বাংলা-বিরোধী বাঙালি-বিদ্বেষী বিজেপিকে একটি ভোটও নয়

নির্যাতিতা ও খুন-হওয়া তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মাকে ফাঁদে ফেলেছে বাম-বিজেপি। তারা গোটা রাজ্যকে এবার একই কায়দায় ফাঁদে ফেলতে চাইছে। সাধু সাবধান। লিখছেন সাগ্নিক গঙ্গোপাধ্যায়

Must read

নিহত নির্যাতিতা চিকিৎসকের মৃত্যু নিয়ে গড়ে ওঠা আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে ৯ অগাস্ট কলকাতার রাজপথে একটি নাটক পথস্থ হল। পরিচালক কাঁথির মেজ খোকা, গদ্দার কুলের পোদ্দার। দুজন অতিথি শিল্পী ছিলেন এই আবেগ-চুপচুপে পালায়। নাটকে বারবার বলা হল, বিচারহীন এক বছর সব সয়েছি, আর সইব না।
কিন্তু কী সইবেন না, সেটা পরিষ্কার হল না।
নির্যাতিতা এবং মৃত তরুণী চিকিৎসকের বাবা বলেছেন, তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের অভয়া মঞ্চের কাছ থেকে ধোঁকা খেয়েছেন।
নির্যাতিতা এবং মৃত তরুণী চিকিৎসকের মা বুঝিয়ে দিয়েছেন কুভেন্দুর কথায় ভুলে ওই নাটকে অংশ নিতে গিয়ে তাঁর হাতের শঙ্খবলয় বিচূর্ণিত।
বনিবনা হচ্ছে না বলে এই রাম ও বামেদের প্রতি তাঁদের বীতরাগ প্রকাশন!
হতে পারে। হতেই পারে। হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অযৌক্তিকও কিছু নয়। যাদের ‘বোগাস’ বলছি, তাদের মালিকের সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাতে যাওয়া কেন বাপু? এমনটা আবার হয় নাকি? বিজেপির (shame on bjp) এজেন্ট সিবিআই। সেই সিবিআইকে আপনি ‘বোগাস’ বলে তোপ দাগবেন আর সেই এজেন্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে বিজেপিকে নিয়েই অন্য কোথাও নয়, নবান্নতে অভিযান করবেন! এমনটা আবার হয় নাকি?
হয় না। হওয়াটা যুক্তিপূর্ণ নয় মোটেই। আর হলে যা হয়, সেটি তো দেখাই যাচ্ছে।
প্রসঙ্গটা আনলাম স্রেফ একটা সতর্কতামূলক বার্তা দেওয়ার জন্য।
বাংলা-বিদ্বেষী বিজেপিকে আগামীতে বাঙালি ভোট দিলে এই পরিণতিই অনিবার্য।
কেন ভোট দেবেন ওই পার্টিটাকে? বিজেপি আর কত সর্বনাশ করবে? আর কত সর্বনাশ করবে? বাংলা বলে নাকি কোনও ভাষাই নেই! ছিলও না কস্মিনকালে! এই কথা যে রাজনৈতিক দল বলে, অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে, তাদের বাংলায় ভোট লড়ার কোনও নৈতিক অধিকার আছে? বাংলা ভাষা, বাঙালির অস্তিত্ব, প্রত্যেক বঙ্গবাসীর অস্মিতা নিয়ে যারা নোংরা খেলা করে, উত্তর ভারতের সংস্কৃতিতে মানুষকে জারিত করে যে দল নতুন নতুন রাজ্যে গেরুয়া চিন্তার প্রবেশ ও প্রসারে মরিয়া, তাদের বাংলার মানুষ কেন ভোট দেবেন?! এই কথা যে-রাজনৈতিক দল বলে, অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে, তাদের বাংলায় ভোট লড়ার কোনও নৈতিক অধিকার আছে? বাংলা ভাষা, বাঙালির অস্তিত্ব, প্রত্যেক বঙ্গবাসীর অস্মিতা নিয়ে যারা নোংরা খেলা করে, উত্তর ভারতের সংস্কৃতিতে মানুষকে জারিত করে যে দল নতুন নতুন রাজ্যে গেরুয়া চিন্তার প্রবেশ ও প্রসারে মরিয়া, তাদের বাংলার মানুষ কেন ভোট দেবেন?
