নবান্ন (Nabanna) অভিযানের নামে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে গদ্দার বাহিনী। কলকাতা হাইকোর্টের তরফে সুনির্দিষ্ট ভাবে বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করে দেওয়া হয়েছিল আগেই। আদালতের নির্দেশ মেনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নেয় কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ ৷ বেছে দেওয়া হয়েছিল দুটি বিকল্প জায়গা ৷ হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী দুটি বিকল্প জায়গা দেওয়া হয় এবং সেখানেই মিটিং মিছিল কিংবা অন্যান্য কর্মসূচিগুলি পালন করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অন্যথা হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের নির্দেশিকা এড়িয়ে পার্কস্ট্রিটমুখী হয় শুভেন্দু অধিকারী। লালবাজারের তরফে জানানো হয় হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে না গিয়ে পার্ক স্ট্রিটের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেটা নিয়ে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এছাড়াও ডিসি এসএসডির নিরাপত্তারক্ষী কনস্টেবল প্রশান্ত পোদ্দারকে নির্মম ভাবে মারধর করা হয়েছে। এর ফলে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন তিনি। সেই ঘটনায় নিউ মার্কেট থানায় একটি এফআইআর হয়েছে। এফআইআর হয়েছে হকার্স ইউনিয়নের অফিস ভাঙচুর করার ঘটনার প্রেক্ষিতেও।
আরও পড়ুন-ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যে ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও খুন! ফেলা হল নর্দমায়
নির্দেশ অমান্য এবং পুলিশের এক কনস্টেবলকে মারধরের অভিযোগের ভিত্তিতে মোট পাঁচটি এফআইআর দায়ের করল লালবাজার। এখনও কাউকেই যদিও গ্রেফতার করা হয়নি। তবে তদন্ত চলছে বলে জানানো হয়েছে।
এদিন নিজেদের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে কলকাতা পুলিশের তরফে এফআইআর সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য শেয়ার করা হয়েছে। লেখা হয়েছে, ”মোট ৫টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে (৪টি নিউ মার্কেট থানায়, ১টি হেয়ার স্ট্রিট থানায়) একটি রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা/সমর্থকদের বিরুদ্ধে—
১)মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে আর.আর. অ্যাভিনিউতে না গিয়ে পার্ক স্ট্রিটের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার জন্য I
(হেয়ার স্ট্রিট থানার কেস নং ১৭৮, তারিখ ০৯.০৮.২০২৫, ধারা ২৮৫/২২৩/১৮৯(২)/৩(৫) বিএনএস)
২) অন্য রাজনৈতিক দলের “রাখি” স্টলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য।
(নিউ মার্কেট থানার মামলা নং ১৩৭, তারিখ ০৯.০৮.২০২৫, ধারা ৭৯/৩(৫) বিএনএস)
৩) এক পুলিশ কনস্টেবলকে নির্মমভাবে মারধর করে মাথায় গুরুতর আঘাত করার জন্য।
(নিউ মার্কেট থানার মামলা নং ১৩৬, তারিখ ০৯.০৮.২০২৫, ধারা ১২১(২)/১০৯(১)/৩(৫) বিএনএস)
৪) হকার্স ইউনিয়নের অফিস ভাঙচুর করার জন্য।
(নিউ মার্কেট থানার মামলা নং ১৩৫, তারিখ ০৯.০৮.২০২৫ ধারা ৩২৯ (৪)/৩২৪ (৪)/৩(৫) বিএনএস)
৫) এক সংবাদকর্মীর ক্যামেরা নষ্ট ও তাকে জোরপূর্বক আটক রাখার জন্য।
(নিউ মার্কেট থানার মামলা নং ১৩৪, তারিখ ০৯.০৮.২০২৫, ধারা ১২৬(২)/১১৫(২)/৩২৪(৪)/৩২৬(এফ )/৬২/৩০৩(২)/৩(৫) বিএনএস )
🔹 নিউ মার্কেট থানার ২টি আবেদনপত্র আদালতে পেশ করা হয়েছে—
একটি এফআইআর দায়েরের জন্য ধারা ২২৪/৩৫১(২)/৩৫২/৩৫৩(১) বিএনএস অনুযায়ী।
অন্যটি এফআইআর দায়েরের জন্য ধারা ১৮৯(২)/১৯১(২)/১৯১(৩)/১৯০/১৮৯(৫)/১৯৫/১২৯(২)/১১৫(২)/১১৮(১)/১১৮(২)/১২১(২)/১৩২/২২৩/২৮৫/৩(৫)/৩২৬(এফ )/৬১(২) বিএনএস সহ ধারা 3 পিডিপিপি Act অনুযায়ী, পুলিশের বিরুদ্ধে কটূক্তি, জনসাধারণের অসুবিধা সৃষ্টি ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগে।
📌 এখনো কোনো গ্রেফতার হয়নি।
📌 ১ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছে I
📌 তদন্ত চলছে I”
আরও পড়ুন-নৃশংস! যোগীরাজ্যে ধারের টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে খুন যুবক
আরজি কর-কাণ্ডের নির্যাতিতার মা-বাবার ডাকে শনিবার নবান্ন অভিযানের আয়োজন করা হয় আর সেই অভিযানকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে ফেলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু অনুগামী বহু বিজেপি কর্মী সেই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ আগে জানিয়ে দেয়, তারা মিছিলের অনুমতি দেয়নি। জানিয়ে দেওয়া হয়, কলকাতায় প্রতিবাদ কর্মসূচি যদি করতেই হয়, তবে সেটা রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে করা যেতে পারে। এরপরেও পুলিশি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ধর্মতলা থেকে মিছিল পার্ক স্ট্রিট হয়ে নবান্নের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। ওই মিছিলে নির্যাতিতার মা-বাবা এবং শুভেন্দুও ছিলেন। কিন্তু পার্ক স্ট্রিট মোড়েই মিছিল আটকে দিয়েছিল পুলিশ। সেখানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি এবং হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। প্রসঙ্গত, রাজ্য পুলিশের এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার আগেই জানিয়েছিলেন, “মাননীয় হাইকোর্টের তরফ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে কোনও রকমের সরকারি সম্পত্তিহানি, সম্পত্তি নষ্ট কিংবা কোনও হিংসার ঘটনা সম্পূর্ণ বেআইনি। এই অভিযান করা যেতেই পারে, তবে তা করতে হবে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে । সরকারি সম্পত্তি নষ্ট কিংবা পুলিশকে মারধর সংক্রান্ত কোনও রকমের হিংসার ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না।”