২,১৯৪, মহারাষ্ট্রে ৯,০০০ থেকে বেড়ে ১১,৮৪৪ এবং গুজরাতে ৫,৭০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭,০০০। এই আসন বৃদ্ধির পেছনে অনুন্নত জেলাগুলিতে নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত একটি প্রকল্পের আওতায় ১৫৭টি নতুন কলেজ অনুমোদন পেয়েছে, যার মধ্যে ১৩১টি ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। এর ফলে ছত্তিশগড়, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম, ত্রিপুরা, মণিপুর ও উত্তরাখণ্ডের মতো তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলিতেও আসন সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৩ সালে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি) ‘মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড রিকোয়ারমেন্ট রেগুলেশন’ চালু করে। যার মাধ্যমে নতুন কলেজগুলির পরিকাঠামো, শিক্ষকের সংখ্যা ও ক্লিনিক্যাল সুবিধার মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই বিশাল পরিকাঠামোগত সম্প্রসারণের পরও কেন প্রতি বছর এত সংখ্যক আসন পূরণ হচ্ছে না? কেন্দ্রীয় সরকার চিকিৎসক সংখ্যাবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিলেও আসন সংখ্যা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়, পড়াশোনার গুণগত মান, ভর্তি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, আর্থিক সহায়তা এবং কলেজের পরিকাঠামো উন্নয়নে একযোগে কাজ না হলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। একদিকে যদি লক্ষ্য থাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক পৌঁছে দেওয়া, তবে অন্যদিকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে একটি আসনও ফাঁকা না থেকে যায়।

Latest article