আপনি কি মানেন বাংলা বলে কোনও ভাষাই নেই? আপনি কি চান বাংলা ভাষা, বাঙালির অস্তিত্ব, প্রত্যেক বঙ্গবাসীর অস্মিতা নিয়ে আরও নোংরা খেলা চলুক, উত্তর ভারতের সংস্কৃতিতে মানুষকে জারিত করে বিজেপি (shame on bjp) রাজ্যে গেরুয়া চিন্তার প্রবেশ ও প্রসার ঘটাক? যদি না এসব না মানেন, না চান, তবে কেন বাংলার উন্নতির জন্য বিজেপিকে ভোট দেবেন? যদি দেন, তাহলে বাংলার ভোটদাতাদের অবস্থাও ওই নির্যাতিতা নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মায়ের মতো হবে। বিশ্বাসভঙ্গের হতাশায় ভুগতে হবে। বাংলা-বিরোধী নাটকে বাঙালি হয়ে অতিথি শিল্পী হওয়ার কষ্ট ভুগতে হবে। কারণ এটা জলের মতো পরিষ্কার, বিজেপিকে এ-রাজ্যে ক্ষমতায় আনা মানে বাঙালিয়ানার অপমৃত্যু। আমাদের গর্বের উত্তরাধিকারের সর্বনাশ। আমাদের স্বতন্ত্রতার বিনাশ।
সুতরাং, বিজেপিকে একটি ভোটও নয়।
আমাদের চিরকালীন অহঙ্কার নেতাজি, চিত্তরঞ্জন, বাঘাযতীন-সহ শত শত স্বাধীনতা সংগ্রামীর দেশপ্রেম। তাঁদের আত্মত্যাগের বীরগাথাকে মুছে দিয়ে ইংরেজের পদলেহনকারী সাভারকরদের পুজো করা আম বাঙালির ধর্মে সইবে না।
দেশভাগের ক্ষত যাঁদের রক্তে সঞ্চারিত হয়ে ঢেউ তোলে না, যাঁরা হাড়ে-মজ্জায় বাংলা-বিদ্বেষী, হিন্দু ধর্ম মানে শুধু বিভাজন বোঝে, শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দের সবাইকে একসূত্রে গাঁথার সাধনাকে অস্বীকার করেন, তাঁদের একটা ভোটও নয়।
উন্নয়ন মানে দুটো সেতু, তিনটে বন্দে ভারত ট্রেন, দুটি মেট্রো প্রকল্পের সম্প্রসারণ নয়। বাঙালিকে ভিতর থেকে চেনা, তাকে উপলব্ধি করা। তার মননকে অনুভব করা। যে দলের সরকারের কাছে বাংলার সওয়া দু-লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া, গরিব ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত, তাদেরকে একটি ভোটও নয়। পাশেই দুটো ছোট ছোট রাজ্য অসম ও ত্রিপুরা। সেখানে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ। অথচ বাংলায় নানা অছিলায় সওয়া দু’লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া। এই বিজেপিকে একটা ভোটও নয়।
নাটুয়া মেজো খোকা পথে নেমেছে। ওরা চাইছে রাজ্যে যাতে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। আর ওরা সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যাতে ঘোলা জলে মাছ ধরতে পারে। হিন্দু-মুসলিম কট্টর মেরুকরণ ছাড়া গেরুয়া শাসনে কোন প্রতিশ্রুতিটা রক্ষা হয়েছে গত এক দশকে? মূল্যবৃদ্ধির জালে ফেঁসে হিমশিম গোটা দেশ। আর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলছে, দাম বাড়েনি তো, সব নিয়ন্ত্রণে! কেন ভোট দেব এই বিজেপিকে? রোজ কৃষক আত্মহত্যা করছে, আর সরকার শোনাচ্ছে রেকর্ড ফলন, দ্বিগুণ আয়ের ছেঁদো গল্প। দশ লক্ষ সরকারি পদ ফাঁকা, তার কোনও উচ্চবাচ্য সরকারের কেষ্টবিষ্টুদের গলায় নেই। নোট বাতিলকে দুয়ো দিয়ে রাজ করছে কালো টাকা। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো আমেরিকা ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোয় কৃষকেরা আরও মার খাবেন। গরিব কাজ হারাবে। এই বিজেপিকে একটা ভোটও নয়।
মোদির চমক ধমকের রাজনীতির পুঁজি শেষ হয়ে আসছে। দেশের ভবিষ্যৎ কিন্তু মোটেই সুবিধার নয় মোদিজি জানেন, বিহার ও বাংলায় একশোবার ঘুরে গেলেও বিজেপি-র জেতা দূরস্থ্। তাকে প্রতিযোগিতায় ফেরাতে পারে একমাত্র ভোটার তালিকা। তাই বশংবদ নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে নতুন তালিকা তৈরির এমন মহাযজ্ঞ। এবার ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে চলছে বিরোধীদের জব্দ করার ষড়যন্ত্র।
এটা আমাদের সকলের সতর্ক থাকার সময়।
তাই সনির্বন্ধ অনুরোধ রামরেডদের পাতা ফাঁদে পা দেবেন না।
আসুন, সকলে শপথ করি, বিজেপিকে একটা ভোটও নয়।

আরও পড়ুন-বৈঠকে অভিষেক

Latest article